25.6.12

প্রবন্ধ রচনা : মানুষের বন্ধু গাছপালা



প্রিয় শিক্ষার্থী, স্বাগত জানাচ্ছি আজকের আয়োজনে। সমাপনী পরীক্ষায় প্রবন্ধ রচনা একটি আবশ্যক প্রশ্ন। রচনা লেখায় কাঙ্ক্ষিত নম্বর পেতে হলে নিয়মিত চর্চা ও অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই।
 অবশ্যই মনে রাখা দরকার: ১. প্রতিটি রচনায় কমপক্ষে তিনটি অংশ থাকবে—
ক. ভূমিকা: বিষয়বস্তুর পরিচয়।
খ. মূল বক্তব্য: বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা, যা কয়েকটি অনুচ্ছেদে বিভক্ত থাকতে পারে।
গ. উপসংহার: বিষয়বস্তু সম্পর্কে সুচিন্তিত মতামত বা সিদ্ধান্ত।
২. রচনার ভাষা সহজ-সরল ও স্পষ্ট হতে হবে। ৩. একই কথা বারবার লেখা যাবে না। ৪. বানান শুদ্ধ হতে হবে। ৫. আলোচ্য বিষয়ের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ বা প্যারার ভাবগত যোগসূত্র থাকতে হবে। ৬. স্বল্প পরিসরে বক্তব্য বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় উপস্থাপন করতে হবে।
প্রিয় শিক্ষার্থী, এসো এবার সমাপনী পরীক্ষায় আসতে পারে এমন কয়েকটি রচনার নমুনা দেখা যাক।
মানুষের বন্ধু গাছপালা
ভূমিকা: গাছপালা আমাদের পরম বন্ধু। গাছপালা ছাড়া পৃথিবীতে আমাদের জীবন অচল। গাছপালা একদিকে নিসর্গের শোভা বৃদ্ধি করে, অন্যদিকে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পালন করে অসাধারণ ভূমিকা। যেখানে গাছপালা ও বনভূমি বেশি, সেখানে ভালো বৃষ্টি হয়। এর ফলে ভূমিতে পানির পরিমাণ বাড়ে, চাষাবাদ ও ফসল ভালো হয়। গাছপালা মাটির উর্বরতা বাড়ায়, মাটির ক্ষয় রোধ করে এবং ঝড়, বৃষ্টি ও বন্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে। আমাদের পরিবেশ রক্ষায় গাছপালার বিকল্প নেই।
জীবনের জন্য গাছপালা: বাতাসে শ্বাস নিতে না পারলে আমাদের মৃত্যু অনিবার্য। বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে আমরা বাঁচি। নিঃশ্বাসের সঙ্গে আমরা কার্বন ডাই-অক্সাইড নামে বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে ছাড়ি। অন্যদিকে গাছপালা বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং বাতাসে অক্সিজেন ছাড়ে। গাছপালা না থাকলে একসময় বাতাসের অক্সিজেন একেবারে শেষ হয়ে যেত। আর আমরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তাম। কাজেই গাছপালা আমাদের জীবনের জন্য অত্যাবশ্যক।
প্রাত্যহিক জীবনে গাছপালা: বন্ধু গাছপালা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অনেকভাবে সাহায্য করে থাকে। গাছপালা আমাদের নানা রকম খাদ্যচাহিদা পূরণ করে থাকে। গাছপালা থেকে আমরা পাই নানা রকম ফল, শাকসবজি, খাদ্যশস্য, চিনি, বাদাম ও তেল। এ ছাড়া গাছপালা থেকে আমরা পেয়ে থাকি আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেয়ারা, লিচু, আতা, বরই, জামরুল, পেঁপে, সফেদা, আপেল, নাশপাতি, আনারস, আমড়া ইত্যাদি নানা রকমের ফল। আমাদের প্রতিদিনের রান্নায় যেসব মসলা ব্যবহার করে থাকি তা-ও পাই গাছপালা থেকে। মরিচ, কালোজিরা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, ধনে, তেজপাতা, এলাচ, দারচিনি, গোলমরিচ এসব মসলা আমরা গাছপালা থেকেই পেয়ে থাকি। চা, কফি, কোকো ইত্যাদি মুখরোচক পানীয়ও আমরা পাই উদ্ভিদ বা একধরনের গাছপালা থেকে। ডাব, খেজুরের রস ইত্যাদিও গাছপালার অবদান।
গাছপালার বিভিন্ন ব্যবহার: গাছপালা বিভিন্নভাবে আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহূত হয়ে আসছে। কাঠ আমাদের প্রয়োজনীয় বনজ সম্পদ। চেয়ার, টেবিল, আলমারি থেকে শুরু করে দেয়াশলাইয়ের কাঠি পর্যন্ত বহু ধরনের জিনিস তৈরিতে আমাদের কাজে লাগে। আর এই কাঠ আমরা পেয়ে থাকি গাছপালা থেকে। আমাদের আসবাবপত্রসহ নানা রকম কাঠের কাজে মেহগনি, সেগুন, শাল, গর্জন ইত্যাদি বৃক্ষের কাঠ ব্যবহূত হয়। রাবারগাছ থেকে রাবার ও কর্পূর গাছ থেকে কর্পূর পাই। তুলা ও পাট বহুল পরিচিত তন্তু উৎপাদনকারী গাছ। কাগজ, রেয়ন, প্লাইউড, প্লাস্টিক, তারপিন, কয়লা, মোম, রং আঠা ইত্যাদি তৈরিতেও গাছপালা আমাদের কাজে লাগে।
ওষুধ তৈরিতে গাছপালা: আমাদের পরিবেশে কিছু গাছপালা আছে যেগুলোকে আমরা ভেষজ উদ্ভিদ বলে থাকি। সেগুলোর লতা, পাতা, ছাল, কিংবা শেকড় ওষুধ তৈরিতে ব্যবহূত হয়। সিঙ্কোনি গাছ ম্যালেরিয়ার ওষুধ কুইনাইন তৈরিতে কাজে লাগে। কালমেঘ, নয়নতারা, আসামলতা, শ্বেতচন্দন ইত্যাদি উদ্ভিদ ভেষজ গুণসম্পন্ন।
সৌন্দর্য বর্ধনে গাছপালা: বসতবাড়ির শোভা বা সৌন্দর্য বর্ধন ও উদ্যান রচনায়ও গাছের জুড়ি নেই। চন্দ্রমল্লিকা, জিনিয়া, গাঁদা, দোপাটি, চাঁপা, করবি, কাঁঠালিচাপা, জবা, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জুঁই ইত্যাদি ফুল এবং নানা রকমের অর্কিড ও পাতাবাহারগাছ পরিবেশকে শোভন ও সুন্দর করে। কোনো কোনো গাছ আবার অঙ্গসৌন্দর্য ও সৌরভের জন্য বিখ্যাত। যেমন চন্দন।
উপসংহার: মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে গাছের তুলনা নেই। গাছপালা না থাকলে পরিবেশ হয়ে উঠত উষ্ণ। পৃথিবী হয়ে উঠত মরুভূমি। মানুষের অস্তিত্ব হতো বিপন্ন। তাই ইচ্ছেমতো গাছ কাটা ও বন উজাড় করা ঠিক নয়। সর্বত্র গাছ লাগানোর উদ্যোগ বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’ এই স্লোগানের যথার্থতা অনুধাবন করে আমরা গাছ লাগাব এবং পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা করব।

2 comments: