2.9.11

আমরা তাঁদের ভুলব না

প্রশ্ন: কোন সাংবাদিক-সাহিত্যিক সংবাদ অফিসে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে আক্রমণ শুরু করার পর পাকিস্তানি সেনারা কয়েকটি সংবাদপত্র অফিসেও আগুন লাগিয়ে দেয়। প্রতিভাবান সাহিত্যিক ও সাংবাদিক শহীদ সাবের সে সময় ‘সংবাদ’ অফিসে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। যে রাতে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসররা ‘সংবাদ’ অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়, সে রাতে শহীদ সাবের ‘সংবাদ’ কার্যালয়ে ঘুমিয়েছিলেন। আগুনের লেলিহান শিখায় রাতে সেখানেই দগ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
প্রশ্ন: মুনীর চৌধুরী কেন বিখ্যাত ছিলেন?
উত্তর: মুনীর চৌধুরী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক। কৃতী শিক্ষক মুনীর চৌধুরী বিখ্যাত ছিলেন নাটক রচনার জন্য। একজন প্রগতিশীল বস্তুনিষ্ঠ সমালোচক হিসেবেও তিনি সুপরিচিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে এ দেশের স্বাধীনতাবিরোধী কিছু মানুষের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা গোপন হত্যার নীলনকশা অনুযায়ী দেশের যে কয়জন বিশিষ্ট ও প্রতিভাবান ব্যক্তিকে তাঁদের ঢাকার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়, তাঁদেরই একজন মুনীর চৌধুরী।
প্রশ্ন: কোন দিন আমরা ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী’ দিবস পালন করি?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে পাকিস্তানি সেনারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। বুঝতে পারে, তাদের খুব শিগগির পরাজয় ঘটবে। পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে তারা বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি করার ষড়যন্ত্র করে। বেছে নেয় গোপন হত্যার পথ। তাদের নীলনকশা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকার বাড়ি বাড়ি থেকে দেশের বিশিষ্ট ও প্রতিভাবান ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁদের কারও ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া গিয়েছিল মিরপুর বধ্যভূমিতে, কারও কারও লাশও পাওয়া যায়নি। তাঁদের স্মরণে প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বরকে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ হিসেব আমরা পালন করি।
প্রশ্ন: ‘আমরা তাঁদের ভুলবো না’—কাদের ভুলবো না, কেন ভুলবো না?
উত্তর: বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আমাদের চরম মূল্য দিতে হয়েছে। প্রায় নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দান করেছেন এদেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যসহ নানা পেশার মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে এবং মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দেশের খ্যাতনামা বরেণ্য ব্যক্তিদের। পাকিস্তানি সেনারা এ দেশের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দোসরদের সহযোগিতায় নির্মমভাবে হত্যা করেছে দেশের বুদ্ধিজীবীদের। তাই যাঁদের মহান ত্যাগ ও প্রাণদান আমাদের স্বাধীনতার সঙ্গে মিশে আছে, আমরা তাঁদের ভুলবো না। কারণ, তাঁদের মূল্যবান প্রাণের বিনিময়ে, ত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি প্রিয় স্বাধীনতা।
প্রশ্ন: পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কী ষড়যন্ত্র করেছিল?
উত্তর: আমাদের এই বাংলাদেশ একসময় পাকিস্তানের অংশ ছিল। পাকিস্তানের শাসকেরা এ দেশের মানুষের ওপর নানা রকম অত্যাচার ও শোষণ করত। তাই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে দেশের বহু মানুষ শহীদ হন। কিন্তু রণেভঙ্গ দেয় না। বরং তাদের উল্টো মার দেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। দেখতে দেখতে যুদ্ধের প্রায় নয় মাস কেটে যায়। শেষের দিকে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী। পাকিস্তানি সেনারা বিপাকে পড়ে যায়। হয়ে পড়ে কোণঠাসা। তারা বুঝতে পারে, শিগগিরই তাদের পরাজয় ঘটবে। পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি করার ষড়যন্ত্র করেছিল।

No comments:

Post a Comment