7.8.12

সমাজ: অধ্যায়-১২


অধ্যায়-১২

প্রিয় শিক্ষার্থী, আলোচ্যসূচিতে আজ রয়েছে পরিবেশ পরিচিতি সমাজ বিষয়ের অধ্যায় ১২ থেকে প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা।
 নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।n
প্রশ্ন: বারভূঁইয়া বলতে কী বোঝায়? কয়েকজন বারভূঁইয়ার নাম লেখো।
উত্তর: দাউদ কররানিকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে বাংলায় মোগল শাসনের সূচনা হয়। দিল্লির সম্রাট আকবর সমগ্র বাংলার ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিম ও উত্তর বাংলার বেশ কিছু অঞ্চল বড় বড় জমিদারদের অধিকারে ছিল। তাঁরা নিজ নিজ জমিদারিতে স্বাধীন ছিলেন। তাঁদের শক্তিশালী সেনাদল ও নৌবাহিনী ছিল।
তাঁরা বারভূঁইয়া নামে পরিচিত। এ বার বলতে ১২ জনের সংখ্যা বোঝায় না। সমসাময়িক ঐতিহাসিকেরা বারভূঁইয়া ও তাঁদের নেতার কথা বলেছেন। অর্থাৎ নেতাসহ বারভূঁইয়া ১৩ জন। তা ছাড়া সম্রাট আকবরের সময়ের বারভূঁইয়া এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলের বারভূঁইয়া হুবহু একই ব্যক্তিরা ছিলেন না।
কয়েকজন উল্লেখযোগ্য বারভূঁইয়া: ঈশা খান, রাজা প্রতাপাদিত্য, চাঁদ রায়, কেদার রায়, মুসা খান, ফতেহ খান প্রমুখ। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিলেন সোনারগাঁয়ের জমিদার ঈসা খান ও তাঁর পুত্র মুসা খান।
প্রশ্ন: মোগল আমলে বাংলায় বারভূঁইয়াদের শাসন সম্পর্কে লেখো।
উত্তর: দাউদ কররানিকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে বাংলায় মোগল শাসনের সূচনা হয়। কিন্তু দিল্লির সম্রাট আকবর বাংলার সমগ্র এলাকার ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিম ও উত্তর বাংলার বেশ কিছু অঞ্চল বড় বড় জমিদারদের অধিকারে ছিল। অধিকাংশ জমিদারই আকবর তথা মোগলদের অধিকার মেনে নেননি। তাঁরা নিজ নিজ জমিদারিতে স্বাধীন ছিলেন। তাঁদের শক্তিশালী সেনাদল ও নৌবাহনী ছিল।
তাঁরা বারভূঁইয়া নামে পরিচিত। এ বার বলতে ১২ জনের সংখ্যা বোঝায় না। সমসাময়িক ঐতিহাসিকেরা বারভূঁইয়া ও তাঁদের নেতার কথা বলেছেন। অর্থাৎ, নেতাসহ বারভূঁইয়া ১৩ জন। তা ছাড়া সম্রাট আকবরের সময়ের বারভূঁইয়া এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলের বারভূঁইয়া হুবহু একই ব্যক্তিরা ছিলেন না।
বাংলার বারভূঁইয়াদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ঈশা খান, রাজা প্রতাপাদিত্য, চাঁদ রায়, কেদার রায়, মুসা খান, ফতেহ খান প্রমুখ। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিলেন সোনারগাঁয়ের জমিদার ঈসা খান ও তাঁর পুত্র মুসা খান। আকবরের আমলে ঈসা খানকে দমনের জন্য একাধিকবার চেষ্টা চালানো হয়। আকবরের অন্যতম সেনাপতি মানসিংহ তাঁর হাতে পরাজিত হন। ঈসা খান শেষের দিকে মোগলদের প্রতি সদ্ভাব বজায় রেখেছিলেন।
ঈসা খানের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মুসা খান বারভূঁইয়াদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। অন্যদিকে সম্রাট আকবরের পর দিল্লির সম্রাট হন জাহাঙ্গীর। তিনি ইসলাম খানকে সুবাদার নিয়োগ করে বাংলায় পাঠান। তিনিই শেষ পর্যন্ত মুসা খানকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। মুসা খানকে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলায় বারভূঁইয়াদের কর্তৃত্বের অবসান ঘটে এবং বাংলায় মোগল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন: হোসেন শাহি আমলকে বাংলায় মুসলমান শাসনের স্বর্ণযুগবলা হয় কেন?
উত্তর: হাবশি শাসন উচ্ছেদ করে ১৪৯৩ সালে বাংলার সিংহাসনে বসেন সৈয়দ হোসেন। সুলতান হয়ে তিনি আলাউদ্দিন হোসেন শাহ উপাধি গ্রহণ করেন। এভাবেই বাংলায় হোসেন শাহি বংশের শাসনপর্ব শুরু হয়। বাংলায় স্বাধীন সুলতানদের মধ্যে হোসেন শাহি আমল ছিল সবচেয়ে কৃতিত্বের যুগ। হোসেন শাহ ছিলেন এ যুগের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তিনি বিহারের বিস্তীর্ণ এলাকা জয় করেন। তিনি ছিলেন প্রজাদরদি ও বহুগুণের অধিকারী। তাঁর আমলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনেক উন্নতি হয়।
শ্রীচৈতন্য তাঁর শাসনামলে বৈষ্ণবধর্ম প্রচার করেন। হোসেন শাহের পর এ বংশের আরও তিনজন সুলতান বাংলা শাসন করেন। তাঁরা সবাই যোগ্য শাসক ছিলেন। তাঁরা হোসেন শাহের মতো উদারভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। সবাই শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এ জন্য হোসেন শাহি আমলকে বাংলায় মুসলমানদের শাসনের স্বর্ণযুগ বলা হয়।
প্রশ্ন: ইবনে বতুতার বিবরণ থেকে কী জানা যায়?
উত্তর: উত্তর আফ্রিকার বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা সুলতানি আমলে বাংলা সফর করেন। তাঁর বিবরণ থেকে বাংলার মানুষের পোশাক, অলংকার ও খাদ্য সম্পর্কে নিম্নলিখিত তথ্যগুলো জানা যায়:
# ধনী মুসলমান পরিবারে পুরুষদের সাধারণ পোশাক ছিল ইজার (পাজামা) ও লম্বা জামা। জামায় থাকত গলাবন্ধ এবং কোমরে বাঁধা থাকত উজ্জ্বল ফিতা। মাথায় পাগড়ি পরার রেওয়াজ ছিল। পায়ে কারুকাজখচিত চামড়ার জুতা ও মোজা ব্যবহার করা হতো। মধ্যবিত্ত মুসলমান পুরুষেরা পাজামা, জামা, পাগড়ি ও জুতা ব্যবহার করতেন। সাধারণ মুসলিম পুরুষেরা পরিধান করতেন লুঙ্গি ও ফতুয়া। তাঁরা মাথায় টুপি পরতেন। সালোয়া-কামিজ ও দামি শাড়ি ছিল অভিজাত মুসলিম নারীদের পোশাক। তাঁরা দামি ওড়না ব্যবহার করতেন। স্বল্প আয়ের নারীরা শাড়ি পরতেন।
# অভিজাত হিন্দু পুরুষ ও রমণীরা জাঁকজমকপূর্ণ ও রুচিসম্মত পোশাক পরতেন। সাধারণ হিন্দুরা ধুতি ও চাদর ব্যবহার করতেন। হাঁটু পর্যন্ত লম্বা একধরনের জামাও তাঁরা ব্যবহার করতেন। এ জামার নাম ছিল অঙ্গরাখি। জুতার বদলে তাঁরা পায়ে খড়ম ব্যবহার করতেন। নিম্ন শ্রেণীর হিন্দুরা শুধু একপ্রস্থ ধুতি পরতেন। হিন্দু নারীদের সাধারণ পোশাক ছিল শাড়ি। পুরুষ-নারী সবাই অলংকার পছন্দ করতেন, তবে অলংকার বেশি প্রিয় ছিল নারীদের। সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের অলংকার ব্যবহূত হতো।
# গ্রামের মানুষ সাধারণ পোশাক পরত। জুতা-মোজার ব্যবহার ছিল, তবে সবার মধ্যে নয়। সাধারণ মানুষ পায়ে কাঠের খড়ম পরত।
# ভাত, মাছ, তরকারি ও ডাল ছিল জনপ্রিয় খাবার। উৎসব-অনুষ্ঠানে মাংস পরিবেশনের রেওয়াজ ছিল। তা ছাড়া লোকজন দুধ, দই, ছানা, মিষ্টি, পায়েস ও ক্ষীর খেতে ভালোবাসত। খাওয়া-দাওয়া শেষে পান খাওয়ার চল ছিল।

প্রশ্ন: বাংলায় সুবাদারি শাসন সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর: ১৬১০ সালে সুবাদার ইসলাম খান বারভূঁইয়াদের দমন করে সারা বাংলায় সুবাদারি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলা মোগল সাম্রাজ্যের একটি সুবা বা প্রদেশে পরিণত হয়। সুবাদার হিসেবে নিয়োগ লাভের পর তিনি বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরের নামানুসারে তিনি ঢাকার নাম রাখেনজাহাঙ্গীরনগর। তাঁর পরে যাঁরা বাংলার সুবাদার হন, তাঁদের মধ্যে মির জুমলা, শায়েস্তা খান, মুর্শিদকুলি খান প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শায়েস্তা খান ১৬৬৬ সালে চট্টগ্রাম দখল করেন। এর ফলে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ পর্তুগিজ ও মগ জলদস্যুদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পায়। তিনি বাংলা সুবা থেকে ইংরেজ বণিকদের বিতাড়িত করেন। তাঁর আমলে বাংলায় জিনিসপত্রের দাম খুব সস্তা ছিল। সে সময় টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত। মুর্শিদকুলি খান এ দেশের রাজস্ব সংস্কারের জন্য খ্যাতিমান হয়ে আছেন। তিনি তৎকালীন দুর্বল মোগল সম্রাটের প্রতি ছিলেন নামমাত্র অনুগত। তাঁর সময় থেকেই সুবাকে নিযামত, সুবাদারকে নাজিম বা নবাব বলা হয়ে থাকে এবং বাংলা সুবাদারি বংশগত হয়ে পড়ে।

No comments:

Post a Comment