3.4.12

বাঙলা: তুলনা

তুলনা 
প্রিয় শিক্ষার্থী, অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছাসহ স্বাগত জানাচ্ছি আমাদের আজকের পড়াশোনায়। শেখ ফজলুল করীম রচিত ‘তুলনা’ কবিতা আমাদের আজকের আলোচ্য পাঠ।
আমাদের জাগতিক চলার পথ সুন্দর করার জন্য জ্ঞানী ও মহৎ ব্যক্তির পরামর্শ একান্ত দরকার। জ্ঞানী ব্যক্তির দৃষ্টি অনুসরণ করে আমরাও মহৎ মনের অধিকারী হতে পারি। জ্ঞানীর দৃষ্টিতে পৃথিবীতেই সত্য, পাপ-পুণ্য, ঈর্ষা, প্রকৃত ধনবান কে ইত্যাদির উদাহরণ ছড়িয়ে আছে। একটু গভীর দৃষ্টি দিয়ে তুলনা করলেই তা আমরা বুঝতে পারি। জ্ঞানী ব্যক্তির দৃষ্টিতে সত্য হচ্ছে হিমালয়ের চেয়ে উঁচু এবং অনেক বড় ও মহৎ। তেমনি পৃথিবীতে সবচেয়ে ভারী হচ্ছে নিষ্পাপকে দোষারোপ করা, আর আগুনের উত্তাপের চেয়েও ভয়াবহ হচ্ছে হিংসা ও ঈর্ষা। আর সবচেয়ে ঠান্ডা হচ্ছে প্রীতিহীন হূদয়। জ্ঞানীর দৃষ্টিতে সাগরের চেয়েও সম্পদশালী হচ্ছে অভাববোধহীন তুষ্ট ব্যক্তির হূদয়।
এই ছিল ‘তুলনা’ কবিতার মূল ভাব। এবার এসো, পাঠসম্পৃক্ত কিছু শব্দের অর্থ জেনে নেওয়া যাক। তারপর বাক্য রচনা ও প্রশ্নোত্তর।
প্রশ্ন: নিচের শব্দগুলোর অর্থ লেখো:
প্রবীণ, অন্বেষণে, নিষ্পাপ, অনল, ঈর্ষা, বহ্নিতাপ, তুষ্ট, গরীয়ান।
উত্তর: প্রদত্ত শব্দ শব্দের অর্থ
প্রবীণ প্রাচীন।
অন্বেষণে খোঁজে।
নিষ্পাপ পাপশূন্য।
অনল আগুন।
ঈর্ষা পরশ্রীকাতরতা।
বহ্নিতাপ আগুনের উত্তাপ।
তুষ্ট তৃপ্ত।
গরীয়ান মহান।
প্রশ্ন: নিচের শব্দগুলো ব্যবহার করে সার্থক বাক্য রচনা করো:
ভ্রমণ, মহাজন, জ্ঞানী, নিষ্পাপ, ঈর্ষা, গরীয়ান।
উত্তর: প্রদত্ত শব্দ বাক্য রচনা
ভ্রমণ নৌকা ভ্রমণ খুবই আনন্দদায়ক।
মহাজন মহাজন ব্যক্তি সবার শ্রদ্ধার পাত্র।
জ্ঞান জ্ঞানী লোক সবার প্রিয় পাত্র।
নিষ্পাপ শিশুরা ফুলের মতো নিষ্পাপ।
ঈর্ষা ঈর্ষা করা ভালো নয়।
গরীয়ান আল্লাহ গরীয়ান মহীয়ান।
প্রশ্ন: প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা লেখো: ‘সত্যের চেয়ে উঁচু নাহি কিছু আর’।
উত্তর: আলোচ্য লাইনটি শেখ ফজলুল করীম রচিত ‘তুলনা’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
এখানে সত্যের স্বকীয়তা, সৌন্দর্য ও মহত্বের চিরন্তন গুণের কথা বলা হয়েছে।
সত্য কখনো চাপা থাকে না, সত্যকে হাজার চেষ্টাতেও ঢেকে রাখা যায় না। সত্য নিজ গুণেই প্রকাশিত হয়ে পড়ে। সে জন্য যে ব্যক্তি সত্যনিষ্ঠ তিনি কাউকে ভয় পান না। এ জন্যই বলা হয় সত্যের শির সব সময় উন্নত। সত্য কারও কাছে মাথা নত করে না। সত্যই সুন্দর, সত্যই চির কল্যাণকর। তাই আমাদের জীবনে সত্যের স্থান সব কিছুর ওপরে।

প্রশ্ন: আকাশের চেয়ে উচ্চতা কার বেশি?
উত্তর: জাগতিক দৃষ্টিতে উচ্চতার প্রতীক হিসেবে আমরা আকাশকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কিন্তু বাস্তবতার আলোকে সত্যের উচ্চতা আকাশের চেয়ে বেশি। সত্য কখনো চাপা থাকে না। হাজার চেষ্টাতেও সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না। শত মিথ্যার আবরণ দিয়ে ঢেকে রাখলেও সত্যকে লুকিয়ে রাখা যায় না। সত্য নিজ গুণেই প্রকাশিত হয়ে পড়ে। সে জন্য যে ব্যক্তি সত্যনিষ্ঠ তিনি কাউকে ভয় পান না। এ জন্যই বলা হয়, সত্যের শির সব সময় উন্নত। সত্য কারও কাছে মাথা নত করে না। তাই স্বাভাবিক দৃষ্টিতে আকাশের উচ্চতা অনেক বেশি মনে হলেও জ্ঞানী লোকের দৃষ্টিতে সত্যের স্থান আকাশের চেয়ে আরও অনেক উঁচু স্তরে অবস্থিত।
প্রশ্ন: পৃথিবীর চেয়ে ওজনে ভারী কী?
উত্তর: ‘তুলনা’ কবিতায় কবি শেখ ফজলুল করীম ভারী জিনিস প্রসঙ্গে জ্ঞানী ব্যক্তির উক্তি চমৎকারভাবে উল্লেখ করেছেন। স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মনে হয় বিশাল আকারের এই পৃথিবী বুঝি ওজনে অনেক বেশি ভারী। কিন্তু জ্ঞানী লোকের বিশ্লেষণে, প্রকৃত পক্ষে পৃথিবীর চেয়ে ভারী হচ্ছে নিষ্পাপ মানুষকে মিথ্যা দোষারোপ করা। কারণ, নিষ্পাপ ব্যক্তি সমাজ ও দেশের গৌরব। অকারণে কাউকে কষ্ট দিলে, বিনা দোষে কাউকে দোষী করে শাস্তি দিলে যে পাপ হয় সেই পাপের অপরাধ পৃথিবীর ওজনের চেয়ে অনেক বেশি ভারী হয়ে মানব সমাজকে কলুষিত করে। তাই নিষ্পাপ মানুষকে কখনো দোষ দেওয়া উচিত নয়।
প্রশ্ন: আগুনের চেয়ে কার উত্তাপ বেশি?
উত্তর: আগুন প্রচণ্ড তাপ শক্তির অধিকারী। আগুনের উত্তাপ স্বাভাবিকভাবেই ভয়ংকর। আগুনের লেলিহান শিখায় সবকিছু মুহূর্তে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিন্তু ঈর্ষার উত্তাপ, আগুনের তাপশক্তির চাইতেও বেশি। ঈর্ষার যন্ত্রণা আগুনে পুড়ে যাওয়ার চেয়েও কষ্টকর। ঈর্ষান্বিত ব্যক্তি মনে কখনো সুখ-শান্তি পায় না। অন্যের সুখে সে কষ্ট পায়। এ কারণে কবি ঈর্ষাকে আগুনের চেয়ে ভয়ানক এবং ভয়ংকর হিসেবে তুলনা করেছেন। ঈর্ষার তীব্রতা মানুষের মানবিক গুণাবলি ধ্বংস করে দেয়। কাজেই আগুনের চেয়ে ঈর্ষার উত্তাপ বেশি।
প্রশ্ন: পাথরের চেয়ে শক্ত কী?
উত্তর: আমরা জানি, পাথর অতি কঠিন বস্তু। কিন্তু ‘তুলনা’ কবিতায় শেখ ফজলুল করীম জ্ঞানী ব্যক্তির উক্তির মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন যে পাথরের চেয়েও দৃঢ়, অটল এবং শক্ত হলো সৃষ্টিকর্তার প্রতি অনুগত হূদয়। সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি অনুগত ও ভক্ত ব্যক্তি কখনো অন্যায় কাজ করে না। অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে তাঁর হূদয় সব সময় দৃঢ়, অনড় ও অটল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, যা পাথরের চেয়েও কঠিন। সময় বিশেষে পাথর ভাঙা যায়, কিন্তু স্রষ্টার প্রতি অনুগত হূদয় সর্বদাই অনড়-অটল থাকে।
প্রশ্ন: বরফের চেয়ে শীতল কি কিছু আছে? সেটি কী?
উত্তর: জগতের সবচেয়ে শীতল বস্তু হলো বরফ। কিন্তু বরফের চেয়েও শীতল বস্তু আছে। কবি শেখ ফজলুল করীম ‘তুলনা’ কবিতায় জ্ঞানী ব্যক্তির উক্তির মধ্য দিয়ে বরফের চেয়েও শীতল বস্তুর সন্ধান দিয়েছেন। সেটি হলো আত্মীয়স্বজনবিমুখ ব্যক্তির চরিত্র। যে মানুষ নিজের আত্মীয়স্বজনের প্রতি বিমুখ তার চেয়ে হতভাগা আর কেউ হতে পারে না। সে কারও ভালোবাসা পায় না। আর ভালোবাসাহীন মানুষের হূদয় বরফের চেয়েও ঠান্ডা শীতল।
প্রশ্ন: সাগরের চেয়ে ধনবান কে?
উত্তর: অল্পে তুষ্ট ব্যক্তি সাগরের চেয়ে ধনবান। হাসিখুশি ও সন্তুষ্ট হূদয়ে যে মানুষ সবার সঙ্গে মেলামেশা করে সে সবার প্রিয়পাত্র হয়। সবাই তাকে শ্রদ্ধা করে। ভালোবাসে। সবার ভালোবাসা মানুষের অমূল্য সম্পদ। এই সম্পদ সাগরের মূলবান রত্ন মুক্তার চেয়েও দামি। তাই অল্পতে তৃপ্ত ব্যক্তিই এই জগতে সাগরের চেয়ে ধনবান।

No comments:

Post a Comment