9.6.12

হোজ্জার সঙ্গে হাসাহাসি


হোজ্জার সঙ্গে হাসাহাসি

হোজ্জা নাসিরুদ্দিন বা নাসিরুদ্দিন হোজ্জার নাম তো তোমরা অনেক শুনেছো। তার হাসির অনেক গল্প বা কৌতুকও তোমরা জানো। চলো সেই হাসির রাজা হোজ্জার সঙ্গে আমরা একটু হাসাহাসি করি। হোজ্জার হাসির এই কৌতুকগুলো তোমাদের সামনে নতুন করে হাজির করেছেন মোহসেনা জয়া। ছবি এঁকেছেন রজত


আমি বাড়ি নেই
বাজারে চায়ের দোকানে বসে বেশ রসিয়ে কথা বলছেন হোজ্জা। একপর্যায়ে তিনি গর্ব করে বলেন, 'জানেন, আমি অনেক অতিথিপরায়ণ।'
কথাটা শুনে দোকানে বসা চতুর লোকটা বললো, 'তা হোজ্জা সাহেব, আজ দুপুরে তো তাহলে আপনার বাড়িতে আমরা খেতেই পারি।'
হোজ্জা রাজি হয়ে তখনই তাদের খাওয়াতে নিজের বাড়ির পথ ধরলেন। বাড়ির সামনে এসে বললেন, 'আমি আগে বাসায় গিয়ে আমার স্ত্রীকে খাবার রেডি করতে বলি। তারপর আপনারা একে একে আসুন।'
হোজ্জার স্ত্রী কথাটা শোনার পর তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বললেন, 'এসব পাগলামি ছাড়া তোমার মাথায় আর কিছু কাজ করে না? ঘরে নিজেদের খাবার নেই, তিনি আবার রাজ্যের মেহমান ডেকে এনেছেন! যাও, ওদের ফিরে যেতে বলো।'
'তা আমি পারবো না বাপু। আমি যে অতিথিপরায়ণ, তার তো একটা সুনাম আছে।' _মিনমিন করে বললেন হোজ্জা। তার স্ত্রী বললেন, 'বেশ, তুমি তাহলে উপরের ঘরে গিয়ে বসো, আমি বরং তাদের বলি যে, তুমি বাড়ি নেই।'
এদিকে অনেক সময় কেটে গেলো। অতিথিরা কোনো সাড়া না পেয়ে বাড়ি এসে ঘরের দরজা ধাক্কা দিতে লাগলো। আর বলতে লাগলো, 'আমাদের ঘরে ঢুকতে দাও হোজ্জা।' হোজ্জার স্ত্রী তখন দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন এবং অতিথিদের বললেন, 'হোজ্জা বাড়ি নেই!'
তারা বললো, 'সেকি! সে তো আমাদের দাঁড় করিয়ে রেখে বাড়িতে ঢুকেছে। আর আমরা তো বাড়ির সামনে থেকে দরজার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তাকে তো বের হতেও দেখিনি।'
তার স্ত্রী এবার চুপ হয়ে গেলেন। কিন্তু চুপ থাকতে পারলেন না হোজ্জা নিজে। তিনি উপর থেকে মাথাটা একটু ঝুঁকিয়ে বললেন, 'সামনের দরজা বন্ধ থাকলে কী? আমি কি পেছনের দরজা দিয়ে বের হতে পারি না?'
দ্বিতীয় প্রশ্ন বলুন
বাজারে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে হোজ্জা তার গায়ে একটা নোটিশ টাঙিয়ে দিলেন। তাতে লেখা_ 'যে কোনো বিষয়ে দুটি প্রশ্নের জবাবের বিনিময়ে পাঁচ টাকা।'
একজন হাটুরে সবার আগে দৌড়ে হোজ্জার ঘরে ঢুকে হাঁপাতে হাঁপাতে তার হাতে পাঁচ টাকা দিয়ে বললেন, 'দুটো প্রশ্নের জন্য পাঁচ টাকা, একটু বেশি নয় কী?'
'হ্যাঁ, তা ঠিকই বলেছেন। এবার আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নটি বলুন?'
লবণ আর তুলো
হোজ্জা নতুন করে লবণের ব্যবসা শুরু করলেন। তো একদিন সে গাধার পিঠে লবণের বস্তা তুলে বাজারের পথ ধরলেন। গাধাসহ পথে নদী পার হলেন। ওমা, পাড়ে ওঠে দেখেন নদীর পানিতে ধুয়ে লবণের বস্তা পুরো ফাঁকা! মহা বিরক্ত হলেন হোজ্জা। অন্যদিকে পিঠের ভার কমে যওয়ায় খুব খুশি তার গাধা।
ক'দিন পরে গাধার পিঠে বস্তাসহ হোজ্জা ফের সেই নদী পার হলেন। তবে এবার বস্তায় লবণ নেননি তিনি, নিলেন তুলা। নদী পার হয়ে গাধার পা টলমল শুরু করে দিলো। হোজ্জা গাধার কানে কানে বললেন, 'কী, ভেবেছিলে এবারও পানি দিয়ে গেলে বস্তার সব ধুয়ে ওজন কমে যাবে, না?'
হারিয়ে গেলো ঘুম
এমনিতেই ভয়কাতুরে হোজ্জা। তো এক মধ্যরাতে ভয়টয় ভুলে রাস্তা দিয়ে একা একা হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। গার্ড তাকে দেখে কাছে গেলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, 'এতো রাতে রাস্তায় একাকী কী করছেন হোজ্জা?'
হোজ্জা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন, 'আমার ঘুম হারিয়ে গেছে। তাকে খুঁজতে বের হয়েছি ভাই!'
তুমি না তোমার ভাই
দুই যমজ ভাই থাকে হোজ্জার গ্রামে। একদিন কোত্থেকে এসে হোজ্জা শুনলেন, যমজ ভাইদের একজন মারা গেছে। প্রতিবেশী সেই পরিবারটিকে সমবেদনা জানাতে বের হলেন তিনি। একটু এগিয়ে যেতে না যেতেই সেই যমজভাইদের এক ভাইকে দেখে হোজ্জা দৌড়ে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমাদের মধ্যে কোনজন মারা গেছে_ তুমি না তোমার ভাই?'
আপনার ওষুধ আপনিই খান
হোজ্জার স্মৃতিশক্তি কমে যেতে চলেছে; বিষয়টা বুঝতে পেরে তিনি গেলেন হেকিমের কাছে। হেকিম স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ওষুধ দিলেন হোজ্জাকে। কয়েক মাস ঠিকঠাক থাকার পর ফের ওষুধ আনতে গেলেন হেকিমের কাছে। হেকিম তাকে দেখে বললেন, 'গতবার তোমাকে কী ওষুধ দিয়েছিলাম, সেটা একেবারেই মনে করতে পারছি না।'
'মনে করতে না পারলে আপনার ওষুধ আপনি নিজেই খান।' এই বলে হোজ্জা বাড়ির দিকে হাঁটা ধরলেন।
কুর্তার ভেতর আমিও ছিলাম
এক প্রতিবেশী গভীর রাতে হোজ্জার বাসা থেকে কিছু পড়ার শব্দ শুনলো। পরদিন তাদের দেখা হলে প্রতিবেশী লোকটা হোজ্জাকে বললো, 'ভাই, গত রাতে আপনার বাসা থেকে ভারী কিছু পড়ার শব্দ পেলাম। কি পড়লো বলুন তো?'
হোজ্জা বললেন, 'আর বলবেন না ভাই, আজকাল আমার স্ত্রী শুধু শুধুই রাগ করে। কাল রাতেও সে রাগ করে আমার কুর্তাটা উপর থেকে নিচে ফেলে দেয়।'
প্রতিবেশী লোকটা অবাক হয়ে বললে, 'আরে ভাই, কুর্তা ফেললে কী এতো শব্দ হয়?'
হোজ্জা এদিক-সেদিক চোখ বুলিয়ে কাউকে না দেখে বললেন, 'ভাই, কুর্তার ভেতর আমিও ছিলাম!

No comments:

Post a Comment