বেড়াল ও মোল্লা
মোল্লার মাংস খাওয়ার ইচ্ছা হওয়ায় বাজার থেকে এক সের খাসির মাংস কিনে বাড়িতে এনে বললেন," বেশ ভাল করে রাঁধো অনেকদিন মাংস খাইনি।'
মোল্লাহর বিবিও অনেকদিন মাংস খাননি। রাঁধার পর একটু একটু করে খেতে খেতে সবটা মাংসই খেয়ে ফেললেন তিনি।
মোল্লা খেতে বসলে তাঁর বিবি মুখ কাঁচুমাচু করে বললেন, "আজ আর তোমার বরাতে মাংস নেই, সব মাংস বেড়ালে খেয়ে ফেলেছে।"
'পুরো এক সের মাংসই বেড়াল খেয়ে ফেললো?'
'হ্যাঁ'
মোল্লার সঙ্গে চালাকি? তখনই বেড়ালটাকে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে দেখলেন বেড়ালটার ওজন ঠিক এক সের।
মোল্লা বললেন,"এটাই যদি সেই বেড়াল হয়, সেই মাংস হয়, তাহলে বেড়ালটা গেল কোথায়?'
বিবি বুঝলেন আর যাই হোক মোল্লার সাথে চালাকি করে পার পাওয়া যাবে না।
হেকিম সাহেব
নাসিরুদ্দিন জীবনে অনেক কিছু করেছেন তাই তাঁর অভিজ্ঞতার জুলি অনেক বড়। একবার এক বৃদ্ধের বাড়িতে চাকরের কাজ নিয়েছেন। বৃদ্ধের যা কিছু কাজ তাঁকেই করতে হয়।
সেই বৃদ্ধ একদিন নাসিরুদ্দিনকে ডেকে বললেন, 'তুমি কাজে এত ঢিলে কেন? একবারে যেখানে কয়েকটা কাজ করা যায় তুমি সেখানে বারেবারে করো। এবার থেকে সব কাজ একসঙ্গে করে আসবে, এভাবে সময় নষ্ট করবে না।"
একদিন বৃদ্ধ শয্যা নিলেন। অবস্থা খুবই খারাপ।
তিনি নাসিরুদ্দিনকে বললেন, হেকিমকে ডেকে আনতে।
বৃদ্ধের কথামতো নাসিরুদ্দিন হেকিম ডাকতে বেরোলেন।
বেরিয়েছেন তো বেরিয়েছেন, ফেরার নাম নেই। অনেক সময় কাটিয়ে নাসিরুদ্দিনফিরলেন সঙ্গে অনেক লোকজন নিয়ে।
'কী ব্যাপার? হেকিম কোথায়? এত লোক দিয়ে কি হবে?'
' আজ্ঞে, হেকিম যা চাইবেন তার জন্য লোকের দরকার হবে। আপনার শেষ সময় উপস্থিত হলে কোরআন পড়ার জন্য লোক দরকার হবে। আর আপনার মৃত্যু হলে কবরখানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য লোকের দরকার হবে।'
সুখের সন্ধানে
এক লোকের বউয়ের সাথে খুব ঝগড়াঝাটি হতো। বঊটি ছিলো ভীষণ ঝগড়াটে।কোনদিন সে তার স্বামীকে সুখে থাকতে দিতো না।
একদিন সেই ভদ্রলোক কোন উপায় না দেখে কিছু পয়সা ও জামাকাপড় পোঁটলায় বেঁধে কোথাও চলে যাওয়ার জন্য মনস্থ করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো।
নাসিরুদ্দিন সেই লোকটিকে মুখ ভার করে রাস্তার ধারে এমনভাবে বসে থাকতে দেখে প্রশ্ন করলেন, ' তোমার কী হয়েছে? কেন তুমি এমনভাবে রাস্তার ধারে বসে আছো?'
লোকটি বললো, 'জীবন একেবারে বিষের মত হয়ে গেছে আমার স্ত্রীর জন্য মোল্লা সাহেব! হাতে কিছু পয়সা আছে বটে কিন্তু মনে সুখ নেই। তাই দেশে দেশে ঘুরতে বেরিয়েছি। যেখানে কোন সুখের সন্ধান পাব, সেখানেই থেকে যাবো।'
লোকটির পাশে তার পোঁটলায় টাকাকড়ি জিনিসপত্র সব রাখা ছিলো। তার কথা শেষ হতে না হতেই নাসিরুদ্দিন সেই বোঁচকাটা নিয়ে দৈড়ে পালাতে লাগলেন। মোল্লাকে পোঁটলাটা নিয়ে পালিয়ে যেতে দেখে লোকটিও তার পেছনে প্রাণপণ দৌড়াতে লাগলো। কিন্তু মোল্লা খুব দৌড়াতে পারতেন এবংন বুদ্ধিও আছে- এমন অবস্থায় নাসিরুদ্দিনকে ধরে কার সাধ্য! দেখতে দেখতে তিনি রাস্তা ছেড়ে জঙ্গলে ঢুকে হাওয়া হয়ে গেলেন।
এভাবে লোকটিকে ধোঁকা দিয়ে তিনি আবার সেই রাস্তায় ফিরে পোঁটলাটা রাস্তার মাঝখানে রেখে একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইলেন।
এদিকে লোকটিও কিছুক্ষণ পরে সেখানে এসে হাজির। তাকে এখন আগের চেয়েও বেশি দুঃখিত দেখাচ্ছে। কিন্তু রাস্তায় তার পোঁটলাটি পড়ে আছে দেখে মহা আনন্দে চিৎকার করে পোঁটলার উপর ঝাপিয়ে পড়লো। এতক্ষণে সে যেন প্রাণ ফিরে পেলো।
গাছের আড়াঁল থেকে নাসিরুদ্দিন বেরিয়ে এসে বললেন, "দুঃখীকে সুখের সন্ধান দেয়ার এও একটা উপায় দেখতে পেলাম, কী বলো ভাইয়া।"
এই বলে মোল্লা সাহেব লোকটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন।
নাসিরুদ্দীন হোজ্জা খুব যত্ন করে একটা খাসি পুষতেন। নাদুসনুদুস সেই খাসিটার ওপর পড়শিদের খুব লোভ_আহা! কবে যে এর মাংস খাওয়া যাবে!
একদিন কয়েকজন লোভী পড়শি শলাপরামর্শ করে জোট বেঁধে এল হোজ্জার বাড়িতে। হোজ্জাকে ডেকে বলল, 'ও মোল্লা সাহেব, বড়ই দুঃসংবাদ। আগামীকাল নাকি এ দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। হায়! এত সাধের বাড়িঘর, সহায়সম্পদ, এমনকি তোমার ওই প্রিয় খাসিটাও থাকবে না, সব শেষ হয়ে যাবে।' হোজ্জা বুঝলেন তাদের মতলবখানা কী? তিনি মুচকি হেসে পড়শিদের বললেন, 'তবে খাসিটাকেও ধ্বংস করা হোক। দুনিয়া ধ্বংসের আগে এসো একে জবাই করে খেয়ে ফেলি।'
পড়শিরা তো এ সুযোগের অপেক্ষায়ই ছিল। খাসি জবাই করে মহা ধুমধামে রান্না করে পেট পুরে খেলো। তারপর গায়ের জামা খুলে আরাম করে সবাই ঘুমিয়ে পড়ল হোজ্জারই বৈঠকখানায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাই দেখে তাদের জামা উধাও। খালি গায়ে সারা ঘর তন্নতন্ন করে জামা খুঁজতে লাগল তারা। হোজ্জা তখন বললেন, 'ভাইয়েরা, দুনিয়াই যদি ধ্বংস হয়ে যায়, জামা দিয়ে কী হবে? তাই তোমরা ঘুমানোর পর আমি সবার জামা আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলেছি!'
টকার ঝনঝনানী
একদিন নাসিরউদ্দিন হোজ্জা একটি মিষ্টির দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ মিষ্টির দিকে চোখ পড়াতে তার খেতে ইচ্ছে হলেও টাকা না থাকায় শুধু মিষ্টির ঘ্রাণ নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দায় সাধল দোকানদার। তিনি মিষ্টির ঘ্রাণ নেওয়াতে হোজ্জার কাছে তার দাম চাইলেন। হোজ্জা পরে দিবেন বলে সেদিনের মত চলে আসলেন। পরের দিন তিনি কিছু মুদ্রার কয়েন থলেতে নিয়ে তার দোকানে গেলেন এবং ঝাঁকাতে শুরু করলেন। দোকারদার বললেন দাও আমার টাকা দাও। হোজ্জা উত্তরে বললেন টাকার ঝনঝনানি শুনতে পাচ্ছেন না? দোকারনদার বললেন হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি। হোজ্জা বললেন তো শোধ হয়ে গেল।
কে অপয়া?
শিকারে বেরিয়েছেন রাজা। যাত্রাপথে প্রথমেই পড়ে গেলেন নাসিরুদ্দীন হোজ্জার সামনে। রাজা ক্ষেপে গেলেন। পাইক-পেয়াদারের ডেকে বললেন, 'হোজ্জা একটা অপয়া। যাত্রাপথে ওকে দেখলাম, আজ নির্ঘাত আমার শিকার পণ্ড। ওকে চাবুক মেরে দূর করে দাও।'
রাজার হুকুম তামিল হলো। কিন্তু সেদিন রাজার শিকারও জমে উঠলো বেশ। গুণে গুণে ছাবি্বশটা নাদুসনুদুস হরিণ মারলেন তিনি।
প্রাসাদে ফিরে রাজা অনুতপ্ত হয়ে ডেকে পাঠালেন হোজ্জাকে। হোজ্জা দরবারে আসতেই রাজা বললেন, 'কিছু মনে কোরো না, আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি অপয়া, আমার শিকার জুটবে না। কিন্তু এখন দেখছি আমার ধারণা উল্টো।'
'উল্টো তো বটেই।' এবার মওকা পেয়ে হোজ্জাও রাগ দেখাল। 'আপনি আমাকে অপয়া ভেবেছিলেন। অথচ দেখুন, আমাকে দেখার পর আপনি ছাবি্বশটা হরিণ পেলেন, আর আপনাকে দেখে আমি খেলাম বিশ ঘা চাবুক। তাহলে অপয়া যে কে, সেটা বুঝতে পেরেছেন তো?'
মূর্খ!
এক তর্কবাগীশের সঙ্গে কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দিল নাসিরুদ্দীন হোজ্জার। শেষে স্থির হলো দুজনের মধ্য ওই বিষয়ে তর্কযুদ্ধ হবে। যে জিতবে, তার মতটাকেই মেনে নিতে হবে অপরজনকে। এরপর তর্কবাগীশ যতই হোজ্জাকে খুঁজেন, হোজ্জা ততই পালিয়ে বেড়াতে লাগলেন। শেষে রেগেমেগে তর্ববাগীশ খবর পাঠালেন তিনি হোজ্জার বাড়িতেই যাবেন বিতর্কের মাধ্যমে ব্যাপারটার ফয়সালা করে ফেলতে। নির্দিষ্ট দিনে এসে দেখেন- হোজ্জা আগেই কেটে পড়েছেন, সদর দরজায় তোলা। মহা বিরক্ত হয়ে তর্কবাগীশ দরজার উপরে চক দিয়ে বড় করে লিখে গেলেন 'মূর্খ'।
সারা দিন টো টো করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলেন হোজ্জা। দরজার দিকে চোখ পড়তেই তিনি জিভ কাটলেন। তারপর সোজা দৌড়ে গেলেন তর্কবাগীশের বাড়ি। বিনয়ের সঙ্গে বললেন, 'মাফ করবেন পণ্ডিতমশাই, আমি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম যে আপনি আমার বাড়িতে আসবেন। মনে থাকলে কী আর বাইরে বেরোই? কিন্তু দিনের শেষে বাড়ি ফিরে দেখি আমার দরজায় আপনার নামটা লিখে এসেছেন। তখুনি আমার মনে পড়ল আপনার কথা!'
মোল্লার মাংস খাওয়ার ইচ্ছা হওয়ায় বাজার থেকে এক সের খাসির মাংস কিনে বাড়িতে এনে বললেন," বেশ ভাল করে রাঁধো অনেকদিন মাংস খাইনি।'
মোল্লাহর বিবিও অনেকদিন মাংস খাননি। রাঁধার পর একটু একটু করে খেতে খেতে সবটা মাংসই খেয়ে ফেললেন তিনি।
মোল্লা খেতে বসলে তাঁর বিবি মুখ কাঁচুমাচু করে বললেন, "আজ আর তোমার বরাতে মাংস নেই, সব মাংস বেড়ালে খেয়ে ফেলেছে।"
'পুরো এক সের মাংসই বেড়াল খেয়ে ফেললো?'
'হ্যাঁ'
মোল্লার সঙ্গে চালাকি? তখনই বেড়ালটাকে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে দেখলেন বেড়ালটার ওজন ঠিক এক সের।
মোল্লা বললেন,"এটাই যদি সেই বেড়াল হয়, সেই মাংস হয়, তাহলে বেড়ালটা গেল কোথায়?'
বিবি বুঝলেন আর যাই হোক মোল্লার সাথে চালাকি করে পার পাওয়া যাবে না।
হেকিম সাহেব
নাসিরুদ্দিন জীবনে অনেক কিছু করেছেন তাই তাঁর অভিজ্ঞতার জুলি অনেক বড়। একবার এক বৃদ্ধের বাড়িতে চাকরের কাজ নিয়েছেন। বৃদ্ধের যা কিছু কাজ তাঁকেই করতে হয়।
সেই বৃদ্ধ একদিন নাসিরুদ্দিনকে ডেকে বললেন, 'তুমি কাজে এত ঢিলে কেন? একবারে যেখানে কয়েকটা কাজ করা যায় তুমি সেখানে বারেবারে করো। এবার থেকে সব কাজ একসঙ্গে করে আসবে, এভাবে সময় নষ্ট করবে না।"
একদিন বৃদ্ধ শয্যা নিলেন। অবস্থা খুবই খারাপ।
তিনি নাসিরুদ্দিনকে বললেন, হেকিমকে ডেকে আনতে।
বৃদ্ধের কথামতো নাসিরুদ্দিন হেকিম ডাকতে বেরোলেন।
বেরিয়েছেন তো বেরিয়েছেন, ফেরার নাম নেই। অনেক সময় কাটিয়ে নাসিরুদ্দিনফিরলেন সঙ্গে অনেক লোকজন নিয়ে।
'কী ব্যাপার? হেকিম কোথায়? এত লোক দিয়ে কি হবে?'
' আজ্ঞে, হেকিম যা চাইবেন তার জন্য লোকের দরকার হবে। আপনার শেষ সময় উপস্থিত হলে কোরআন পড়ার জন্য লোক দরকার হবে। আর আপনার মৃত্যু হলে কবরখানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য লোকের দরকার হবে।'
সুখের সন্ধানে
এক লোকের বউয়ের সাথে খুব ঝগড়াঝাটি হতো। বঊটি ছিলো ভীষণ ঝগড়াটে।কোনদিন সে তার স্বামীকে সুখে থাকতে দিতো না।
একদিন সেই ভদ্রলোক কোন উপায় না দেখে কিছু পয়সা ও জামাকাপড় পোঁটলায় বেঁধে কোথাও চলে যাওয়ার জন্য মনস্থ করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো।
নাসিরুদ্দিন সেই লোকটিকে মুখ ভার করে রাস্তার ধারে এমনভাবে বসে থাকতে দেখে প্রশ্ন করলেন, ' তোমার কী হয়েছে? কেন তুমি এমনভাবে রাস্তার ধারে বসে আছো?'
লোকটি বললো, 'জীবন একেবারে বিষের মত হয়ে গেছে আমার স্ত্রীর জন্য মোল্লা সাহেব! হাতে কিছু পয়সা আছে বটে কিন্তু মনে সুখ নেই। তাই দেশে দেশে ঘুরতে বেরিয়েছি। যেখানে কোন সুখের সন্ধান পাব, সেখানেই থেকে যাবো।'
লোকটির পাশে তার পোঁটলায় টাকাকড়ি জিনিসপত্র সব রাখা ছিলো। তার কথা শেষ হতে না হতেই নাসিরুদ্দিন সেই বোঁচকাটা নিয়ে দৈড়ে পালাতে লাগলেন। মোল্লাকে পোঁটলাটা নিয়ে পালিয়ে যেতে দেখে লোকটিও তার পেছনে প্রাণপণ দৌড়াতে লাগলো। কিন্তু মোল্লা খুব দৌড়াতে পারতেন এবংন বুদ্ধিও আছে- এমন অবস্থায় নাসিরুদ্দিনকে ধরে কার সাধ্য! দেখতে দেখতে তিনি রাস্তা ছেড়ে জঙ্গলে ঢুকে হাওয়া হয়ে গেলেন।
এভাবে লোকটিকে ধোঁকা দিয়ে তিনি আবার সেই রাস্তায় ফিরে পোঁটলাটা রাস্তার মাঝখানে রেখে একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইলেন।
এদিকে লোকটিও কিছুক্ষণ পরে সেখানে এসে হাজির। তাকে এখন আগের চেয়েও বেশি দুঃখিত দেখাচ্ছে। কিন্তু রাস্তায় তার পোঁটলাটি পড়ে আছে দেখে মহা আনন্দে চিৎকার করে পোঁটলার উপর ঝাপিয়ে পড়লো। এতক্ষণে সে যেন প্রাণ ফিরে পেলো।
গাছের আড়াঁল থেকে নাসিরুদ্দিন বেরিয়ে এসে বললেন, "দুঃখীকে সুখের সন্ধান দেয়ার এও একটা উপায় দেখতে পেলাম, কী বলো ভাইয়া।"
এই বলে মোল্লা সাহেব লোকটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন।
প্রলয়কাণ্ড
নাসিরুদ্দীন হোজ্জা খুব যত্ন করে একটা খাসি পুষতেন। নাদুসনুদুস সেই খাসিটার ওপর পড়শিদের খুব লোভ_আহা! কবে যে এর মাংস খাওয়া যাবে!
একদিন কয়েকজন লোভী পড়শি শলাপরামর্শ করে জোট বেঁধে এল হোজ্জার বাড়িতে। হোজ্জাকে ডেকে বলল, 'ও মোল্লা সাহেব, বড়ই দুঃসংবাদ। আগামীকাল নাকি এ দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। হায়! এত সাধের বাড়িঘর, সহায়সম্পদ, এমনকি তোমার ওই প্রিয় খাসিটাও থাকবে না, সব শেষ হয়ে যাবে।' হোজ্জা বুঝলেন তাদের মতলবখানা কী? তিনি মুচকি হেসে পড়শিদের বললেন, 'তবে খাসিটাকেও ধ্বংস করা হোক। দুনিয়া ধ্বংসের আগে এসো একে জবাই করে খেয়ে ফেলি।'
পড়শিরা তো এ সুযোগের অপেক্ষায়ই ছিল। খাসি জবাই করে মহা ধুমধামে রান্না করে পেট পুরে খেলো। তারপর গায়ের জামা খুলে আরাম করে সবাই ঘুমিয়ে পড়ল হোজ্জারই বৈঠকখানায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাই দেখে তাদের জামা উধাও। খালি গায়ে সারা ঘর তন্নতন্ন করে জামা খুঁজতে লাগল তারা। হোজ্জা তখন বললেন, 'ভাইয়েরা, দুনিয়াই যদি ধ্বংস হয়ে যায়, জামা দিয়ে কী হবে? তাই তোমরা ঘুমানোর পর আমি সবার জামা আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলেছি!'
টকার ঝনঝনানী
একদিন নাসিরউদ্দিন হোজ্জা একটি মিষ্টির দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ মিষ্টির দিকে চোখ পড়াতে তার খেতে ইচ্ছে হলেও টাকা না থাকায় শুধু মিষ্টির ঘ্রাণ নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দায় সাধল দোকানদার। তিনি মিষ্টির ঘ্রাণ নেওয়াতে হোজ্জার কাছে তার দাম চাইলেন। হোজ্জা পরে দিবেন বলে সেদিনের মত চলে আসলেন। পরের দিন তিনি কিছু মুদ্রার কয়েন থলেতে নিয়ে তার দোকানে গেলেন এবং ঝাঁকাতে শুরু করলেন। দোকারদার বললেন দাও আমার টাকা দাও। হোজ্জা উত্তরে বললেন টাকার ঝনঝনানি শুনতে পাচ্ছেন না? দোকারনদার বললেন হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি। হোজ্জা বললেন তো শোধ হয়ে গেল।
কে অপয়া?
শিকারে বেরিয়েছেন রাজা। যাত্রাপথে প্রথমেই পড়ে গেলেন নাসিরুদ্দীন হোজ্জার সামনে। রাজা ক্ষেপে গেলেন। পাইক-পেয়াদারের ডেকে বললেন, 'হোজ্জা একটা অপয়া। যাত্রাপথে ওকে দেখলাম, আজ নির্ঘাত আমার শিকার পণ্ড। ওকে চাবুক মেরে দূর করে দাও।'
রাজার হুকুম তামিল হলো। কিন্তু সেদিন রাজার শিকারও জমে উঠলো বেশ। গুণে গুণে ছাবি্বশটা নাদুসনুদুস হরিণ মারলেন তিনি।
প্রাসাদে ফিরে রাজা অনুতপ্ত হয়ে ডেকে পাঠালেন হোজ্জাকে। হোজ্জা দরবারে আসতেই রাজা বললেন, 'কিছু মনে কোরো না, আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি অপয়া, আমার শিকার জুটবে না। কিন্তু এখন দেখছি আমার ধারণা উল্টো।'
'উল্টো তো বটেই।' এবার মওকা পেয়ে হোজ্জাও রাগ দেখাল। 'আপনি আমাকে অপয়া ভেবেছিলেন। অথচ দেখুন, আমাকে দেখার পর আপনি ছাবি্বশটা হরিণ পেলেন, আর আপনাকে দেখে আমি খেলাম বিশ ঘা চাবুক। তাহলে অপয়া যে কে, সেটা বুঝতে পেরেছেন তো?'
মূর্খ!
এক তর্কবাগীশের সঙ্গে কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দিল নাসিরুদ্দীন হোজ্জার। শেষে স্থির হলো দুজনের মধ্য ওই বিষয়ে তর্কযুদ্ধ হবে। যে জিতবে, তার মতটাকেই মেনে নিতে হবে অপরজনকে। এরপর তর্কবাগীশ যতই হোজ্জাকে খুঁজেন, হোজ্জা ততই পালিয়ে বেড়াতে লাগলেন। শেষে রেগেমেগে তর্ববাগীশ খবর পাঠালেন তিনি হোজ্জার বাড়িতেই যাবেন বিতর্কের মাধ্যমে ব্যাপারটার ফয়সালা করে ফেলতে। নির্দিষ্ট দিনে এসে দেখেন- হোজ্জা আগেই কেটে পড়েছেন, সদর দরজায় তোলা। মহা বিরক্ত হয়ে তর্কবাগীশ দরজার উপরে চক দিয়ে বড় করে লিখে গেলেন 'মূর্খ'।
সারা দিন টো টো করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলেন হোজ্জা। দরজার দিকে চোখ পড়তেই তিনি জিভ কাটলেন। তারপর সোজা দৌড়ে গেলেন তর্কবাগীশের বাড়ি। বিনয়ের সঙ্গে বললেন, 'মাফ করবেন পণ্ডিতমশাই, আমি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম যে আপনি আমার বাড়িতে আসবেন। মনে থাকলে কী আর বাইরে বেরোই? কিন্তু দিনের শেষে বাড়ি ফিরে দেখি আমার দরজায় আপনার নামটা লিখে এসেছেন। তখুনি আমার মনে পড়ল আপনার কথা!'
It is a very good post. Thanks for sharing a good post.
ReplyDeletehttps://granthoshala.blogspot.com/
ReplyDelete