বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল
প্রিয় শিক্ষার্থী, বাংলা বিষয়ের ওপর পাঠ আলোচনায় তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি। আলোচ্যসূচিতে আজ রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল। ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ বীরত্বের জন্য আমাদের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উপাধি।
তোমরা নিশ্চয় জানো, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে অগণিত মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সাতজন সাহসী সৈনিক ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধি লাভ করেন।
এই সাতজন শহীদ বীর সৈনিকের একজন হলেন সিপাহী মোস্তফা কামাল। তাঁর জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান থানার হাজিপুর গ্রামে। ২০ বছর বয়সে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব বাংলাদেশের সৈনিক বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন, তিনি তাঁদের অন্যতম।
আমাদের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত তাঁর বীরত্বের কথা নিশ্চয় তোমাদের পড়া হয়ে গেছে। এবার এসো, এই রচনা থেকে পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে, সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়া যাক।
প্রশ্ন: নিচের শব্দগুলোর অর্থ লেখো।
প্রতিরোধ, কমান্ডার, নিরাপত্তা, স্বস্তি, নির্বিঘ্নে, অবধারিত, নাজুক, নারাজ, তোড়ে।
উত্তর:
প্রদত্ত শব্দ শব্দের অর্থ
প্রতিরোধ বাধা দেওয়া
কমান্ডার অধিনায়ক
নিরাপত্তা নিরাপদ অবস্থা
স্বস্তি উদ্বেগমুক্ত অবস্থা
প্রদত্ত শব্দ শব্দের অর্থ
নির্বিঘ্নে নিরাপদে
অবধারিত নিশ্চিত
নাজুক জটিল
নারাজ অসম্মত
তোড়ে স্রোতের বেগে।
প্রশ্ন: নিচের শব্দগুলো দিয়ে বাক্য রচনা করো।
হতবিহ্বল, আকস্মিকতা, পরিখা, হাবিলদার, আত্মপ্রত্যয়ী, প্লাটুন।
উত্তর:
প্রদত্ত শব্দ বাক্য রচনা
হতবিহ্বল— শত্রুর আক্রমণের আকস্মিকতায় যোদ্ধারা হতবিহ্বল হয়ে পড়ল।
আকস্মিকতা— শত্রুর আক্রমণের আকস্মিকতায় সৈন্যরা দিশেহারা হয়ে পড়ল।
পরিখা— সৈন্যরা পরিখার মধ্যে থেকে গুলি চালাচ্ছে।
হাবিলদার— হাবিলদারের নেতৃত্বে সিপাহীরা জায়গাটা পাহারা দিচ্ছে।
আত্মপ্রত্যয়ী— খেলাধুলা পরিচালনায় কাজল যথেষ্ট আত্মপ্রত্যয়ী।
প্লাটুন— সেনা অধিনায়ক যুদ্ধক্ষেত্রে আরও কয়েক প্লাটুন সৈন্য পাঠালেন।
প্রশ্ন: আমাদের জাতীয় দিবসগুলোর পাশে তারিখবাচক শব্দ লেখা।
উত্তর:
(ক) শহীদ দিবস — ২১শে ফেব্রুয়ারি
(খ) স্বাধীনতা দিবস — ২৬শে মার্চ
(গ) বাংলা বববর্ষ — ১লা বৈশাখ
(ঘ) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস — ১৪ই ডিসেম্বর
(ঙ) বিজয় দিবস — ১৬ই ডিসেম্বর
প্রশ্ন: পাঠ অনুসরণে নিম্নলিখিত ঘটনার পাশে তারিখবাচক শব্দ লেখো:
উত্তর: (ক) পাকিস্তানি বাহিনীর কুমিল্লায় প্রবেশ — ১৬ই এপ্রিল
(খ) দরুইন গ্রামে হানাদার বাহিনীর গোলাবর্ষণ — ১৭ই এপ্রিল
(গ) মোস্তফা কামালের শাহাদাত বরণ — ১৮ই এপ্রিল।
প্রশ্ন: উপযুক্ত শব্দ বেছে নিয়ে বাক্যগুলো সম্পূর্ণ করো:
(ক) সৈন্যদের — আসলে দুর্ভেদ্য দুর্গ
(খ) কিছুটা — নিঃশ্বাস পড়ল দরুইন নিরাপত্তা ঘাঁটিতে।
(গ) সারা সকাল — কাটল।
(ঘ) কিন্তু — হটতে হলেও কিছুটা সময় দরকার।
(ঙ) তার গুলির — তারা আর সামনে এগুতে পারছে না।
উত্তর: (ক) সৈন্যদের মনোবলই আসলে দুর্ভেদ্য দুর্গ
(খ) কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ল দরুইন নিরাপত্তা ঘাঁটিতে
(গ) সারা সকাল নির্বিঘ্নে কাটল
(ঘ) কিন্তু পিছু হটতে হলেও কিছুটা সময় দরকার
(ঙ) তার গুলির তোড়ে তারা আর সামনে এগুতে পারছে না
প্রশ্ন: পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কারা কোথায় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল?
উত্তর: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বত্র মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তেমনি একটি প্রতিরোধ ছিল ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে। সে সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এগিয়ে আসছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে। আমাদের মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। মুক্তিবাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে আশুগঞ্জে উজানীস্বরে আর এন্ডারসন খালের পাড়ে তিনটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল।
প্রশ্ন: ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে কোথায় কোথায় প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তোলা হয়?
উত্তর: পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য মুক্তিবাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে গড়ে তোলে তিনটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটি। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে এই ঘাঁটি তিনটি গড়ে তোলা হয় আশুগঞ্জে, উজানীস্বরে আর এন্ডারসন খালের পাড়ে।
প্রশ্ন: নিরাপত্তা অসম্পূর্ণ ছিল কোন দিকে? সে জন্য কী করা হয়েছিল?
উত্তর: মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে প্রতিরোধ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তুললেও তা পর্যাপ্ত ছিল না। তখনো কিছুটা নিরাপত্তা অসম্পূর্ণ ছিল। আর এই অসম্পূর্ণ নিরাপত্তা ছিল দক্ষিণ দিকে। সে জন্য কমান্ডারের নির্দেশে মুক্তিবাহিনীর একটা প্লাটুন দক্ষিণে অবস্থান নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ওই প্লাটুনে ছিল মাত্র ১০ জন মুক্তিসেনা। অধিনায়ক ছিলেন সিপাহী মোস্তফা কামাল।
প্রশ্ন: দরুইন গ্রাম কোথায়? সেখানে কারা অবস্থান নিয়েছিল?
উত্তর: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গঙ্গা সাগরের উত্তর দিকে দরুইন গ্রাম। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের ওই প্লাটুনে মুক্তিসেনা ছিল ১০ জন। সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল সেই প্লাটুনের অধিনায়ক ছিলেন।
প্রশ্ন: মোস্তফা কামাল কী বিশ্বাস করতেন?
উত্তর: ২৪ বছর বয়সী প্রাণবন্ত যুবক মোস্তফা কামাল ছিলেন প্রচণ্ড আত্মপ্রত্যয়ী। তাঁর সাহস, বুদ্ধি ও কর্মতৎপরতা ছিল প্রসংশনীয়। মোস্তফা কামাল বিশ্বাস করতেন, সৈন্যদের মনোবলই আসলে দুর্ভেদ্য দুর্গ। আর তাঁদের সাহস যেন দুর্গের দেয়াল। তাই মাত্র ১০ জন মুক্তিসেনা নিয়ে দরুইন গ্রামে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি আগলানোর সাহস করেছিলেন মোস্তফা কামাল।
প্রশ্ন: ১৬ই এপ্রিল ১৯৭১ মোস্তফা কামাল কমান্ডারের কাছে কী খবর পাঠিয়েছিলেন?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ১৬ই এপ্রিল মোস্তফা কামাল খবর পেলেন পাকিস্তানি হানাদার বহিনী কুমিল্লা-আখাউড়া রেললাইন ধরে এগিয়ে আসছে। তাদের লক্ষ্য মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া দখল করা। মাত্র ১০ জন সৈন্য নিয়ে শক্তিশালী পাকিস্তানি বাহিনীকে মোকাবিলা করা বাস্তবে অসম্ভব। তাই তিনি আরও মুক্তিসেনা পাঠানোর জন্য কমান্ডারের কাছে খবর পাঠিয়েছিলেন।
প্রশ্ন: দরুইন নিরাপত্তা ঘাঁটিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস বইল কেন?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল ভোরবেলা পাকিস্তানি বাহিনী দরুইন গ্রামে মুক্তিসেনাদের ওপর গোলাবর্ষণ শুরু করলে মোস্তফা কামাল বুঝতে পারলেন, এত কম শক্তি নিয়ে ওদের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই তিনি আবারও কমান্ডারের কাছে জরুরি সেনা সহায়তার জন্য সংবাদ পাঠালেন। কিন্তু বাড়তি সেনা তো দূরের কথা, দু-তিন দিন ধরে তাঁদের নিয়মিত খাবার সরবরাহও বন্ধ। চিন্তায় অস্থির মোস্তফা কামালসহ সবাই মিলে পরিখার মধ্যে অবস্থান নেন। দুপুরের দিকে হাবিলদার মুনির আহমদের নেতৃত্বে এক প্লাটুন মুক্তিসেনা দরুইন গ্রামে এসে পৌঁছাল। সেই সঙ্গে খাবারও এল। বাড়তি সৈন্য ও খাবার পৌঁছায় দরুইন নিরাপত্তা ঘাঁটিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস বইল।
প্রশ্ন: মুক্তিসেনারা কেন হতবিহ্বল হয়ে পড়লেন? তাঁদের সামনে কোন দুটি পথ খোলা ছিল?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ১৮ই এপ্রিল বেলা ১১টার সময় পাকিস্তানি সেনারা গোলাবর্ষণ করতে করতে এগিয়ে আসতে থাকল দরুন ঘাঁটির দিকে। প্রথমে তারা অবস্থান নিল মোগরা বাজারে ও গঙ্গাসাগরে। দপুর ১২টায় পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ আরও প্রবল হয়ে উঠল। মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা গুলি তাদের তেমন কিছু করতে পারল না। হঠাৎ একটা গুলি এসে মুক্তিবাহিনীর মেশিনগান-ম্যানের বুকে বিঁধল। সঙ্গে সঙ্গে মেশিনগান বন্ধ হয়ে গেল। শত্রুর আক্রমণের এই আকস্মিকতা। দ্রুততা ও তীব্রতায় মুক্তিসেনারা হতবিহ্বল হয়ে পড়লেন। এ অবস্তায় তাঁদের সামনে কেবল দুটি পথ খোলা ছিল। আর এই দুটি পথ হলো, হয় সামনাসামনি যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করা, না হয় পূর্বদিক দিয়ে পিছু হটে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়া।
প্রশ্ন: অবশিষ্ট সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষার জন্য মোস্তফা কামাল কী সিদ্ধান্ত নিলেন?
উত্তর: ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আকস্মিক আক্রমণের দ্রুততা ও তীব্রতায় মুক্তিসেনারা হতবিহ্বল হয়ে পড়লেও মোস্তফা কামাল সাহস হারাননি। পরিখার মধ্যে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উত্তরে, দক্ষিণে, পশ্চিমে গুলি চালাতে লাগলেন। এরই মধ্যে নয়জন মুক্তিসেনা নিহত হলেন। আরও ১০ জন হলেন আহত। পিছু না হটলে সবার মৃত্যু অবধারিত। এ পরিস্থিতিতে অবশিষ্ট সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষার জন্য মোস্তফা কামাল সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি একাই শত্রু ঠেকাবেন। একাই গুলি চলিয়ে যাবেন। যেমন করেই হোক মুক্তিসেনাদের জীবন বাঁচাতে হবে। তিনি সহযোদ্ধাদের দ্রুত পিছু হটার নির্দেশ দিলেন।
প্রশ্ন: বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামালের কবর কোথায়? বাংলাদেশ সরকার মোস্তফা কামালকে কী উপাধিতে ভূষিত করেছে?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ১৮ই এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দরুইন গ্রাম আক্রমণ করে। সে সময় মোস্তফা কামাল দরুইন গ্রামে অবস্থানরত মুক্তিসেনাদের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন। প্রচণ্ড যুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য সহযোদ্ধাদের পিছু হটতে সাহায্য করে মোস্তফা কামাল একা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শহীদ হন দরুইন গ্রামে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামালের কবর এই দরুইন গ্রামেই অবস্থিত।
মোস্তফা কামালের অনমনীয় দৃঢ়তা ও আত্মদান এ দেশবাসী কোনো দিন ভুলবে না। তিনি আমাদের গর্ব, আমাদের গৌরব। অসীম সাহস আর বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার মোস্তফা কামালকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করেছে। বীরশ্রেষ্ঠ আমাদের দেশের বীরত্বের সবচেয়ে বড় উপাধি।
প্রিয় শিক্ষার্থী, বাংলা বিষয়ের ওপর পাঠ আলোচনায় তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি। আলোচ্যসূচিতে আজ রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল। ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ বীরত্বের জন্য আমাদের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উপাধি।
তোমরা নিশ্চয় জানো, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে অগণিত মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সাতজন সাহসী সৈনিক ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধি লাভ করেন।
এই সাতজন শহীদ বীর সৈনিকের একজন হলেন সিপাহী মোস্তফা কামাল। তাঁর জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান থানার হাজিপুর গ্রামে। ২০ বছর বয়সে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব বাংলাদেশের সৈনিক বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন, তিনি তাঁদের অন্যতম।
আমাদের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত তাঁর বীরত্বের কথা নিশ্চয় তোমাদের পড়া হয়ে গেছে। এবার এসো, এই রচনা থেকে পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে, সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়া যাক।
প্রশ্ন: নিচের শব্দগুলোর অর্থ লেখো।
প্রতিরোধ, কমান্ডার, নিরাপত্তা, স্বস্তি, নির্বিঘ্নে, অবধারিত, নাজুক, নারাজ, তোড়ে।
উত্তর:
প্রদত্ত শব্দ শব্দের অর্থ
প্রতিরোধ বাধা দেওয়া
কমান্ডার অধিনায়ক
নিরাপত্তা নিরাপদ অবস্থা
স্বস্তি উদ্বেগমুক্ত অবস্থা
প্রদত্ত শব্দ শব্দের অর্থ
নির্বিঘ্নে নিরাপদে
অবধারিত নিশ্চিত
নাজুক জটিল
নারাজ অসম্মত
তোড়ে স্রোতের বেগে।
প্রশ্ন: নিচের শব্দগুলো দিয়ে বাক্য রচনা করো।
হতবিহ্বল, আকস্মিকতা, পরিখা, হাবিলদার, আত্মপ্রত্যয়ী, প্লাটুন।
উত্তর:
প্রদত্ত শব্দ বাক্য রচনা
হতবিহ্বল— শত্রুর আক্রমণের আকস্মিকতায় যোদ্ধারা হতবিহ্বল হয়ে পড়ল।
আকস্মিকতা— শত্রুর আক্রমণের আকস্মিকতায় সৈন্যরা দিশেহারা হয়ে পড়ল।
পরিখা— সৈন্যরা পরিখার মধ্যে থেকে গুলি চালাচ্ছে।
হাবিলদার— হাবিলদারের নেতৃত্বে সিপাহীরা জায়গাটা পাহারা দিচ্ছে।
আত্মপ্রত্যয়ী— খেলাধুলা পরিচালনায় কাজল যথেষ্ট আত্মপ্রত্যয়ী।
প্লাটুন— সেনা অধিনায়ক যুদ্ধক্ষেত্রে আরও কয়েক প্লাটুন সৈন্য পাঠালেন।
প্রশ্ন: আমাদের জাতীয় দিবসগুলোর পাশে তারিখবাচক শব্দ লেখা।
উত্তর:
(ক) শহীদ দিবস — ২১শে ফেব্রুয়ারি
(খ) স্বাধীনতা দিবস — ২৬শে মার্চ
(গ) বাংলা বববর্ষ — ১লা বৈশাখ
(ঘ) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস — ১৪ই ডিসেম্বর
(ঙ) বিজয় দিবস — ১৬ই ডিসেম্বর
প্রশ্ন: পাঠ অনুসরণে নিম্নলিখিত ঘটনার পাশে তারিখবাচক শব্দ লেখো:
উত্তর: (ক) পাকিস্তানি বাহিনীর কুমিল্লায় প্রবেশ — ১৬ই এপ্রিল
(খ) দরুইন গ্রামে হানাদার বাহিনীর গোলাবর্ষণ — ১৭ই এপ্রিল
(গ) মোস্তফা কামালের শাহাদাত বরণ — ১৮ই এপ্রিল।
প্রশ্ন: উপযুক্ত শব্দ বেছে নিয়ে বাক্যগুলো সম্পূর্ণ করো:
(ক) সৈন্যদের — আসলে দুর্ভেদ্য দুর্গ
(খ) কিছুটা — নিঃশ্বাস পড়ল দরুইন নিরাপত্তা ঘাঁটিতে।
(গ) সারা সকাল — কাটল।
(ঘ) কিন্তু — হটতে হলেও কিছুটা সময় দরকার।
(ঙ) তার গুলির — তারা আর সামনে এগুতে পারছে না।
উত্তর: (ক) সৈন্যদের মনোবলই আসলে দুর্ভেদ্য দুর্গ
(খ) কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ল দরুইন নিরাপত্তা ঘাঁটিতে
(গ) সারা সকাল নির্বিঘ্নে কাটল
(ঘ) কিন্তু পিছু হটতে হলেও কিছুটা সময় দরকার
(ঙ) তার গুলির তোড়ে তারা আর সামনে এগুতে পারছে না
প্রশ্ন: পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কারা কোথায় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল?
উত্তর: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বত্র মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তেমনি একটি প্রতিরোধ ছিল ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে। সে সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এগিয়ে আসছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে। আমাদের মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। মুক্তিবাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে আশুগঞ্জে উজানীস্বরে আর এন্ডারসন খালের পাড়ে তিনটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল।
প্রশ্ন: ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে কোথায় কোথায় প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তোলা হয়?
উত্তর: পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য মুক্তিবাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে গড়ে তোলে তিনটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটি। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে এই ঘাঁটি তিনটি গড়ে তোলা হয় আশুগঞ্জে, উজানীস্বরে আর এন্ডারসন খালের পাড়ে।
প্রশ্ন: নিরাপত্তা অসম্পূর্ণ ছিল কোন দিকে? সে জন্য কী করা হয়েছিল?
উত্তর: মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে প্রতিরোধ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তুললেও তা পর্যাপ্ত ছিল না। তখনো কিছুটা নিরাপত্তা অসম্পূর্ণ ছিল। আর এই অসম্পূর্ণ নিরাপত্তা ছিল দক্ষিণ দিকে। সে জন্য কমান্ডারের নির্দেশে মুক্তিবাহিনীর একটা প্লাটুন দক্ষিণে অবস্থান নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ওই প্লাটুনে ছিল মাত্র ১০ জন মুক্তিসেনা। অধিনায়ক ছিলেন সিপাহী মোস্তফা কামাল।
প্রশ্ন: দরুইন গ্রাম কোথায়? সেখানে কারা অবস্থান নিয়েছিল?
উত্তর: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গঙ্গা সাগরের উত্তর দিকে দরুইন গ্রাম। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের ওই প্লাটুনে মুক্তিসেনা ছিল ১০ জন। সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল সেই প্লাটুনের অধিনায়ক ছিলেন।
প্রশ্ন: মোস্তফা কামাল কী বিশ্বাস করতেন?
উত্তর: ২৪ বছর বয়সী প্রাণবন্ত যুবক মোস্তফা কামাল ছিলেন প্রচণ্ড আত্মপ্রত্যয়ী। তাঁর সাহস, বুদ্ধি ও কর্মতৎপরতা ছিল প্রসংশনীয়। মোস্তফা কামাল বিশ্বাস করতেন, সৈন্যদের মনোবলই আসলে দুর্ভেদ্য দুর্গ। আর তাঁদের সাহস যেন দুর্গের দেয়াল। তাই মাত্র ১০ জন মুক্তিসেনা নিয়ে দরুইন গ্রামে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি আগলানোর সাহস করেছিলেন মোস্তফা কামাল।
প্রশ্ন: ১৬ই এপ্রিল ১৯৭১ মোস্তফা কামাল কমান্ডারের কাছে কী খবর পাঠিয়েছিলেন?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ১৬ই এপ্রিল মোস্তফা কামাল খবর পেলেন পাকিস্তানি হানাদার বহিনী কুমিল্লা-আখাউড়া রেললাইন ধরে এগিয়ে আসছে। তাদের লক্ষ্য মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া দখল করা। মাত্র ১০ জন সৈন্য নিয়ে শক্তিশালী পাকিস্তানি বাহিনীকে মোকাবিলা করা বাস্তবে অসম্ভব। তাই তিনি আরও মুক্তিসেনা পাঠানোর জন্য কমান্ডারের কাছে খবর পাঠিয়েছিলেন।
প্রশ্ন: দরুইন নিরাপত্তা ঘাঁটিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস বইল কেন?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল ভোরবেলা পাকিস্তানি বাহিনী দরুইন গ্রামে মুক্তিসেনাদের ওপর গোলাবর্ষণ শুরু করলে মোস্তফা কামাল বুঝতে পারলেন, এত কম শক্তি নিয়ে ওদের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই তিনি আবারও কমান্ডারের কাছে জরুরি সেনা সহায়তার জন্য সংবাদ পাঠালেন। কিন্তু বাড়তি সেনা তো দূরের কথা, দু-তিন দিন ধরে তাঁদের নিয়মিত খাবার সরবরাহও বন্ধ। চিন্তায় অস্থির মোস্তফা কামালসহ সবাই মিলে পরিখার মধ্যে অবস্থান নেন। দুপুরের দিকে হাবিলদার মুনির আহমদের নেতৃত্বে এক প্লাটুন মুক্তিসেনা দরুইন গ্রামে এসে পৌঁছাল। সেই সঙ্গে খাবারও এল। বাড়তি সৈন্য ও খাবার পৌঁছায় দরুইন নিরাপত্তা ঘাঁটিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস বইল।
প্রশ্ন: মুক্তিসেনারা কেন হতবিহ্বল হয়ে পড়লেন? তাঁদের সামনে কোন দুটি পথ খোলা ছিল?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ১৮ই এপ্রিল বেলা ১১টার সময় পাকিস্তানি সেনারা গোলাবর্ষণ করতে করতে এগিয়ে আসতে থাকল দরুন ঘাঁটির দিকে। প্রথমে তারা অবস্থান নিল মোগরা বাজারে ও গঙ্গাসাগরে। দপুর ১২টায় পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ আরও প্রবল হয়ে উঠল। মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা গুলি তাদের তেমন কিছু করতে পারল না। হঠাৎ একটা গুলি এসে মুক্তিবাহিনীর মেশিনগান-ম্যানের বুকে বিঁধল। সঙ্গে সঙ্গে মেশিনগান বন্ধ হয়ে গেল। শত্রুর আক্রমণের এই আকস্মিকতা। দ্রুততা ও তীব্রতায় মুক্তিসেনারা হতবিহ্বল হয়ে পড়লেন। এ অবস্তায় তাঁদের সামনে কেবল দুটি পথ খোলা ছিল। আর এই দুটি পথ হলো, হয় সামনাসামনি যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করা, না হয় পূর্বদিক দিয়ে পিছু হটে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়া।
প্রশ্ন: অবশিষ্ট সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষার জন্য মোস্তফা কামাল কী সিদ্ধান্ত নিলেন?
উত্তর: ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আকস্মিক আক্রমণের দ্রুততা ও তীব্রতায় মুক্তিসেনারা হতবিহ্বল হয়ে পড়লেও মোস্তফা কামাল সাহস হারাননি। পরিখার মধ্যে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উত্তরে, দক্ষিণে, পশ্চিমে গুলি চালাতে লাগলেন। এরই মধ্যে নয়জন মুক্তিসেনা নিহত হলেন। আরও ১০ জন হলেন আহত। পিছু না হটলে সবার মৃত্যু অবধারিত। এ পরিস্থিতিতে অবশিষ্ট সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষার জন্য মোস্তফা কামাল সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি একাই শত্রু ঠেকাবেন। একাই গুলি চলিয়ে যাবেন। যেমন করেই হোক মুক্তিসেনাদের জীবন বাঁচাতে হবে। তিনি সহযোদ্ধাদের দ্রুত পিছু হটার নির্দেশ দিলেন।
প্রশ্ন: বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামালের কবর কোথায়? বাংলাদেশ সরকার মোস্তফা কামালকে কী উপাধিতে ভূষিত করেছে?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ১৮ই এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দরুইন গ্রাম আক্রমণ করে। সে সময় মোস্তফা কামাল দরুইন গ্রামে অবস্থানরত মুক্তিসেনাদের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন। প্রচণ্ড যুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য সহযোদ্ধাদের পিছু হটতে সাহায্য করে মোস্তফা কামাল একা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শহীদ হন দরুইন গ্রামে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামালের কবর এই দরুইন গ্রামেই অবস্থিত।
মোস্তফা কামালের অনমনীয় দৃঢ়তা ও আত্মদান এ দেশবাসী কোনো দিন ভুলবে না। তিনি আমাদের গর্ব, আমাদের গৌরব। অসীম সাহস আর বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার মোস্তফা কামালকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করেছে। বীরশ্রেষ্ঠ আমাদের দেশের বীরত্বের সবচেয়ে বড় উপাধি।
No comments:
Post a Comment