2.9.11

শহীদ তিতুমীর

প্রশ্ন-ক : ‘তিতুমীর’ নামটি কেমন করে হল? তার প্রকৃত নাম কী?
উত্তর : ‘শহীদ তিতুমীর’ শীর্ষক রচনাটিতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথম শহীদ তিতুমীর-এর জীবনী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। রচনাটির প্রথমেই তিতুমীরের নামকরণের পেছনে যে মজার কাহিনীটি রয়েছে তা বর্ণনা করা হয়েছে।
শিশুকালে তিতুমীরের একবার কঠিন অসুখ হয়েছিল। রোগ সারানোর জন্য তাকে দেওয়া হয়েছিল ভীষণ তেতো ওষুধ। এমন তেতো ওষুধ শিশু বা বৃদ্ধ কেউই মুখে নেবে না। অথচ শিশু তিতুমীর বেশ খুশিতেই দশ বার দিন এই তেতো ওষুধ খেয়েছিল। তেতো খেতে তার আনন্দ। তাই বাড়ির সবাই অবাক হয়ে তার ডাক নাম রেখেছিল তেতো। তেতো থেকে তিতু। তিতুর সঙ্গে মীর লাগিয়ে তিতুমীর নাম রাখা হয়েছিল।
তিতুমীরের প্রকৃত নাম : তিতুমীর নামেই তাকে সবাই চিনলেও এটি ছিল তার ডাক নাম। তার প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী।
প্রশ্ন-খ : তিতুমীরের যখন জন্ম, তখন এ দেশ কাদের অধীনে ছিল?
উত্তর : ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাযুদ্ধে বীর নায়ক তিতুমীরই হলেন বাংলার প্রথম শহীদ। তার যখন জন্ম হয় তখন বাংলাদেশসহ পুরো ভারতবর্ষ ইংরেজদের অধীনে ছিল।
প্রশ্ন-গ : তিতুমীর ছোটবেলায় ডনকুস্তি আর ব্যায়াম শিখেছিলেন কেন?
উত্তর : ‘শহীদ তিতুমীর’ শীর্ষক রচনায় তিতুমীরের জীবনের যে সংক্ষিপ্ত বিবরণ আমরা পাই সেখানে আমরা জানতে পারি যে তিতুমীর ছোটবেলায় ডনকুস্তি ও ব্যায়াম শিখেছিলেন।
বাংলাদেশসহ পুরো ভারতবর্ষ যখন ইংরেজদের অধীন তখন একদিকে চলত ইংরেজদের অত্যাচার আর অন্যদিকে ছিল জমিদারদের জুলুম। এ সময় তিতুমীরের জন্ম হয়েছিল। শান্ত ও ধীর স্বভাবের তিতুমীর ভাবতেন-কীভাবে এসব অত্যাচার হতে মুক্তি পাওয়া যাবে? সে সময় গ্রামে ইংরেজ তাড়ানোর জন্য গায়ে শক্তি সঞ্চয় করার উদ্দেশ্যে ডনকুস্তি ও শরীরচর্চার ব্যায়াম হতো। মুষ্টিযুদ্ধ, তীর ছোড়া ও অসি চালনাও শেখানো হতো। এটি তার জন্য ছিল একটি সুযোগ। এই সুযোগে ইংরেজদের তাড়িয়ে দেশ মুক্ত করার জন্য তিনি ডনকুস্তি ও ব্যায়াম শিখেছিলেন। তিনি ডনকুস্তি শিখে কুস্তিগির ও পালোয়ান হিসেবেও নাম করেছিলেন।
প্রশ্ন-ঘ : শহীদ তিতুমীর কেন অমর হয়ে আছেন?
উত্তর : ‘শহীদ তিতুমীর’ রচনাটিতে তিতুমীরের সংগ্রামী জীবনের বর্ণনা করা হয়েছে। তিতুমীর ছিলেন বীর। তার বীরত্বই তাকে অমরত্ব দিয়েছে।
ইংরেজ শোষণ শিশু তিতুমীরের মনে ভীষণভাবে কষ্ট দিয়েছিল। তাই ছোটবেলা থেকেই তার মনে প্রতিবাদী মনোভাব গড়ে ওঠে। বড় হয়ে তিনি দেশে নিরস্ত্র দুর্বল মানুষগুলোকে মানসিক শক্তি দিয়ে প্রতিবাদী করে তোলেন। মাত্র চার-পাঁচ হাজার স্বাধীনতাপ্রিয় সৈনিক নিয়ে গোলাবারুদ ছাড়াই নারিকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লায় যুদ্ধ করেছিলেন। ইংরেজদের ছিল সেনাবহর ও গোলন্দাজ বাহিনী। তাই ইংরেজ সেনাদের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত তারা রুখে দাঁড়াতে পারলেন না। বীর তিতুমীর শহীদ হলেন। তার সঙ্গে আরও অসংখ্য মুক্তিকামী বীর সৈনিক শহীদ হয়েছিলেন। ২৫০ জন্য সৈন্য ইংরেজদের হাতে বন্দি হয়েছিল। এভাবেই শেষ হয়েছিল তিতুমীরের যুদ্ধ।
আজ থেকে প্রায় পৌনে দুশ বছর আগে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য তিতুমীর প্রথম যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। বীর তিতুমীর তার বীরত্বের জন্যই ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন।
প্রশ্ন: নারকেলবাড়িয়া কোথায়? এখানে তিতুমীর কী তৈরি করলেন?
উত্তর: নারকেলবাড়িয়া বারাসাতে অবস্থিত। ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের শুরুতে তিতুমীরের ওপর অত্যাচার শুরু হয়। নিজ গ্রাম ছেড়ে তিনি বারাসাতের নারকেলবাড়িয়ায় চলে যান। নারকেলবাড়িয়ার লোকজন তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন। হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এখানে তিতুমীর এক দুর্ভেদ্য বাঁশের দুর্গ তৈরি করলেন। এই দুর্গ নারকেলবাড়িয়ার ‘বাঁশের কেল্লা’ নামে পরিচিত।
প্রশ্ন: কত সালে তিতুমীরের কাছে ইংরেজ শক্তি পরাজিত হয়?
উত্তর: নারকেলবাড়িয়ায় তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা তৈরি এবং সেখানে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করার কৌশল ও প্রস্তুতির খবর ইংরেজ শাসকেরা জেনে যায়। ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারকে পাঠানো হয় তিতুমীরকে দমন করার জন্য। ১৮৩০ সালে আলেকজান্ডার তাঁর সিপাহি বাহিনী নিয়ে তিতুমীরের কাছে পরাজিত হন। ১৮৩০ সালে তিতুমীরের কাছে ইংরেজ শক্তি পরাজিত হওয়ার পর তিতুমীর কয়েকটি নীলকুঠি দখল করে নেন।
প্রশ্ন: তিতুমীর কীভাবে শহীদ হলেন?
উত্তর: ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর ভারতবর্ষের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক তিতুমীরকে শায়েস্তা করার জন্য এক বিরাট সেনাবহর এবং গোলন্দাজ বাহিনী পাঠান। এর নেতৃত্বে ছিলেন সেনাপতি কর্নেল স্টুয়ার্ড। ভোর হওয়ার আগেই স্টুয়ার্ড বাহিনী তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা আক্রমণ করে। স্টুয়ার্ডের ছিল হাজার হাজার প্রশিক্ষিত সৈন্য আর অজস্র গোলাবারুদ। তিতুমীরের ছিল মাত্র চার-পাঁচ হাজার স্বাধীনতাপ্রিয় সৈনিক। এঁদের কাছে কামান, গোলাবারুদ, বন্দুক কিছুই ছিল না। তবে মনে ছিল তাঁদের পরাধীন দেশকে স্বাধীন করার অমিত তেজ। তিতুমীর আর তাঁর বীর সৈনিকেরা প্রাণপণ যুদ্ধ করলেন। কিন্তু ইংরেজ বাহিনীর সামনে টিকতে পারলেন না। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইংরেজ সৈনিকদের গোলার আঘাতে ছারখার হয়ে গেল নারকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লা। শহীদ হলেন অসংখ্য মুক্তিকামী বীর সৈনিক। শহীদ হলেন বীর তিতুমীর।
আজ থেকে প্রায় পৌনে দুশ বছর আগে তিতুমীর পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যুদ্ধে বীর তিতুমীরই হলেন বাংলার প্রথম শহীদ।

No comments:

Post a Comment