27.3.12

বাংলা : দৈত্য ও জেলে

দৈত্য ও জেলে
প্রিয় পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী, বাংলা বিষয়ের ওপর আলোচনায় তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে অনেক অনেক শুভেচ্ছা সবার জন্য। আলোচ্যসূচিতে আজ রয়েছে আরব্য উপন্যাস ‘আলিফ লায়লা’ থেকে সংগৃহীত এবং তোমাদের জন্য সংকলিত গল্প ‘দৈত্য ও জেলে’। ‘আলিফ লায়লা’ বা ‘আরব্য রজনী’ আরবীয় কল্পকাহিনিগুলোর জন্ম প্রাচীন মিসরে। ১০০১টি কাহিনিভিত্তিক আরব্য রজনীর গল্পগুলো একসময় লোকের মুখে মুখে ফিরত। বাগদাদের খলিফা হারুন অর রশীদের আমলে (৭৬৪-৮০৯ খ্রি.) এবং ফাতেমীয় (৯৬৮-১১৭১ খ্রি.) ও মামলুক (১২৫০-১৩৮২ খ্রি.) রাজবংশের সময় এসব গল্পের অধিকাংশ সংগৃহীত হয়। যত দূর জানা যায়, এই মৌখিক লোককথাগুলো কখনো এক হাতে, একসময়ে এমনকি এক দেশেও লেখা হয়নি। এসব গল্প প্রথম লিখিত রূপ পেয়েছে প্রাচীন পারসিক ভাষায় হাজার আকসানা বা হাজার গল্প নামে। এই কাহিনিগুলো মোগল আমলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমাদের দেশে এসেছে। বর্তমান সময়ে আরব্য রজনীর গল্প বিশ্বসাহিত্য জগতের এক মূল্যবান সম্পদ। আমাদের আলোচ্য গল্পটি এই সম্পদেরই একটি অংশ। এবার এসো, এই গল্পের কিছু শব্দের অর্থ ও বাক্য রচনা দিয়ে আমাদের ধারাবাহিক পাঠ শুরু করা যাক।
প্রশ্ন: নিচের শব্দগুলোর অর্থ লেখো:
মর্জি, অনাহার, গোস্তাকি, নসিব, বদনসিব, শ্বেত, আস্থা, জব্বর, বেঈমান, প্রতিজ্ঞা
উত্তর: প্রদত্ত শব্দ শব্দের অর্থ প্রদত্ত শব্দ শব্দের অর্থ
মর্জি ইচ্ছা। অনাহার উপবাস।
গোস্তাকি অপরাধ। নসিব ভাগ্য।
বদনসিব মন্দ ভাগ্য। শ্বেত সাদা।
আস্থা ভরসা। জব্বর দারুণ।
বেঈমান অকৃতজ্ঞ। প্রতিজ্ঞা শপথ।
প্রশ্ন: নিচের শব্দগুলো দিয়ে বাক্য রচনা করো:
জেলে, কায়ক্লেশে, গুজরান, জালা, মোহর
উত্তর:
প্রদত্ত শব্দ বাক্য রচনা
জেলে — জেলেরা মাছ বিক্রি করে সংসার চালায়।
কায়ক্লেশে — শ্রমিকসমাজ কায়ক্লেশে জীবন যাপন করে।
গুজরান — করিমন খুব কষ্টে দিন গুজরান করে।
জালা — দৈত্যটি জালার মধ্যে বন্দী ছিল।
মোহর — সুলেমান বাদশাহ জালার মুখে মোহর খোদাই করে দিয়েছিল।
প্রশ্ন: শূন্যস্থান পূরণ করো:
(ক) সে প্রতিদিন নদীতে — করে জাল ফেলত।
উত্তর: সে প্রতিদিন নদীতে পাঁচবার করে জাল ফেলত।
(খ) বলতে বলতে জেলে — বারের মতো জালটা — ছুড়ে মারল।
উত্তর: বলতে বলতে জেলে শেষ বারের মতো জালটা পানিতে ছুড়ে মারল।
(গ) তোমার জন্য — একটা খবর নিয়ে এসেছি।
উত্তর: তোমার জন্য জব্বর একটা খবর নিয়ে এসেছি।
(ঘ) কেন তুমি আমাকে — চাইছ?
উত্তর: কেন তুমি আমাকে মারতে চাইছ?
(ঙ) দৈত্য এবার বলল, তোমার — কী শুনবে?
উত্তর: দৈত্য এবার বলল, তোমার গোস্তাকি কী শুনবে?
প্রশ্ন: ডান দিক থেকে শব্দ বেছে নিয়ে বাঁ দিকের সঙ্গে মিল করো:
গরিব দাঁত মাটির পাকিয়ে
কাচের খবর কুণ্ডলী লোকজন
জব্বর টুকরো বাদশাহর বিগড়ে
কড়মড় জেলে মেজাজ জালা
উত্তর:
গরিব জেলে মাটির জালা
কাচের টুকরো কুণ্ডলী পাকিয়ে
জব্বর খবর বাদশাহর লোকজন
কড়মড় দাঁত মেজাজ বিগড়ে

প্রশ্ন: জেলের সংসার কীভাবে চলত?
উত্তর: আরব্য উপন্যাস ‘আলিফ লায়লা’ থেকে সংগৃহীত ‘দৈত্য ও জেলে’ গল্পের একটি বিশেষ চরিত্র জেলে। নদীর ধারে বাস করা জেলেটি ছিল খুব গরিব। কায়ক্লেশে সে দিন গুজরান করত। সে প্রতিদিন নদীতে পাঁচবার করে জাল ফেলত। এতে যে মাছ পেত, তা বিক্রি করে তার সংসারের খরচ চালাত।
প্রশ্ন: জালা থেকে কী বের হয়ে এল?
উত্তর: নদীর ধারে বাস করা জেলে প্রতিদিন নদীতে পাঁচবার করে জাল ফেলত। এতে যে মাছ পেত, তা বেচেই তার সংসারের খরচ চালাত। একদিন সকালে চার-চারবার নদীতে জাল ফেলেও কোনো মাছ পেল না। পঞ্চম ও শেষবার জাল ফেলে সে পেল একটা তামার জালা। জালাটার মুখ ঢাকনা দিয়ে আটকানো ছিল। জেলে নদীর পাড়ে পড়ে থাকা একখণ্ড পাথর দিয়ে ঠুকে ঠুকে সাবধানে জালার মুখটা সরিয়ে ফেলল। ঢাকনা সরে গেলে জালা থেকে গলগল করে রাশি রাশি ধোঁয়া বের হয়ে আসতে লাগল। দেখতে দেখতে সেই ধোঁয়ার কুণ্ডলী একটা অতিকায় দৈত্যে পরিণত হলো।
প্রশ্ন: দৈত্যটি দেখতে কেমন ছিল?
উত্তর: দৈত্যটি দেখতে খুবই ভয়ংকর ছিল। তার মাথাটা একটা বিশাল ঝুড়ির মতো। একগাছিও চুল ছিল না মাথায়। আগুনের গোলার মতো ভয়ংকর দুটি চোখ আর দাঁত ছিল শ্বেতপাথরের টুকরো বসানোর মতো। দৈত্যের এই ভয়ংকর চেহারা দেখে জেলে খুব ভয় পেয়েছিল।
প্রশ্ন: বাদশাহ কেন দৈত্যকে বন্দী করেছিলেন?
উত্তর: দৈত্যটির নাম সক-হর-অল জ্বীন। সে বাদশাহ সুলেমানের গোলাম ছিল। তার এমনই ক্ষমতা ছিল যে দুনিয়ার কাউকে সে পরোয়া করত না। একদিন সে বাদশাহর হুকুম তামিল করতে অস্বীকার করে। এতে বাদশাহ রেগে যান এবং তাকে শায়েস্তা করার জন্য একটি তামার জালায় বন্দী করেন। তারপর বাদশাহর নাম খোদাই করে মুখ বন্ধ জালাটা নদীতে ফেলে দেন। প্রকৃত অর্থে অবাধ্য হওয়ার কারণেই বাদশাহ দৈত্যকে বন্দী করেছিলেন।
প্রশ্ন: দৈত্য কেন জেলেকে মারতে চেয়েছিল?
উত্তর: অবাধ্যতার কারণে বাদশাহ সুলেমান দৈত্যকে তামার জালায় বন্দী করে নদীতে ফেলে দিয়েছিলেন। নদীর তলায় দীর্ঘ সময় দৈত্যের বন্দী জীবন কাটে। একদিন সে শপথ করে। যদি ৪০০ বছরের মধ্যে তাকে কেউ এ বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেয়, তবে সে তার মুক্তিদাতাকে অগাধ ধনরত্ম দিয়ে খুশি করবে। কিন্তু কেউ তাকে মুক্তি দিল না। ৪০০ বছর পর দৈত্য আবার শপথ করে। এবার যে তাকে উদ্ধার করবে, তাকে তিনটি বর দেবে। উদ্ধারকারী যা চাইবে তা-ই সে পাবে। কিন্তু এবারও কেউ তাকে উদ্ধার করতে এল না। এবার তার মেজাজ বিগড়ে যায়। রাগে-দুঃখে, অপমানে শপথ করে এবার যদি কেউ তাকে উদ্ধার করে, তবে সেই হতচ্ছাড়াকে সে কতল করবে। ভাগ্যের ফেরে গরিব জেলে দৈত্যের শেষ প্রতিজ্ঞার কবলে পড়ে। জেলে দৈত্যকে মুক্ত করলে দৈত্য প্রতিজ্ঞা অনুসারে জেলেকে মারতে চেয়েছিল।
প্রশ্ন: জেলে কেমন করে দৈত্যের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করল?
উত্তর: দৈত্যের কাহিনি শুনে জেলে বুঝতে পারল, আজ আর তার রক্ষা নেই। মরার ভয়ে ভীত হলেও জেলে বুদ্ধি হারাল না। সাহসের সঙ্গে বুদ্ধি খাটিয়ে সে বলল, দৈত্য তার এত বড় শরীরটা নিয়ে জালার মধ্যে ছিল এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। দৈত্যকে দেখে এ কথা কেউই বিশ্বাস করবে না যে এত বড় শরীর নিয়ে এই ছোট্ট জালার মধ্যে সে থাকতে পারে। নিশ্চয় দৈত্য মিথ্যা কথা বলছে। জেলের কথা দৈত্যের অহমিকায় আঘাত করে। সে দাত কড়মড় করে মেঘের গর্জন তুলে বলল, দৈত্য যে কখনো মিথ্যা কথা বলে না, জেলে মরার আগেই তা জেনে যাবে। তারপর অহংকারী দৈত্য চোখের পলকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে জালাটার ভেতর ঢুকে গেল। সঙ্গে সঙ্গে জেলে জালাটার মুখে ঢাকনা লাগিয়ে আবার জলে ফেলে দিল। এভাবে বুদ্ধি খাটিয়ে কৌশলে জেলে দৈত্যের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করল।
প্রশ্ন: জালা দেখে জেলে কী ভাবল?
উত্তর: ‘দৈত্য ও জেলে’ গল্পটির কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো এক জেলে। সে ছিল খুব গরিব। বাস করত এক নদীর ধারে। প্রতিদিন নদীতে পাঁচবার করে জাল ফেলা তার নীতি ছিল। এতে যে মাছ পেত, তা বিক্রি করেই সে সংসারের খরচ চালাত। কায়ক্লেশে দিন গুজরান করা এই জেলে একদিন সকালে এসে নদীতে জাল ফেলল। কিন্তু পর পর চারবার জাল ফেলেও সে কোনো মাছ পেল না। দুঃখে, হতাশায় আকাশের দিকে মুখ করে আল্লাহর সাহায্য ও রহমত কামনা করে সে শেষবারের মতো জালটা পানিতে ছুড়ে মারল। এবার সে দেখল, ঢাকনা দিয়ে আটকানো একটা তামার জালা জালে আটকে আছে। জালার ঢাকনার ওপর দাউদের পুত্র সুলেমানের নাম খোদাই করা। অপূর্ব এই বাদশাহী জালা দেখে জেলের বুকে কিছুটা আশা ফিরে এল। সে ভাবল, নিশ্চয় এর ভেতর মণিরত্ন রয়েছে। খোদার দয়ায় এবার বুঝি তার নসিব ফিরল।

No comments:

Post a Comment