8.8.12

বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল

বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল

(এই রচনার অনুসরণে লেখা যায়: একজন বীরশ্রেষ্ঠ / একজন মুক্তিযোদ্ধা)

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। বাংলাদেশ একসময় পাকিস্তান রাষ্ট্রের একটি অংশ ছিল। তখন পাকিস্তানিরা এ দেশকে শাসন করেছে, শোষণ করেছে। সেই দুঃশাসন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল ১৯৭১ সালে। এ যুদ্ধে বাংলাদেশের যেসব মানুষ অংশ নিয়েছিলেন, প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন, তাঁদের বলা হয় মুক্তিযোদ্ধা। মোস্তফা কামাল তাঁদেরই একজন। দেশকে মুক্ত করার জন্য তিনি যে সাহস ও বীরত্ব দেখিয়েছিলেন, তার তুলনা হয় না। তাই তাঁর বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে।
জন্ম:
মোস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান থানার হাজিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হাবিবুর রহমান। মোস্তফার পিতা ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন হাবিলদার।
ছেলেবেলা:
মোস্তফা কামালের ছেলেবেলা কাটে মা-বাবার সঙ্গে কুমিল্লা সেনানিবাসে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন খুব সাহসী ও ডানপিটে। বেশি লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি তাঁর। মাত্র পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছিলেন।
সৈনিক হওয়ার বাসনা:
বাবা সৈনিক হওয়ার কারণে মোস্তফা কামালের ছেলেবেলা কাটে কুমিল্লা সেনানিবাসে। এখানে তিনি সৈনিকদের সুশৃঙ্খল জীবনের সঙ্গে পরিচিত হন। ব্যান্ডের তালে তালে পা ফেলে প্রতিদিন কুচকাওয়াজ করতে করতে সেনারা এগিয়ে যেত। কিশোর মোস্তফা কামাল দেখতেন আর ভাবতেন, একদিন আমিও একজন সৈনিক হব।
সেনাবাহিনীতে যোগদান:
মোস্তফা কামাল ১৯৬৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৮ সালে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে নিয়োগ লাভ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ:
২৬ মার্চ ১৯৭১ সাল। মুক্তিযুদ্ধের সূচনা পর্ব। এ সময় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অস্থায়ী সদর দপ্তর আখাউড়ায় কর্মরত ছিলেন মোস্তফা কামাল। ২৭ মার্চ তারিখে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বাংলার যেসব সূর্যসন্তানেরা পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন মোস্তফা কামাল তাঁদেরই অন্যতম একজন।
মোস্তফা কামালের কৃতিত্ব:
১৮ এপ্রিল ১৯৭১ সাল। চারদিকে প্রচণ্ড শব্দ। অস্ত্রের গর্জন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গঙ্গাসাগরের উত্তরে দরুইন গ্রাম আক্রমণ করে। এ আক্রমণে একজন মুক্তিযোদ্ধা গুলিবিদ্ধ হলেন। পাশেই অবস্থানরত মোস্তফা কামাল এগিয়ে গেলেন। নিমেষে তুলে নিলেন তাঁর অস্ত্র। অবিরাম গুলি চালালেন। উপায় না দেখে অধিনায়কসহ সবাই পিছু হটলেন। মোস্তফা কামালের অসীম সাহসের জন্যই তাঁর পুরো কোম্পানি পশ্চাৎপসরণ করে সেবারের মতো জীবন রক্ষা করল। কিন্তু শত্রু সেনারা তাঁকে ছাড়ল না। অন্যদিক দিয়ে আক্রমণ চালিয়ে তারা মোস্তফা কামালকে ঘিরে ফেলল। মৃত্যু অবধারিত জেনেও তিনি ভয় পেলেন না, আত্মসমর্পণও করলেন না। শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন বাঘের মতো। যতক্ষণ জ্ঞান ছিল গুলির পর গুলি চালিয়ে গেলেন। অবশেষে যুদ্ধ করতে করতে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।
মোস্তফা কামাল পুরো শত্রুবাহিনীকে ঘায়েল করতে পারেননি, কিন্তু বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন নিজের একটি কোম্পানিকে। তিনি আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি মোস্তফা কামালের কথা কোনো দিনও ভুলবে না বাংলাদেশের মানুষ।

No comments:

Post a Comment