10.4.12

বাংলা: দৈত্য ও জেলে

দৈত্য ও জেলে
প্রশ্ন : জেলে কেমন করে দৈত্যর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করল?
উত্তর : ভূমিকা : আরব্য রজনীর মৌখিক লোককথাগুলো মোগল আমলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে এ দেশে এসেছে। তারই একটি অন্যতম গল্প ‘দৈত্য ও জেলে’।
জেলে দৈত্যের হাত থেকে রক্ষা পেল যেভাবে : নদীর তলে জালায় বন্দি দৈত্যর শেষ শপথ ছিল, যার মাধ্যমে সে মুক্ত হবে তাকে সে কতল করবে। কিন্তু মরার ভয়ে ভীত হয়েও জেলে বুদ্ধি হারাল না। হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো এবং সে বলল, ভাই আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না, তোমার এত বড় শরীরটা কেমন করে এই জালাটির মধ্যে ছিল। সত্য কি মিথ্যা বলছ তা তুমিই জান। জেলের কথা শুনে দৈত্য দাঁত কড়মড় করে মেঘের মত গর্জন করে বলল, কী আমি মিথ্যা কথা বলছি? এই জালার মধ্যে আমি থাকতে পারি না? বেশ মরার আগে জেনে যাও দৈত্য মিথ্যা কথা বলে না। বলতে বলতে দৈত্য চোখের পলকে জালাটির ভেতরে ঢুকে গেল। আর অমনি জেলে এক লাফে এসে জালাটির মুখে ঢাকনা লাগিয়ে নদীতে ফেলে দিয়ে দৈত্যের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করল।
উপসংহার : বেইমান দৈত্য তার অহংকারের শাস্তিস্বরূপ আবার জালায় বন্দি হয়ে শত শত বছরের জন্য পতিত হল নদীর তলায়।
প্রশ্ন : দৈত্য ও জেলে রচনার মূল ভাব লিখ
উত্তর : দৈত্যের অকৃতজ্ঞতার কারণে আমৃত্যু শাস্তিভোগ আর উপস্থিত বুদ্ধির জন্য নিজের জীবন রক্ষা করাই দৈত্য ও জেলে গল্পের মূল বিষয়বস্তু। একদিন এক গরিব জেলের নদীতে ফেলা জালে মাছের পরিবর্তে উঠে এক বন্দি দৈত্যসহ একটি জালা। বাদশাহ সোলায়মানের রোষানলে পড়ে দৈত্য শত শত বছর ওই জালায় বন্দি থেকে তার উদ্ধারকারীকে হত্যা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। অবশেষে দৈত্য যখন যে জেলে থেকে তাকে মুক্ত করল সে জেলেকে মারতে উদ্যত হয়। তখন জেলে তার উপস্থিত বুদ্ধির জোরে দৈত্যকে আবার জালায় ভরে নদিতে নিক্ষেপ করে। অকৃতজ্ঞতা যে কত বড় বিপদ বয়ে আনে তাই ফুটে উঠেছে গল্পটিতে।
প্রশ্ন : জেলের সংসার কিভাবে চলত?
উত্তর : ভূমিকা : আলিফ লায়লা বা আরব্য রজনী আরব্য গল্প হলেও আসলে কাহিনীগুলোর প্রাচীন মিসরে। দৈত্য ও জেলে তারই একটি গল্প।
জেলের সংসার যেভাবে চলত : কোন একদিন কোন এক সময়ে এক নদীর ধারে বাস করত এক গরিব জেলে। তার পেশাই ছিল মাছ ধরা। সে প্রতিদিন নদীতে পাঁচবার করে জাল ফেলত। এতে যে মাছ পেত তা সে বাজারে বিক্রি করত এবং বিক্রীত টাকা দিয়ে সে সংসার চালাত। এভাবে নিত্যদিন শারীরিক পরিশ্রম করে কোন রকমে তার সংসার চলত।
উপসংহার : জেলেরা তাদের সংসার চালানোর জন্য মাছ ধরলেও সেই সঙ্গে আমাদের পুষ্টিরও চাহিদা মেটাত।
প্রশ্ন : জালা দেখে জেলে কী ভাবল?
উত্তর : আরব্য রজনীর ১০০১টি গল্পের মধ্যে দৈত্য ও জেলে একটি অন্যতম গল্প।
জালা দেখে জেলে ভাবল : নদীতে জাল ফেলার পর জেলের জালে প্রথমবার একটি মোটা গাছের গুঁড়ি, দ্বিতীয়বার একটি মরা গাধা, তৃতীয়বার মাটির জালা, চতুর্থবার একগাদা হাঁড়ি, কলসি ভাঙ্গা আর কাচের টুকরা এবং পঞ্চমবার একটা তামার জালা উঠল। মুখ আটকানো তামার জালাটি দেখে জেলে ভাবল, নিশ্চয়ই এর ভেতরে মণি-রতœ আছে। খোদার রহমতে এবার বুঝি তার ভাগ্য ফিরল।
উপসংহার : বারবার শূন্য জাল ওঠার পর যখন পূর্ণ কিছু ধরা দেয় তখন জেলের মন খুশি হয় এবং পাওয়ার আসা মনে জাগে।
প্রশ্ন : জালা থেকে কী বের হয়ে আসল?
উত্তর : ভূমিকা : আরব্য উপন্যাসে কল্প কাহিনী আলিফ লায়লা থেকে সংগৃহীত দৈত্য ও জেলে ‘গল্পটি’ গল্পের প্রধান চরিত্র গরিব জেলের জালে একদিন একটি জালা আটকে পড়ে। জালা থেকে যা বের হল জালাটির মুখে লেখা ছিল দাউদের পুত্র বাদশাহ সোলায়মানের নাম। বুকের ভেতর আশা নিয়ে জেলে যেই মুখ খুলল, অমনি ধোয়ার মতো কুণ্ডলি পাকিয়ে জালার ভেতর থকে বেরিয়ে এল এক বিরাট দৈত্য।
উপসংহার : বাদশাহ সোলায়মানের নাম লেখা জালা পেয়ে জেলের মনে যে আশার আলো জ্বলে উঠেছিল জালার মুখ খোলার পর তার সব আশা হতাশায় মিলিয়ে গেল।
গণিতপ্রশ্ন : দৈত্য দেখতে কেমন ছিল?
উত্তর : ভূমিকা : দৈত্য ও জেলে আরব্য উপন্যাসের একটি গল্প। ১০০১টি কাহিনীভিত্তিক আরব্য রজনীর এ গল্পগুলো লোকের মুখে মুখে ফিরতে ফিরতে অধিকাংশ সংগৃহীত হয়েছে বাগদাদের খলিফা হারুন-অর-রশিদের, ফাতেমীয় ও মামলুক রাজবংশের আমলে। দৈত্যটি কেমন ছিল : বাদশাহ সোলায়মানের নাম লেখা জালাটি থেকে যে অতিকায় দৈত্যটি বেরিয়ে এলো, তার মাথা ছিল একটি বিরাট ঝুড়ির মতো। একগাছি চুলও ছিল না তার মাথায়। আগুনের গোলার মতো ভয়ঙ্কর দুটি চোখ আর শ্বেত পাথরের টুকরার মতো দাঁত বসানো দৈত্যের এ বীভৎস শারীরিক গঠন দেখে ভয়ে জেলের হাত-পা কাঁপতে শুরু করল।
উপসংহার : প্রাচীনকাল থেকেই দৈত্য-দানবের কথা প্রচলিত আছে। আলিফ লায়লা বা আরব্য রজনীর অনেক গল্পে সে দৃষ্টান্ত দেখা যায়।
প্রশ্ন : প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা কর : দেখতে দেখতে সেই ধোঁয়ার কুণ্ডলি একটা অতিকায় দৈত্যে পরিণত হল।
উত্তর : আলোচ্য অংশটুকু দৈত্য ও জেলে নামক গল্প হতে নেয়া।
প্রসঙ্গ : এখানে জেলের জালে ওঠা তামার জালা থেকে বেরিয়ে আসা দৈত্যের কথা বলা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : এক গরিব জেলে প্রতিদিন নদীতে পাঁচবার জাল ফেলত। পঞ্চমবার তার জালে উঠে এলো ঢাকনা দিয়ে মুখ ঢাকা একটা তামার জালা। তার ওপর বাদশাহ সোলায়মানের নাম লেখা দেখে জেলে নদীর পাড়ে পড়ে থাকা একখণ্ড পাথর দিয়ে ঠুকে ঠুকে সাবধানে জালার মুখটা সরিয়ে ফেলল। জালার ঢাকনা সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেতর থেকে গলগল করে রাশি রাশি ধোঁয়া বেরিয়ে আসতে লাগল। জেলে চোখ বড় করে ভয়ে ভয়ে একধারে সরে দাঁড়াল। দেখতে দেখতে সেই ধোঁয়ার কুণ্ডুলি একটি অতিকায় দৈত্যে পরিণত হল।
মন্তব্য : দৈত্যের চেহারা দেখে ভয়ে জেলের হাত-পা কাঁপতে লাগল।
প্রশ্ন : ব্যাখ্যা কর : যা হুকুম করবে, মাথা নত করে তাই তামিল করব।
উত্তর : আলোচ্য অংশটুকু আরব্য উপন্যাস ‘আলিফ লায়লা’ থেকে ছোটদের জন্য সংকলিত ‘দৈত্য ও জেলে’ নামক গল্প হতে নেয়া।
প্রসঙ্গ : একবার দৈত্য বাদশাহ সোলায়মানের হুকুম তামিল করতে অস্বীকার করায় যে শাস্তি পেয়েছিল এখানে সে প্রসঙ্গেই আলোকপাত করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : তামার জালা থেকে বেরিয়ে আসা দৈত্যটা ছিল বাদশাহ সোলায়মানের গোলাম। সে এমন ক্ষমতাবান ছিল যে দুনিয়ার কাউকে পরোয়া করত না। একদিন বাদশাহর হুকুম তামিল করতে অস্বীকার করায় বাদশাহ রেগে গিয়ে দৈত্যকে শায়েস্তা করতে একটা তামার জালায় পুরে মুখ বন্ধ করে ফেলে দিলেন নদীতে। শত শত বছর পর জেলের মাধ্যমে মুক্তি পেয়ে সেই অবাধ্যতার শাস্তির কথা মনে পড়ায় দৈত্য ভয়ে ভয়ে কথাগুলো বলেছে।
মন্তব্য : শত শত বছর পার হয়ে গেলেও দৈত্য বাদশাহ সোলায়মানের শাস্তির কথা ভুলতে পারেনি।

No comments:

Post a Comment