30.6.12

সমাজ:অধ্যায়-১৫

প্রিয় সমাপনী পরীক্ষার শিক্ষার্থীরা আদর ও ভালোবাসা নিয়ো। ২০১১ সালের সমাপনী পরীক্ষার আলোকে আজ অধ্যায়-১৫-এর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস নিয়ে আলোচনা করছি।

অধ্যায়-১৫
সঠিক শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করো।
ক) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় — মার্চ।
উত্তর: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় ২৬ মার্চ।
খ) মুক্তিযুদ্ধে সারা বাংলাদেশকে — টি সেক্টরে ভাগ করা হয়।
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে সারা বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়।
গ) স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় —।
উত্তর: স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় ভারত।
ঘ) ১৪ ডিসেম্বর আমরা — দিবস পালন করি।
উত্তর: ১৪ ডিসেম্বর আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করি।

নিচের শুদ্ধ উক্তিগুলোর ডান পাশে ‘শু’ এবং অশুদ্ধ উক্তিগুলোর ডান পাশে ‘অ’ লেখো।
ক) অপারেশন সার্চলাইট বাস্তবায়ন করা হয় বাঙালিদের অধিকার দানের জন্য। —‘অ’
খ) ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল মুজিবনগরে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করে। —‘শু’
গ) বাংলাদেশের শরণার্থীরা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভুটানে আশ্রয় নেয়। —‘অ’
ঘ) ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। —‘শু’

 প্রশ্ন: বাঁ পাশের কথাগুলোর সঙ্গে ডান পাশের কথাগুলোর মিল করো:

উত্তর: ক) ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন
খ) মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি ছিলেন জেনারেল মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী
গ) গেরিলা আক্রমণ প্রচণ্ড রূপ নেয় ’৭১ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসের মধ্যে
ঘ) বিদেশি বহু বিশিষ্ট নাগরিক মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখেন
 প্রশ্ন: সঠিক উত্তরটি লেখো:
১। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কত তারিখ রাতে গণহত্যা চালায়?
ক) ২৫ মার্চ খ) ২৭ মার্চ গ) ১০ এপ্রিল ঘ) ১৭ এপ্রিল
উত্তর: ক) ২৫ মার্চ।
২। কে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন?
ক) শেখ মুজিবুর রহমান খ) সৈয়দ নজরুল ইসলাম
গ) তাজউদ্দিন আহমেদ ঘ) জেনারেল এম এ জি ওসমানী
উত্তর: খ) সৈয়দ নজরুল ইসলাম
৩। আমাদের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী নিয়ে কী গঠিত হয়?
ক) স্থল কমান্ড খ) নৌ কমান্ড গ) যৌথ কমান্ড ঘ) ভারতীয় কমান্ড
উত্তর: গ) যৌথ কমান্ড
 সংক্ষেপে উত্তর দাও।
প্রশ্ন: ২৫ মার্চের কালরাতে হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার বিবরণ দাও।
উত্তর: পাকিস্তানি সেনারা ২৫ মার্চের মধ্যরাতে নিরীহ ও নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা ট্যাংক, ভারী কামান ও নানাবিধ আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল আক্রমণ করে। এ ছাড়া হলসংলগ্ন শিক্ষকদের বাসগৃহে কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বাসস্থানে, বিভিন্ন দলীয় কার্যালয়ে তারা বর্বরোচিত হামলা চালায়। এসব স্থানে বাঙালি পুলিশ, ইপিআর বাহিনীর বাঙালি সদস্য, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। অন্যান্য স্থানেও তারা নির্মম হত্যাকাণ্ড শুরু করে। বাড়িঘর, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয় ও লুটপাট করে। বিদেশে সংবাদ প্রেরণের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে। ঢাকা শহর বধ্যভূমি ও ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়। এ জন্য ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতকে ‘কালরাত’ বলা হয়।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী ও বহির্বিশ্বে মিত্র দেশের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে আমাদের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী নিয়ে একটি যৌথ কমান্ড গঠিত হয়। পাকিস্তান একপর্যায়ে ভারতে আক্রমণ করলে এ যৌথ কমান্ড একযোগে স্থল, নৌ ও আকাশপথে আক্রমণ চালিয়ে দ্রুত পাকিস্তানি বাহিনীকে দুর্বল করে ফেলে। ৯ থেকে ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল শত্রুমুক্ত হয়।
২৫ মার্চ রাতে হানাদার বাহিনীর নির্বিচারে গণহত্যা ও ধ্বংযজ্ঞের পর থেকেই এ দেশের সব স্তরের প্রায় এক কোটি মানুষ শরণার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করে। তারা ভরণপোষণসহ নানা রকম সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানে এগিয়ে আসে। ভারত সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। একপর্যায়ে সামরিক শক্তি দিয়েও তারা বাংলাদেশকে সহায়তা করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারত ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয়। ৭ ডিসেম্বর স্বীকৃতি দেয় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভূটান। বহির্বিশ্বে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্র দেশগুলো যুক্তরাজ্য, জাপান এবং পশ্চিমের অনেক দেশের সাধারণ জনগণ বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়। কারণ সবাই বুঝেছিল যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ একটি ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ। বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংতা ও গণহত্যা তাদের কাছে সমর্থনযোগ্য ছিল না। বিভিন্ন দেশের বহু বিশিষ্ট নাগরিকও আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে অবদান রাখেন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশের সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করে।
নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধে সামরিক-বেসামরিক বাহিনীর ভূমিকা লেখো।
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে সামরিক ও বেসামরিক জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে বেশ কিছু বাহিনী গড়ে উঠেছিল। তারা বিভিন্নভাবে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করে। মুক্তিযুদ্ধে কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য সারা বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত পূর্ব বাংলার অফিসার, সৈনিক, পুলিশ, ইপিআর, নৌ, বিমান বাহিনীর সদস্যরা এসব বাহিনীর গঠন ও পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নিয়মিত সেনা, গেরিলা ও সাধারণ যোদ্ধারা এতে যোগদান করেন। এদের মুক্তিবাহিনী ও মুক্তিফৌজ বলা হতো। দেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-জনতা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে বেশ কিছু বাহিনী গড়ে তোলা হয়। ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে তারাও দেশের ভেতরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের অভ্যন্তরেও অনেক ছোট ছোট বাহিনী গড়ে তুলে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকার বাহিনীকে আক্রমণ করে। যুদ্ধের সময় নয় মাস বাংলাদেশের এসব মুক্তিবাহিনী স্থল, জল এবং আকাশপথে আক্রমণ করে পাকিস্তান বাহিনীকে কাবু করে। এ ছাড়া গ্রামাঞ্চলে সংগ্রাম কমিটি গঠন করে মানুষ মুক্তিবাহিনীকে থাকা, খাওয়া ও যুদ্ধে সাহায্য করে।
প্রশ্ন: হানাদার বাহিনী কর্তৃক বুদ্ধিজীবী হত্যার কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর: পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে পাকিস্তান শাসকচক্র বাংলাদেশকে চিরতরে মেধাশূন্য করার জন্য ঘৃণ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়। তারা ভেবেছিল, এ দেশকে মেধাশূন্য করা গেলে বাঙালি জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে। আমরা কোনো দিন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না। তাই তারা বুদ্ধিজীবী নিধনের ষড়যন্ত্র করে। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই নানাভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যায় লিপ্ত হয়। তবে ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে এই বর্বরতা ও হত্যাযজ্ঞ ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশনা ও মদদে রাজাকার, আলবদর, আল শামস্সহ এ দেশীয় একশ্রেণীর দালালরা এই হত্যাযজ্ঞ ঘটায়। তারা সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য, মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, শহীদুল্লাহ কায়সার, ডা. ফজলে রাব্বীসহ দেশের প্রথম সারির অনেক বুদ্ধিজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে ঢাকার মিরপুর ও রায়ের বাজারের বধ্যভূমিতে তাঁদের অনেকের বিকৃত লাশ পাওয়া যায়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করি।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধর্ম-বর্ণ-গোত্রনির্বিশেষে আমরা সবাই একত্রে শত্রুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম। এভাবে মুক্তিযুদ্ধে আমাদের দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি। বিশ্বসভায় পেয়েছি মর্যাদার আসন, সুযোগ পেয়েছি নিজেদের দেশ গড়ার। আধুনিক উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের এই জাতীয় ঐক্য ও দেশপ্রেম সব সময় প্রয়োজন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের উদার মনোভাব ও গণতান্ত্রিক চেতনা সর্বদা লালন করব। স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উদ্যাপনে অংশগ্রহণ করব। আমরা দেখতে চাই, যাতে বাংলাদেশ একদিন বিশ্বের উন্নত দেশের সারিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।

No comments:

Post a Comment