8.4.12

ইসলাম শিক্ষা: অধ্যায়-১

অধ্যায়-১ 
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের ১ নম্বর অধ্যায় থেকে নমুনা প্রশ্নোত্তর আলোচনা করব। এ ধরনের অন্য প্রশ্নত্তোরের জন্য অধ্যায়টির বিষয়বস্তু ভালোভাবে পড়বে।
# প্রশ্ন: সঠিক উত্তরটি খাতায় লেখো।
১. মানুষ কোনটি বানাতে পারে?
ক. গ্রহ-নক্ষত্র খ. জীব-জন্তু গ. চেয়ার-টেবিল ঘ. ফলমূল
উত্তর: চেয়ার-টেবিল।
২. কার ইচ্ছায় আমাদের জন্ম-মৃত্যু হয়?
ক. মানুষের খ. নবী-রাসূলের গ. আল্লাহ তাআলার ঘ. জ্ঞানী ব্যক্তির
উত্তর: আল্লাহ তাআলার।
৩. শ্বাস নেওয়ার সময় কী গ্রহণ করি?
ক. কার্বন ডাই অক্সাইড খ. পানি গ. অক্সিজেন ঘ. খাদ্য
উত্তর: অক্সিজেন।
৪. পানির অপর নাম কী?
ক. শরবত খ. জীবন গ. নদী ঘ. সাগর
উত্তর: জীবন।
৫. সারা বিশ্বের পালনকর্তা কে?
ক. মানুষ খ. বিজ্ঞানী গ. আল্লাহ তাআলা ঘ. ঈমানদার ব্যক্তি
উত্তর: আল্লাহ তাআলা।
৬. আল-আসমাউল হুসনা বলতে কী বোঝ?
ক. মানুষের গুণসমূহ খ. আকাশ
গ. জীবজন্তুর গুণসমূহ ঘ. আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামসমূহ
উত্তর: আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামসমূহ।
৭. খালিক শব্দের অর্থ কী?
ক. পালনকর্তা খ. সৃষ্টিকর্তা গ. রিজিকদাতা ঘ. দয়ালু
উত্তর: সৃষ্টিকর্তা।
৮. বাসিরুন শব্দটির অর্থ কী?
ক. আল্লাহ সর্বশ্রোতা খ. আল্লাহ সহনশীল
গ. আল্লাহ সর্বদ্রষ্টা ঘ. আল্লাহ সর্বশক্তিমান
উত্তর: আল্লাহ সর্বদ্রষ্টা।
৯. কাদিরুন শব্দের অর্থ কী?
ক. আল্লাহ সর্বদ্রষ্টা খ. আল্লাহ সর্বশ্রোতা
গ. আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা ঘ. আল্লাহ সর্বশক্তিমান
উত্তর: আল্লাহ সর্বশক্তিমান।
১০. খাতা মুন্নাবিয়্যিন কে?
ক. হজরত আবু বকর (রা.) খ. হজরত ঈসা (আ.)
গ. হজরত মুহাম্মদ (সা.) ঘ. হজরত মূসা (আ.)
উত্তর: হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
১১. নবী-রাসূলের কাছে আল্লাহতাআলার বাণী নিয়ে আসতেন কে?
ক. হজরত আদম (আ.) খ. হজরত জিবরাইল (আ.)
গ. হজরত ইব্রাহিম (আ.) ঘ. হজরত ইসরাফিল (আ.)
উত্তর: হজরত জিবরাইল (আ.)।
১২. চিরস্থায়ী সুখের স্থান কোনটি?
ক. নিজের বাড়ি খ. কবর গ. জাহান্নাম ঘ. জান্নাত
উত্তর: জান্নাত।
১৩. চিরস্থায়ী শাস্তির স্থান কোনটি?
ক. বনজঙ্গল খ. নদ-নদী গ. হাটবাজার ঘ. জাহান্নাম
উত্তর: জাহান্নাম।
প্রশ্ন: শূন্যস্থান পূরণ কর।
১। ঈমান শব্দের অর্থ—বিশ্বাস।
উত্তর: ঈমান শব্দের অর্থ দৃঢ় বিশ্বাস।
২। আকিদা শব্দের বহুবচন—।
উত্তর: আকিদা শব্দের বহুবচন আকাঈদ।
৩। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের—।
উত্তর: মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের স্রষ্টা।
৪। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে প্রথম ও প্রধান হচ্ছে—।
উত্তর: ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে প্রথম ও প্রধান হচ্ছে ঈমান।
৫। —আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পালনের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকেন।
উত্তর: ফেরেশতাগণ আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পালনের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকেন।
৬। আমাদের সবাইকে একদিন—হবে।
উত্তর: আমাদের সবাইকে একদিন মরতে হবে।
৭. মৃত্যুর পর আল্লাহ তাআলা আমাদের—জীবিত করবেন।
উত্তর: মৃত্যুর পর আল্লাহ তাআলা আমাদের পুনরায় জীবিত করবেন।
৮. হাশরের ময়দানে আমাদের—হিসাব নেওয়া হবে।
উত্তর: হাশরের ময়দান আমাদের কাজের হিসাব নেওয়া হবে।
৯. আমরা পবিত্র আল—কোরআনের-জীবন গড়ব।
উত্তর: আমরা পবিত্র আল-কোরআনের আলোকে জীবন গড়ব।
১০. আল্লাহ তাআলার অনেকগুলো—নাম আছে।
উত্তর: আল্লাহ তাআলার অনেক গুলো গুণবাচক নাম আছে।
১১. আল্লাহ তাআলা এক ও -।
উত্তর: আল্লাহ তাআলা এক ও অদ্বিতীয়।
১২. আমরা সবাই-গ্রহণ করি ও-ছেড়ে দিই।
উত্তর: আমরা সবাই প্রশ্বাস গ্রহণ করি ও নিঃশ্বাস ছেড়ে দিই।
১৩. আল্লাহ তাআলা-পছন্দ করেন না।
উত্তর: আল্লাহ তাআলা অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।
১৪. সূর্যের আলো ছাড়া-বাঁচতে পারে না।
উত্তর: সূর্যের আলো ছাড়া কোনো প্রাণীই বাঁচতে পারে না।
১৫. মহান আল্লাহ তাআলা সব-গুণের অধিকারী।
উত্তর: মহান আল্লাহ সব উত্তম গুণের অধিকারী।
১৬. মহান আল্লাহ তাআলা সব গুণের -।
উত্তর: মহান আল্লাহ তাআলা সব গুণের আধার।
১৭. আমরা বিশ্বাস করি-সবকিছু দেখেন।
উত্তর: আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ তাআলা সবকিছু দেখেন।
১৮. -আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ।
উত্তর: নবী-রাসূলগণ আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ।
১৯. পানির অপর নাম-।
উত্তর: পানির অপর নাম জীবন।
২০. জীবন রক্ষার দিক দিয়ে-ও-একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।
উত্তর: জীবন রক্ষার দিক দিয়ে মানুষ ও গাছপালা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।
২১. বিশুদ্ধ পানি পান করলে-ভালো থাকে।
উত্তর: বিশুদ্ধ পানি পান করলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
২২. পুকুরের পানিতে কোনো-আবর্জনা ফেলা যাবে না।
উত্তর: পুকুরের পানিতে কোনো ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না।
২৩. কোনো সময়-অপচয় করা যাবে না।
উত্তর: কোনো সময় পানি অপচয় করা যাবে না।
২৪. কাজ করতে-লাগে।
উত্তর: কাজ করতে শক্তি লাগে।
২৫. সূর্যের আলো ছাড়া-প্রাণীই বাঁচতে পারে না।
উত্তর: সূর্যের আলো ছাড়া কোনো প্রানীই বাঁচতে পারে না।
২৬. আলো বাতাস মাটি পানি-মহান আল্লাহ তাআলার দান।
উত্তর: আলো বাতাস মাটি পানি সবই মহান আল্লাহ তাআলার দান।
২৭. মহান আল্লাহ তাআলা সব-গুণের অধিকারী।
উত্তর: মহান আল্লাহ তাআলা সব উত্তম গুণের অধিকারী।
২৮. আল-হুসনা অর্থ -।
উত্তর: আল-হুসনা অর্থ সুন্দরতম।
২৯। সহনশীলতা-গুণ।
উত্তর: সহনশীলতা খুব ভালো গুণ।
৩০। আমরা বিশ্বাস করি-সব শোনেন।
উত্তর: আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ তাআলা সব শোনেন।
৩১। আমরা কারও-তাঁর নিন্দা করব না।
উত্তর: আমরা কারও অসাক্ষাতে তাঁর নিন্দা করব না।
৩২। মহান আল্লাহ তাআলার একটি বড় নির্দেশ হলো-পালন করা।
উত্তর: মহান আল্লাহ তাআলার একটি বড় নির্দেশ হলো রোজা পালন করা।
৩৩। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে -সূচনা হয়।
উত্তর: সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দিনের সূচনা হয়।
৩৪। এ পৃথিবীতে যার জন্ম আছে তার অবশ্যই-আছে।
উত্তর: এ পৃথিবীতে যার জন্ম আছে তার অবশ্যই মৃত্যু আছে।
৩৫। আখেরাত বা পরকালীন জীবন-জীবন।
উত্তর: আখেরাত বা পরকালীন জীবন অনন্তকালের জীবন।
৩৬। জান্নাত-জায়গা।
উত্তর: জান্নাত সুখ-শান্তির জায়গা।
৩৭। জাহান্নাম-স্থান।
উত্তর: জাহান্নাম শাস্তির স্থান।
৩৮। আমরা সব সময়-কথামতো চলব।
উত্তর: আমরা সব সময় আল্লাহতায়ালা ও নবী-রাসুলের কথামতো চলব।
৩৯। আরবি ভাষার শব্দ মিজান মানে-।
উত্তর: আরবি ভাষার শব্দ মিজান মানে পরিমাপক।
৪০। হাশর মানে-।
উত্তর: হাশর মানে সমবেত হওয়া।# রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর দাও।
প্রশ্ন: ঈমান কাকে বলে? আকাঈদ বলতে কী বোঝ? আলোচনা করো।
উত্তর: ঈমান একটি আরবি শব্দ। বাংলা ভাষায় ঈমান শব্দের অর্থ হলো দৃঢ়বিশ্বাস। ইসলামি পরিভাষায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যা কিছু নিয়ে এসেছেন সেসব বিষয়কে অন্তরে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করাকে ঈমান বলে।
আকাঈদ শব্দটি আকিদা শব্দের বহুবচন। আল্লাহ তাআলা এক, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ তাআলার সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল, আসমানি কিতাব, ফেরেশতা, আখিরাত, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট বিস্তারিত বিষয়ে দৃঢ়বিশ্বাস বা প্রত্যয়ের নাম আকিদা। একজন প্রকৃত মুসলিম তিনি, যিনি অন্তরে যে আকিদা পোষণ করেন, তা ভাষায় প্রকাশ করেন এবং কর্মে তার প্রতিফলন ঘটান।
প্রকৃত মুসলিম হওয়ার জন্য একজন মানুষের ঈমান ও আকিদা বিশুদ্ধ হওয়া অত্যন্ত জরুরি। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে প্রথম ও প্রধান হচ্ছে ঈমান। আবার বিশুদ্ধ আকিদা ছাড়া প্রকৃত মুমিন হওয়া যায় না। তাই আমরা ঈমান ও আকিদা সম্পর্কিত বিষয় বিস্তারিতভাবে পালনের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে জীবন গঠন করব।
প্রশ্ন: আল্লাহ তাআলার পরিচয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর: আল্লাহ তাআলা আমাদের স্রষ্টা। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তিনি একমাত্র হুকুমদাতা, রিজিকদাতা ও পরিত্রাণকারী। আমাদের সামনে যা কিছু আছে, আমরা যা কিছু দেখতে পাই এ সবকিছুর দিকে তাকালে মহান আল্লাহর পরিচয় পাওয়া যায়। কারণ, আমাদের চারপাশের গাছপালা, ফুল, ফল, পাখি, চোখজুড়ানো সবুজ ধানের খেত, ছোট-বড় নদ-নদী, খাল-বিলের পানি, মাছ ইত্যাদি এমনিতেই সৃষ্টি হয়নি। এগুলো সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তাআলা। শুধু তা-ই নয়, লালন-পালন করে এ সবকিছু বাঁচিয়ে রেখেছেন তিনি। তা ছাড়া আমাদের মাথার ওপরের নীল আকাশ, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, উপগ্রহ, তারকারাজি—এসবও তাঁর মহান সৃষ্টি। পশুপাখি, জীবজন্তু, সাগর, মহাসাগরসহ এই পৃথিবীর কোনো কিছুই আপনা-আপনি তৈরি হয়নি। কোনো মানুষও এগুলো তৈরি করতে পারে না। এই মহাবিশ্বের সবকিছুরই একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহ তাআলা। পবিত্র কোরআনে আছে, ‘আকাশ ও পৃথিবী এবং এ দুয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা আস-সাজদাহ: ৪) এই মহাবিশ্বে আরও অনেক কিছু আছে, যা আমরা দেখতে পাই না। সেগুলোও সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তাআলা। কাজেই মহাবিশ্বের দেখা-অদেখা, আমাদের জানা-অজানা বস্তুসমূহের সৃষ্টিরহস্য অনুধাবন করলে আল্লাহ তাআলার পরিচয় পাওয়া যায়।
আমরা আল্লাহ তাআলার সৃষ্ট সব সৃষ্টির সেরা, মানুষ। আমাদের জীবন ও মৃত্যুর মালিক তিনি। আমরা এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহ তাআলার ইবাদত করব এবং বিপদে-আপদে সবসময় আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করব।
প্রশ্ন: মানুষ কী বানাতে পারে আর কী বানাতে পারে না তার বর্ণনা দাও।
উত্তর: এই বিশ্বপ্রকৃতির সবকিছুই আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি। প্রকৃতি প্রদত্ত জিনিসপত্র ব্যবহার করে মানুষও অনেক কিছু বানাতে পেরেছে। মানুষ যা বানাতে পারে আর যা পারে না, তার একটি বর্ণনা দেওয়া হলো:
মানুষ যা বানাতে পারে: আল্লাহ তাআলার সৃষ্ট প্রকৃতির বিভিন্ন বস্তু দিয়ে মানুষ বানাতে পারে চেয়ার, টেবিল, বাড়িঘর, দালানকোঠা, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, মসজিদভবন, পাকা সড়ক, নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার, বাস, ট্রাক, ইত্যাদি। এ ছাড়াও প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও যোগ্যতাসম্পন্ন শ্রমিকশ্রেণী বানাতে পারেন ফ্যান, টেলিফোন, টেলিভিশন, কম্পিউটার, ফ্রিজ, বৈদ্যুতিক বাতি ইত্যাদি।
মানুষ যা বানাতে পারে না: নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছু বানাতে পারলেও মানুষ বানাতে পারে না গাছপালা, নদ-নদী, ফুলফল, পশু-পাখি, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত, আকাশ-বাতাস, জীব-জন্তু, সাগর, ধান, পাট প্রভৃতি। প্রকৃতির এসব বানিয়েছেন এবং বানাতে পারেন একমাত্র মহান আল্লাহ তাআলা।
কাজেই মহাকাশ ও বিশাল পৃথিবীর সবকিছুর স্রষ্টা হলেন একমাত্র আল্লাহ তাআলা।
প্রশ্ন: মুসলিম কাকে বলে? একজন মুসলিমের আচার-আচরণ কেমন? বিবরণ দাও।
উত্তর: আল্লাহ তাআলা এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো শরিক বা সমকক্ষ নেই। তিনি চিরকাল আছেন ও চিরকাল থাকবেন। যারা এসব মৌলিক বিষয় বা আকিদা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, মুখে তা স্বীকার করে এবং আল্লাহ তাআলার আদেশমতো সব কাজ করে, তাদের বলা হয় মুসলিম। যারা মুসলিম তাদের চরিত্র ও আচার-ব্যবহার হয় সুন্দর। তারা মিথ্যা কথা বলে না। কাউকে কষ্ট দেয় না। চুরি-ডাকাতি করে না। সন্ত্রাস ও রাহাজানি করে না। পিতা-মাতা ও শিক্ষকদের সম্মান করে। মহানবী (সা.)-এর দেখানো পথে চলে। তারা একমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদত বন্দেগি করে। বিপদ-আপদে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য চায়। তারা বলে: ‘ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাইন।’ অর্থাৎ, আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি, শুধু তোমার কাছেই সাহায্য চাই (সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত-৪)
প্রশ্ন: সারা বিশ্বের পালনকর্তা কে? তাঁর লালন-পালনের একটি বর্ণনা দাও।
উত্তর: সারা বিশ্বের পালনকর্তা আল্লাহ তাআলা, আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে, আমরা যা কিছু দেখতে পাই, সবই আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন। আবার অনেক কিছু আছে যেগুলো আমরা দেখতে পাই না, সেগুলোও তিনিই সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা এগুলো সৃষ্টি করেই ছেড়ে দেননি। আল্লাহ তাআলার লালন-পালনের একটি বর্ণনা নিচে দেওয়া হলো: আল্লাহ তাআলার লালন-পালনের অনেক দৃষ্টান্ত আছে। যেমন, আমরা মানুষ। আমরা সবাই শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করি, নিঃশ্বাস ছেড়ে দিই। পশুপাখি, জীবজন্তুও প্রশ্বাস গ্রহণ করে, নিঃশ্বাস ছেড়ে দেয়। কোনো জীব বা কোনো প্রাণী শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়া বাঁচতে পারে না। আমাদের নিঃশ্বাস ছেড়ে দেওয়ার সময় নিঃশ্বাসের সঙ্গে আমাদের দেহের মধ্য থেকে এক প্রকার বিষাক্ত বায়ু বের হয়। এর নাম কার্বন ডাই-অক্সাইড। গাছপালা ও লতাপাতা এ বিষাক্ত বায়ু খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ছেড়ে দেয়। আর আমরা শ্বাস নেওয়ার সময় সে অক্সিজেন গ্রহণ করি। অক্সিজেন ছাড়া কোনো প্রাণী বাঁচতে পারে না। এটা আল্লাহ তাআলার অপার মহিমা। যে কার্বন ডাই-অক্সাইড আমাদের দেহের জন্য বিষ, গাছপালার জন্য তা খাদ্য। আবার গাছপালার ছেড়ে দেওয়া অক্সিজেন গ্রহণ করে আমরা বেঁচে থাকি। গাছপালা, লতাপাতার মাধ্যমে ফলমূল, শাকসবজি প্রভৃতি খাদ্য খাই। এভাবেই মহান আল্লাহ আমাদের লালন-পালন করেন।
প্রশ্ন: পানি কার দান? কীভাবে আমরা পানি পাই তার বর্ণনা দাও।
উত্তর: আমরা জানি, পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া কোনো জীব বা প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না। গাছপালা, লতাপাতাও পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না। আমাদের বাঁচার জন্য প্রতিদিন প্রায় সব সময় অনেক পানির প্রয়োজন হয়। এই পানি আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলারই দান।
আমরা যেন সহজে ও সব সময় পানি পেতে পারি, তার জন্য আল্লাহ তাআলা এক বিশেষ পদ্ধতি সৃষ্টি করেছেন। প্রতি দিন সূর্যের প্রখর তাপে নদনদী, খালবিল, সাগর-মহাসাগরে প্রচুর প্রাণী জলীয়বাষ্পে পরিণত হয়। এ বাষ্প শূন্যে বাতাসে ভেসে বেড়ায়। পরে তা আস্তে আস্তে ঘনীভূত হতে থাকে এবং মেঘে পরিণত হয়। মেঘ একপর্যায়ে ভারী হয়ে বৃষ্টির আকারে ঝরে পড়ে। এ পানির কিছু অংশ মাটির নিচে জমা হয়। আর কিছু অংশ নদনদী, খালবিল, সাগর-মহাসাগরে জমা থাকে। এভাবে পানি চক্রাকারে বাষ্প হয়ে পুনরায় পানিতে পরিণত হয়। এ চক্রকে পানিচক্র বলা হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ পানিচক্রের মাধ্যমে এ বিশাল পৃথিবীর লাখো কোটি মানুষ, জীবজন্তু, পশুপাখি, পোকামাকড়, গাছপালা, তৃণলতা ইত্যাদি বাঁচিয়ে রাখে। ফসলের খেতে নিয়মিত এ পানি দিয়ে তিনি আমাদের সবাইকে লালন-পালন করেন। কাজেই পানিচক্রের একটি চিত্র মনোযোগ দিয়ে দেখলে বোঝা যায়, আল্লাহ কত মহান ও দয়াময়। তিনি কীভাবে এ পানিচক্রের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বিশাল পৃথিবীর সবকিছুকে পানি সবরাহ করছেন। আল্লাহ তাআলার অপার মহিমার কারণেই আমরা নদী, খালবিল, পুকুর, সাগর ও নলকূপের মাধ্যমে মাটির নিচ থেকেও পানি পাই।
প্রশ্ন: আল্লাহ তাআলার পাঁচটি গুণবাচক নাম বাংলা অর্থসহ লেখো।
উত্তর: মহান আল্লাহ সব উত্তম গুণের অধিকারী। তিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু। তিনি সবকিছুর স্রষ্টা, তিনি সবকিছুর পালনকারী। তিনি সব দেখেন ও শোনেন। তিনি সর্বশক্তিমান। আল্লাহ তাআলার এ গুণবাচক নামগুলোকে ‘আল-আসমাউল হুসনা’ বলা হয়। ‘আল-আসমা’ অর্থ নামসমূহ, ‘আল-হুসনা’ অর্থ সুন্দরতম; এগুলোকে আল্লাহর সিফাতি নাম বলা হয়। কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাঁর অনেক গুণবাচক নাম উল্লেখ করেছেন। নিচে আল্লাহ তাআলার পাঁচটি গুণবাচক নাম বাংলা অর্থসহ লেখা হলো:
আল্লাহু তাআলার গুণবাচক নামবাংলা অর্থ
১. ইয়া রাহমানুহে পরম করুণাময়
২. ইয়া রাহিমুহে অসীম দয়ালু
৩. আল্লাহু গাফুরুনআল্লাহ অতি ক্ষমাশীল
৪. আল্লাহু সামিউনআল্লাহ সর্বশ্রোতা
৫. আল্লাহু কাদিরুনআল্লাহ সর্বশক্তিমান
প্রশ্ন: ‘আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল’—এর ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মানুষ পৃথিবীতে পথ চলতে গিয়ে মনের অজান্তে ভুল করে থাকে, মন্দ কাজ করে থাকে। আল্লাহ তাআলার হুকুম অমান্য করে। এমনকি শয়তানের প্ররোচনায় এবং কু-রিপুর তাড়নায়ও অনেক সময় অন্যায় ও পাপ কাজ করে থাকে। এভাবে কোনো ব্যক্তি যখন তার পাপ কাজের জন্য অনুতপ্ত হয় এবং ভবিষ্যতে পাপ কাজ না করার সংকল্প করে, আগের সব অন্যায় ও ভুল সে বুঝতে পেরে নিজ ভুল স্বীকার করে তখন তার মনে অনুশোচনা হয়, দুঃখ হয়। এ অবস্থায় সে যদি আল্লাহতাআলার কাছে ক্ষমা চায় এবং অনুতাপে চোখের পানি ফেলে কাঁদে, তখন আল্লাহ তাআলা তাকে নিজ গুণে ক্ষমা করে দেন। কারণ, আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল। কোরআন মাজিদে আছে: ‘ইন্নাল্লাহ গাফুরুর রাহিম’। অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
প্রশ্ন: আল্লাহ তাআলা সর্বশক্তিমান ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আল্লাহ কাদিরুন। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা সর্বশক্তিমান। এ বিশাল সৃষ্টি জগতের সবকিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহতায়ালা। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, জিন, ফেরেশতা, মানুষ, গাছপালা, নদনদী, সাগর, মহাসাগর, পাহাড়, পর্বত সবকিছুর মালিক আল্লাহ তাআলা। তিনি কারও ভালো বা কল্যাণ করতে চাইলে কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না। আবার কারও শাস্তি দিতে চাইলে কেউ তা রোধ করতে পারে না। কারণ, তিনি সর্বশক্তিমান। পৃথিবীতে মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তু, পশুপাখি সব প্রাণীর জীবনদাতা একমাত্র তিনিই। আবার তিনিই সব প্রাণীর মৃত্যু দেন। তারই নির্দেশে সূর্য প্রতি দিন পূর্ব দিকে সঠিক সময় উদিত হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দিনের সূচনা হয়। তারই নির্দেশে সূর্য পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। সূর্যাস্তের পর রাত শুরু হয়। আল্লাহতাআলারই নির্দেশে কোনো মৌসুমে দিন ছোট হয় এবং রাত বড় হয়। আবার কোনো মৌসুমে দিন বড় হয় এবং রাত ছোট হয়। মহান আল্লাহতাআলার কোরআন মাজিদে বলেছেন, ‘ইন্নাল্লাহা আলা কুল্লি শাইয়্যিন কাদির’। অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহতাআলার সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
আমরা সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহতাআলার কাছে নিজেদের সম্পূর্ণভাবে সোপর্দ করব। তার কাছেই সব রকমের সাহায্য-সহায়তা চান।
প্রশ্ন: নবী-রাসূলদের জীবনের লক্ষ্য কী ছিল?
উত্তর: আল্লাহ তাআলা তাঁর পছন্দনীয় ও কল্যাণের পথ মানুষকে দেখানোর জন্য যুগে যুগে পৃথিবীতে অনেক নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। তাঁরা ছিলেন পথপ্রদর্শক। আল্লাহতাআলার কোরআন মাজিদে বলেছেন: ‘লিকুল্লি কাওমিন হাদ’। অর্থাৎ, প্রত্যেক জাতির জন্য আছে পথপ্রদর্শক।
আল্লাহতাআলার প্রেরিত নবী-রাসূলদের জীবনের লক্ষ্য ছিল মানুষের জীবন মঙ্গলময় করা। মানুষের কল্যাণ সাধন করা। মানুষকে আল্লাহতাআলার অনুগত বান্দা হিসেবে গড়ে তোলা। নবী-রাসূলদের জীবনের আরও লক্ষ্য ছিল আল্লাহতাআলার ইবাদত-বন্দেগি পালনে মানুষকে অভ্যস্ত করা এবং তার নির্দেশিত পথে চলতে তাদের আগ্রহী করা। আল্লাহ তাআলার অপছন্দনীয় কাজ তথা শয়তানের প্রিয় কাজগুলো থেকে মানুষকে বিরত রাখার জন্য নবী-রাসুলেরা সব সময় চেষ্টা করে গেছেন।

No comments:

Post a Comment