প্রিয় শিক্ষার্থী, আমাদের ধারাবাহিক পাঠ আলোচনায় তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আলোচ্যসূচিতে আজ রয়েছে গণিত বিষয়ের সপ্তম অধ্যায়। এই অধ্যায় সম্পৃক্ত অনুশীলনী ৭-এ রয়েছে গ.সা.গু ও ল.সা.গু সংক্রান্ত সমস্যাবলি। এসো, তাহলে শুরুতে জেনে নেওয়া যাক গ.সা.গু বলতে আমরা কী বুঝি।
গ.সা.গু-এর পূর্ণবাক্য হলো গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক।
‘গ’ বলতে বোঝানো হয়েছে গরিষ্ঠ। আর গরিষ্ঠ মানে হলো বড় বা বৃহত্তম।
‘সা’ বলতে বোঝানো হয়েছে সাধারণ অর্থাৎ সবখানে যা থাকে।
‘গু’ বলতে বোঝানো হয়েছে গুণনীয়ক বা উৎপাদক। কাজেই বলা যায়, একাধিক সংখ্যার সাধারণ গুণনীয়কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হচ্ছে তাদের গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক বা গ.সা.গু। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, একাধিক সংখ্যার গ.সা.গু=এদের সাধারণ মৌলিক গুণনীয়কগুলোর গুণফল। আবার, প্রদত্ত সংখ্যাগুলোর কোনো সাধারণ মৌলিক গুণনীয়ক না থাকলে সে ক্ষেত্রে তাদের গ.সা.গু হয় ১।
এখন কথা হলো, মৌলিক বলতে আমরা কী বুঝি? মৌলিক বলতে এখানে মৌলিক সংখ্যাকেই বোঝানো হয়েছে। আমরা তো জানি, যে সংখ্যার মাত্র দুটি গুণনীয়ক রয়েছে তা মৌলিক সংখ্যা। অর্থাৎ যে সংখ্যা ১ এবং সেই সংখ্যা ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য নয়, তাকে মৌলিক সংখ্যা বলা হয়। যেমন: ২, ৩, ৫, ৭, ১১ ইত্যাদি। এবার নিশ্চয় মনে প্রশ্ন জাগে, গুণনীয়ক কী? কোনো সংখ্যা যে যে সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য সেগুলোই ওই সংখ্যার গুণনীয়ক বা উৎপাদক। যেমন, ১২-এর সাধারণ গুণনীয়ক নির্ণয় করতে বলা হলো। এখন পূর্বে বর্ণিত কথাগুলো যদি মন দিয়ে বুঝে থাকি, তাহলে নিশ্চিন্তে বলতে পারি, ১২-এর সাধারণ গুণনীয়ক হলো ১, ২, ৩, ৪, ৬ ও ১২। কারণ কেবল ১, ২, ৩, ৪, ৬ ও ১২ দ্বারাই ১২ বিভাজ্য।
সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে গ.সা.গু নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
১. বিবেচনা করে অর্থাৎ পর্যবেক্ষণের সাহায্যে। উদাহরণ: ১৮, ২৪, ৩০ সংখ্যা তিনটির গ.সা.গু নির্ণয় করো।
সমাধান: এখানে,
১৮-এর সকল গুণনীয়ক: ১, ২, ৩, ৬, ৯, ১৮
২৪-এর সকল গুণনীয়ক: ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৮, ১২, ২৪
৩০-এর সকল গুণনীয়ক: ১, ২, ৩, ৫, ৬, ১০, ১৫, ৩০
অতএব, সংখ্যা তিনটির সাধারণ গুণনীয়কগুলো হচ্ছে ১, ২, ৩, ৬। এদের মধ্যে ৬ সবচেয়ে বড়। সুতরাং ১৮, ২৪, ৩০-এর গ.সা.গু হচ্ছে ৬।
উত্তর: ৬
২. মৌলিক উৎপাদকের সাহায্যে।
উদাহরণ: ১৮, ২৪, ৩০-এর গ.সা.গু নির্ণয় করো।
সমাধান: এখানে,
১৮=২×৩×৩
২৪=২×২×২×৩
৩০=২×৩×৫
দেখা যাচ্ছে, ১৮, ২৪ ও ৩০-এর সাধারণ মৌলিক গুণনীয়ক (বা উৎপাদক) হচ্ছে ২, ৩।
সুতরাং ১৮, ২৪, ৩০-এর গ.সা.গু=২×৩=৬
৩. ভাগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বা ইউক্লিডীয় প্রক্রিয়ার সাহায্যে।
উদাহরণ: ১৮, ২৪, ৩০-এর গ.সা.গু নির্ণয় করো।
সমাধান: প্রথমে ১৮ ও ২৪-এর গ.সা.গু নির্ণয় করো।
১৮)২৪(১
১৮
৬)১৮(৩
১৮
০
সুতরাং ১৮ ও ২৪-এর গ.সা.গু ৬। [সর্বশেষ ভাজক] এখন ৬ ও ৩০-এর গ.সা.গু নির্ণয় করি।
৬)৩০(৫
৩০
০
সুতরাং ৬ ও ৩০-এর গ.সা.গু ৬।
অতএব, ১৮, ২৪, ৩০-এর গ.সা.গু ৬।
উত্তর: ৬।
লক্ষ করো: ১৮, ২৪ ও ৩০-এর গ.সা.গু তিনটি পদ্ধতিতে করা হয়েছে এবং সব ক্ষেত্রেই গ.সা.গু. পাওয়া গেছে ৬।
প্রিয় শিক্ষার্থী, উল্লিখিত তিনটি পদ্ধতির দ্বিতীয় পদ্ধতি অর্থাৎ মৌলিক উৎপাদকের সাহায্যে গ.সা.গু নির্ণয়ের নিয়ম অনুসারে আমরা সমাধান করতে পারি অনুশীলনীর ১ নম্বর প্রশ্নের ‘ক’ থেকে ‘ঞ’ পর্যন্ত। তৃতীয় পদ্ধতি অর্থাৎ ভাগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা সমাধান করতে পারি অনুশীলনীর ২ নম্বর প্রশ্নের ‘ক’ থেকে ‘ঞ’ পর্যন্ত। চলো, তাহলে আর দেরি না করে ঝটপট বই-খাতা, কলম নিয়ে অনুশীলনী ৭-এর ১ নম্বর ও ২ নম্বর প্রশ্নের অঙ্কগুলো সমাধান করে ফেলি।
অনুশীলনী-৭ গ.সা.গু
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বাগত জানাচ্ছি আজকের গণিত বিষয়ের গ.সা.গু.-সংক্রান্ত আলোচনায়। এর আগের পাঠ আলোচনায় আমরা গ.সা.গু. কী এবং কয়টি পদ্ধতি অনুসরণ করে গ.সা.গু. নির্ণয় করা যায় তা জেনেছি। আজ গ.সা.গু.-সংক্রান্ত কথার সমস্যা নিয়ে কিছুটা ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করব।
খুব সহজ পদ্ধতি হলেও গ.সা.গু.-সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় বেশ অসুবিধায় পড়ে থাকি। তবে একটু সচেতনভাবে সমাধান করলে আশা করি, এ অসুবিধা আর থাকার কথা নয়। যেমন, ৬০টি আম ও ১৫০টি লিচু সর্বাধিক কতজন বালক-বালিকার মধ্যে নিঃশেষে ভাগ করে দেওয়া যাবে? এই সমস্যার সমাধান যদি এভাবে করা হয়:
৬০)১৫০(২
১২০
৩০)৬০(২
৬০
নির্ণেয় গ.সা.গু. ৩০ জন
এ রকম সমাধান কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সমাধানটি কেন গ.সা.গু. করা হলো এবং কীভাবে ৩০ জন হলো তা স্পষ্ট নয়।
গ.সা.গু. নির্ণয় করার পর শেষ স্তরে লেখা হয়েছে নির্ণেয় গ.সা.গু. এবং তার সামনে ৩০ জন।
লক্ষ করো: গ.সা.গু.-সংক্রান্ত কথার অঙ্ক সমাধানের ক্ষেত্রে নির্ণেয় গ.সা.গু. লেখা ঠিক নয় এবং গ.সা.গু.-এর সামনে জন/টি/লিটার ইত্যাদি লেখা সমীচীন নয়। নির্ণেয় গ.সা.গু. কথাটি কেবল গ.সা.গু. নির্ণয় করতে বলা হলে তবেই লেখা হয়। ওপরে বর্ণিত সমস্যাটিতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা নির্ণয় করতে বলা হয়েছে। কাজেই সমস্যার সমাধান গ.সা.গু.-এর নিয়মে সমাধান করতে হবে ঠিকই, কিন্তু নির্ণেয় গ.সা.গু. ৩০ জন লেখা ঠিক হবে না। প্রশ্ন করতে পারো, তাহলে কী লেখা হবে? এ সম্পর্কিত ধারণা তোমাদের পাঠ্য বইয়ে উদাহরণ ১৪-এর শেষ অংশে পাওয়া যাবে।
এবার এসো, কয়েকটি সহজ সমস্যার সমাধান দেখা যাক।
প্রশ্ন: ৬০টি আম ও ১৫০টি লিচু সর্বাধিক কতজন বালক-বালিকার মধ্যে নিঃশেষে ভাগ করে দেওয়া যাবে? প্রত্যেকে কয়টি আম ও কয়টি লিচু পাবে?
সমাধান: এখানে আম ৬০টি
লিচু ১৫০টি
নির্ণেয় সর্বাধিক বালক-বালিকার সংখ্যা হবে ৬০ ও ১৫০-এর গ.সা.গু. যত তত জন।
এখন, ৬০ ও ১৫০-এর গ.সা.গু. নির্ণয় করি।
৬০)১৫০(২
১২০
৩০)৬০(২
৬০
০
৬০ ও ১৫০-এর গ.সা.গু. ৩০। অতএব, সর্বাধিক ৩০ জন বালক বালিকার মধ্যে এগুলো নিঃশেষে ভাগ করে দেওয়া যাবে।
এখন, প্রত্যেকে আম পাবে (৬০÷৩০)টি = ২টি
প্রত্যেকে লিচু পাবে (১৫০÷৩০)টি = ৫টি
উত্তর: ৩০ জন, ২টি আম, ৫টি লিচু।
উত্তরমালায় দেওয়া ৩টি লিচুর স্থলে ৫টি লিচু হবে।
প্রশ্ন: কোন বৃহত্তম সংখ্যা দ্বারা ১৩৭, ২১২ ও ৪৫২ কে ভাগ দিলে প্রতি ক্ষেত্রে ২ অবশিষ্ট থাকে?
সমাধান: যে বৃহত্তম সংখ্যা দ্বারা ১৩৭, ২১২ ও ৪৫২ কে ভাগ দিলে প্রতি ক্ষেত্রে ২ অবশিষ্ট থাকে তা হচ্ছে (১৩৭-২) = ১৩৫, (২১২-২) = ২১০ এবং (৪৫২-২) = ৪৫০ এর গ.সা.গু. যত, তত।
এখন, ১৩৫, ২১০ ও ৪৫০-এর গ.সা.গু. নির্ণয় করি।
১৩৫)২১০(১
১৩৫
৭৫)১৩৫(১
৭৫
৬০)৭৫(১
৬০
১৫)৬০(৪
৬০
০
১৩৫ ও ২১০-এর গ.সা.গু. ১৫
আবার, ১৫)৪৫০(৩০
৪৫
০
০
০
সুতরাং ১৩৫, ২১০, ৪৫০-এর গ.সা.গু. ১৫। অতএব, নির্ণেয় বৃহত্তম সংখ্যা ১৫।
উত্তর: ১৫।
thnkq :)
ReplyDeleteগসাগু সম্পর্কে একটা চমৎকার ধারনা পেলাম ।
ReplyDeleteঅসাধারণ আর্টিকেল
ReplyDelete