13.3.12

বাংলা: শখের মৃৎশিল্প


প্রিয় শিক্ষার্থী, আজকের পড়াশোনায় তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। বাংলা বিষয়ের ওপর পড়াশোনায় আজ তোমাদের জন্য রয়েছে শখের মৃৎশিল্প।
মাটির তৈরি শিল্পকর্মকে বলা হয় মাটির শিল্প বা মৃৎশিল্প। বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকলার পরিচয় পাওয়া যায় এই মাটির শিল্পে। মৃৎশিল্প আমাদের এদেশের নিজস্ব শিল্প। তোমরা নিশ্চয় বৈশাখী মেলায় কিংবা নানা পার্বনে বিভিন্ন মেলায় মাটির তৈরি নানা রকম পুতুল, নকশা করা হাঁড়ি, মাটির ফল, তৈজষপত্র বিক্রি হতে দেখেছ। মাটির তৈরির এসব জিনিসই মৃৎশিল্প। গ্রামের কুমাররা নিপুনভাবে এসব তৈরি করে। প্রাচীনকাল থেকে এদেশে মৃৎশিল্পের চর্চা হচ্ছে। ময়নামতির শালবন বিহার, বগুড়ার মহাস্থানগর, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদে দেখা যায় পোড়ামাটির ফলক। পোড়ামাটির এসব ফলককে বলা হয় টেরাকোটা। মাটির শিল্প আমাদের বাংলাদেশের ঐতিহ্য।
মৃৎশিল্প সম্পর্কে কিছুটা ধারণা তো নেওয়া হলো। এবার এসো। এই প্রবন্ধের কয়েকটি প্রশ্নের নমুনা উত্তর দেখা যাক।
প্রশ্ন: মাটির শিল্প বলতে কী বুঝ?
উত্তর: কোনো কিছু যখন সুন্দর করে আঁকা হয়, সুন্দর করে তৈরি করা হয়। তখন তা হয়ে ওঠে শিল্প। আর শিল্পের এই কাজকে বলা হয় শিল্পকলা। আমাদের বাংলাদেশে অনেক রকম শিল্পকলা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ও অন্যতম হলো মাটির শিল্প। মাটি দিয়ে তৈরি এই শিল্প কর্মের মধ্যে রয়েছে মাটির কলস, হাড়ি, সরা, বাসন, কোসন, পেয়ালা, সরাই মটকা, শালা, পিঠে তৈরির ছাচ ইত্যাদি। এই শিল্পের প্রধান উপকরণ হলো মাটি। আর এই শিল্পের প্রধান শিল্পী হলো আমাদের কুমোর সম্প্রদায়। কুমোর সম্প্রদায়ের হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞানে মাটি দিয়ে তৈরি শিল্প কর্মকে মাটির শিল্প বলা হয়। মাটির শিল্পের সার্বিক নাম হলো মৃৎশিল্প।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকর্ম কোনটি?
উত্তর: শিল্প বলতে আমরা বুঝি কোন কিছু সুন্দর করে আঁকা, সুন্দর করে গাওয়া, সুন্দর করে তৈরি করা। আর শিল্পের এই কাজকে বলা হয় শিল্পকলা। আমাদের দেশে নানা শিল্পকলা রয়েছে। রয়েছে নানা ধরনের শিল্পকর্ম। এসব শিল্পকর্মের মধ্যে বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকলার পরিচয় পাওয়া যায় মাটির শিল্পে। এটা এ দেশের নিজস্ব শিল্প। বৈশাখী মেলায় নানা পার্বনে যেসব মাটির জিনিস বিক্রি হয় সেসব কিছুই মাটির শিল্প। গ্রামের কুমোরেরা নিপুণভাবে এসব তৈরি করে। প্রাচীনকাল থেকেই এ দেশে মৃৎশিল্প বা মাটির শিল্পের চর্চা হয়ে আসছে। ময়নামতির শালবন বিহার, বগুড়ার মহাস্থানগড় ও বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদে যেসব পোড়ামাটির ফলক বা টেরাকোটার নিদর্শন রয়েছে সেসব মাটি দিয়েই তৈরি। কাজেই বলা যায়, বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্প কর্ম হচ্ছে মাটির শিল্প বা মৃৎশিল্প।
প্রশ্ন: শখের হাঁড়ি কী রকম?
উত্তর: মাটির তৈরি যেসব শিল্প কর্ম রয়েছে তাদের মধে শখের হাঁড়ি একটি অন্যতম শিল্পকর্ম। শখের হাঁড়ি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কোন হাঁড়ির ফুল আঁকা, কোন হাঁড়ি পাতা আঁকা আবার কোন কোন হাঁড়ি মাছের ছবি আকা। অপূর্ব সুন্দর কারুকাজ খচিত এসব হাড়ি সহজেই মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। মানুষ শখ করে পছন্দের জিনিস এই সুন্দর হাঁড়িতে রাখে। তাই সুন্দর হাঁড়িতে রাখে। তাই এই হাঁড়িকে শখের হাঁড়ি বলা হয়। শখের হাঁড়ি দৃষ্টি নন্দন এবং শিল্প সৌকর্যে অতুলনীয়।
প্রশ্ন: বৈশাখী মেলায় কী কী পাওয়া যায়?
উত্তর: বৈশাখী মেলা বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক উৎসব। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে এই মেলা বসে। বৈশাখী মেলায় অনেক কিছু পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মাটির তৈরি নানাবর্ণের নানা রঙের বিচিত্র হাঁড়ি, মাটির ঘোড়া, হাতি, ষাঁড়, পুতুল, মাছ, বাঁশের তৈরি কুলো, ডালা, ঝুড়ি, চালুন, মাছধরার চাঁই, খলই ইত্যাদি। বৈশাখী মেলায় আরও পাওয়া যায় বাঙি, তরমুজ, মুড়ি-মুড়কি, জিলাপি, বাতাসা আর কদমা। এছাড়া বৈশাখী মেলার অন্যতম আকর্ষণ হলো নাগরদোলা।
প্রশ্ন: টেরাকোটা কী?
উত্তর: প্রাচীনকাল থেকে আমাদের এই বাংলাদেশে মৃৎশিল্পের চর্চা হয়ে আসছে। প্রাচীন মৃৎশিল্পের মধ্যে অন্যতম হলো টেরাকোটা। টেরাকোটা একটি ল্যাটিন শব্দ। ‘টেরা’ অর্থ মাটি আর কোটা অর্থ পোড়ানো। পোড়ামাটির তৈরি মানুষের ব্যবহারের সব রকমের জিনিস টেরাকোটা হিসেবে পরিচিত। নকশা করা মাটির ফলক বা জিনিস ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হতো টেরাকোটা।

প্রশ্ন: মৃৎশিল্পের প্রধান উপাদান কী?
উত্তর: মাটির তৈরি শিল্পকর্মকে বলা হয় মৃৎশিল্প। এ শিল্পের প্রধান উপাদান হলো মাটি। তবে সব মাটি দিয়ে এ কাজ হয় না। দোঁআশ মাটি তেমন আঠালো নয়, আর বেলে মাটি ঝরঝরে-তাই এগুলো দিয়ে মাটির শিল্প বা মৃৎশিল্প হয় না। মৃৎশিল্পের জন্য দরকার পরিস্কার এঁটেল মাটি। এ ধরনের মাটি বেশ আঠালো। আবার এঁটেল মাটি হলেই যে তা দিয়ে শিল্পের কাজ করা যাবে তাও নয়। এর জন্য দরকার অনেক যত্ন আর শ্রম। দরকার হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞান। প্রয়োজন কিছু ছোটখাট যন্ত্রপানি ও সরঞ্জাম। মৃৎশিল্পের প্রধান উপাদান মাটি হলেও এর সঙ্গে দরকার একটা কাঠের চাকা। এই চাকায় নরম মাটির তাল লাগিয়ে নানা আকারের মাটির পাত্র ও নানা জিনিস তৈরি করে কুমোররা।
প্রশ্ন: কয়েকটি মৃৎশিল্পের নাম লেখ।
উত্তর: মৃৎশিল্প আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিল্প। এদেশের কুমোর সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে তৈরি করে আসছে নানা রঙের, নানা বর্ণেরও বিভিন্ন রকমের মৃৎশিল্প। আমাদের দেশের কুমোরদের তৈরি কয়েকটি মৃৎশিল্পের নাম হলো: মাটির কলস, হাঁড়ি, সরা, মটকা, বাসন-কোসন, পেয়ালা, সুরাই, জালা, পিঠে তৈরির ছাঁচ, পুতুল, ও নানা রকম পশু, পাখি মাছ ইত্যাদি। এছাড়াও আমাদের দেশে একসময় গড়ে উঠেছিল অনিন্দ্যসুন্দর মৃৎশিল্প টেরাকোটা। বাংলায় অনেক পুরনো মৃৎশিল্প এই টেরাকোটা।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের কোথায় পোড়ামাটির প্রাচীন শিল্প দেখতে পাওয়া যায়?
উত্তর: হাঁড়ি কলসি ছাড়াও আমাদের দেশে এক সময় গড়ে উঠেছিল সুন্দর পোড়ামাটির ফলকের কাজ। এর অন্য নাম, টেরাকোটা। নকশাকরা মাটির ফলক ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হতো এই শিল্প। বাংলাদেশের ময়নামতির শালবন বিহার। বগুড়ার মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধ স্তূপ, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির ও বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদে পোড়ামাটির প্রাচীন শিল্প দেখতে পাওয়া যায়। সম্প্রতি নরসিংদীর ওয়ারী বটেশ্বরে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে নানা ধরনের সুন্দর মাটির পাত্র আর ফলক।
প্রশ্ন: মাটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের বিষয় কেন?
উত্তর: বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকলার পরিচয় পাওয়া যায় মাটির শিল্পে। এটা এদেশের নিজস্ব শিল্প। হাজার হাজার বছর ধরে এদেশে মাটির শিল্পের চর্চা হয়ে আসছে। এদেশের মানুষের মন যে শিল্পীর মন, এ মাটির শিল্প তারই পরিচয় বহন করে। ময়নামতির শালবন বিহার, বগুড়ার মহাস্থানগর, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদে দেখা যায় পোড়ামাটির ফলকের নির্দশন। তাই মাটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের বিষয়।
প্রশ্ন: কথাগুলো বুঝিয়ে লেখ:
(ক) মৃৎশিল্প (খ) শখের হাঁড়ি (গ) টেরাকোটা (ঘ) টেপা পুতুল।
উত্তর: (ক) মৃৎশিল্প: মাটির তৈরি শিল্পকর্মকে বলা হয় মৃৎশিল্প। এ শিল্পের প্রধান উপকরণ হলো মাটি। তবে সব মাটি দিয়ে এ শিল্পকর্ম হয় না। এর জন্য দরকার পরিষ্কার এঁটেল মাটি। এ ধরনের মাটি বেশ আঠালো। তাই এই মাটি দিয়ে যত্ন আর শ্রমের মাধ্যমে তৈরি হয় মৃৎশিল্প। মাটির হাড়ি, কলস, সরা, বাসন-কোসন, পেয়ালা, সুরাই, মটকা, জালা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য মৃৎশিল্প।
(খ) শখের হাঁড়ি: মানুষ শখ করে পছন্দের জিনিস যে মাটির হাঁড়িতে রাখে সেই হাঁড়িকে শখের হাঁড়ি বলা হয়। শখের হাঁড়ি নানা রঙের নানা বর্ণের হয়ে থাকে। কোনো শখের হাড়িতে আঁকা থাকে ফুল-পাতা, আবার কোনো শখের হাঁড়িতে আঁকা থাকে মাছের ছবি।
(গ) টেরাকোটা: টেরাকোটা শব্দটি ল্যাটিন। ‘টেরা’ অর্থ মাটি আর ‘কোটা’ অর্থ পোড়ানো। মাটি পুড়িয়ে যে শিল্পকর্ম তৈরি হয় তার নাম টেরাকোটা। বাংলার অনেক পুরনো শিল্প এই টেরাকোটা। নকশা করা মাটির ফলক ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হতো টেরাকোটা। বাংলাদেশের ময়নামতির শালবন বিহার, বগুড়ার মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধস্তুপ, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরে টেরাকোটার কাজ রয়েছে। তাছাড়া বাগের হাটের ষাটগম্বুজ মসজিদেও পোড়ামাটির অপূর্ব সুন্দর কাজ রয়েছে। পোড়ামাটির এই শিল্পকর্ম বাংলার প্রাচীন মৃৎশিল্প।
(ঘ) টেপা পুতুল: মাটি দিয়ে কুমোররা অনেক জিনিস তৈরি করে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম হলো টেপা পুতুল। নরম এঁটেল মাটি টিপে টিপে যেসব পুতুল বানানো হয় তাদের বলা হয় টেপা পুতুল। অনেক রকম টেপা পুতুল রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—বউ-জামাই, কৃষক, নথপরা ছোট্ট মেয়ে।

No comments:

Post a Comment