শহীদ তিতুমীর
ভূমিকা: অসহায় ও নিপীড়িত মানুষের দরদি বন্ধু তিতুমীর। ইংরেজ শাসন ও শোষণ থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য তিনি সংগ্রাম করেছেন। একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হলেও অন্য ধর্মের প্রতিও ছিল তাঁর গভীর শ্রদ্ধা। তাই ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এই অকুতোভয় বীরকে দুর্ভেদ্য বাঁশের কেল্লা তৈরিতে সহযোগিতা করে ছিলেন জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষ।
জন্ম ও শৈশব: ১৭৮২ সালে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বশিরহাট মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে তিতুমীরের জন্ম। বনেদি মুসলিম পরিবারের সৈয়দ বংশে জন্ম নেওয়া এই ছোট্ট শিশুটি ছিল যেমন দেখতে সুন্দর, তেমনই বলিষ্ঠ গড়ন। এই শিশুটির একবার কঠিন অসুখ হয়। রোগ সারানোর জন্য তাকে দেওয়া হয় ভীষণ তেতো ওষুধ। প্রায় ১০-১২ দিন এই তেতো ওষুধ শিশুটি আনন্দের সঙ্গে সেবন করে। এ জন্য তার ডাকনাম রাখা হয় তেতো। তেতো থেকে তিতু। এর সঙ্গে মীর লাগিয়ে হয় তিতুমীর। তবে তাঁর প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী।
শিক্ষাজীবন: তিতুমীরের গ্রামে ছিল একটি মাদরাসা। সেখানে শিক্ষক ছিলেন ধর্মপ্রাণ একজন হাফেজ নাম নেয়ামত উল্লাহ। তিতুমীর সেই মাদরাসায় পড়তেন। অল্প সময়েই হাফেজ নেয়ামত উল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন তিতুমীর। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি তিনি মুষ্টিযুদ্ধ, লাঠিখেলা, তীর ছোড়া ও অসিচালনা শেখেন। এর পর ওস্তাদের সঙ্গে বিহার সফরে এসে তিতুমীর মানুষের দুরবস্থা প্রত্যক্ষ করেন। মানুষের দুরবস্থা দেখে তাঁর মনে দেশ স্বাধীন করার চিন্তা আসে।
সংগ্রামী জীবনের শুরু: ১৮২২ সাল। তিতুমীরের বয়স তখন ৪০। তিনি হজ পালন করতে মক্কায় গেলেন। সেখানে পরিচয় হলো ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, সংগ্রামী পুরুষ, ধর্মপ্রাণ হজরত শাহ সৈয়দ আহমেদ বেরলভির সঙ্গে। তিতুমীর তাঁর শিষ্য হয়ে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে, নীলকরদের রুখতে সবাইকে সংগঠিত হতে আহ্বান জানান। কিন্তু প্রথমেই বাধা পান জমিদারদের কাছ থেকে। সংগ্রামের শুরুতেই তাঁর ওপর শুরু হয় অত্যাচার। নিজ গ্রাম ছেড়ে তিনি বারাসাতের নারিকেলবাড়িয়া চলে যান।
বাঁশের কেল্লা তৈরি: নারিকেলবাড়িয়া আসার পর সেখানকার লোকজন তিতুমীরকে সাদরে গ্রহণ করে। হাজার হাজার সাধারণ মানুষ সঙ্গে নিয়ে তিনি তৈরি করেন এক দুর্ভেদ্য বাঁশের দুর্গ। এটাই নারিকেলবাড়িয়ার ‘বাঁশের কেল্লা’ নামে ইতিহাস বিখ্যাত। এই দুর্গে তিনি তাঁর শিষ্যদের লড়াইয়ের শিক্ষা দিতে শুরু করেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করার কৌশল শেখানোর পাশাপাশি তাদের আক্রমণ করার প্রস্তুতিও নিতে থাকেন।
ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ: তিতুমীরের ইংরেজবিরোধী সংগ্রামের প্রস্তুতির খবর ইংরেজ শাসকগোষ্ঠীর কাছে চলে যায়। ইংরেজদের সঙ্গে হাত মেলায় দেশি জমিদারেরা। ১৮৩০ সালে ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারকে পাঠানো হয় তিতুমীরকে দমন করার জন্য। কিন্তু আলেকজান্ডার তার বাহিনী নিয়ে পরাস্ত হয় তিতুমীরের হাতে। তিতুমীর কয়েকটি নীলকুঠি দখল করে নেন। তারপর ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর তৎকালীন ভারতবর্ষের গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক কর্নেল স্টুয়ার্ডের নেতৃত্বে বিরাট সেনাবহর পাঠান তিতুমীরকে শায়েস্তা করার জন্য। কর্নেল স্টুয়ার্ড বিরাট সেনাবহর আর গোলন্দাজ বাহিনী নিয়ে আক্রমণ করে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা। স্টুয়ার্ডের ছিল হাজার হাজার প্রশিক্ষিত সেনা আর অজস্র গোলাবারুদ। তিতুমীরের ছিল মাত্র চার-পাঁচ হাজার স্বাধীনতাপ্রিয় সৈনিক। তাঁর না ছিল কামান, না ছিল গোলাবারুদ-বন্দুক। তবুও প্রচণ্ড যুদ্ধ হলো। তিতুমীর আর তাঁর বীর সৈনিকেরা প্রাণপণ যুদ্ধ করলেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ইংরেজ সেনাদের গোলার আঘাতে ছারখার হয়ে যায় নারিকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লা। শহীদ হলেন বীর তিতুমীর। শহীদ হলেন অসংখ্য মুক্তিকামী বীর সৈনিক। তিতুমীরের ২৫০ জন সৈন্যকে ইংরেজরা বন্দী করল। তাঁদের কারও হলো কারাদণ্ড, কারও হলো ফাঁসি। এভাবেই শেষ হলো যুদ্ধ।
উপসংহার: আজ থেকে প্রায় পৌনে ২০০ বছর আগে তিতুমীর পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাযুদ্ধে বীর তিতুমীরই হলেন বাংলার প্রথম শহীদ। আমরা তাঁকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।
ভূমিকা: অসহায় ও নিপীড়িত মানুষের দরদি বন্ধু তিতুমীর। ইংরেজ শাসন ও শোষণ থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য তিনি সংগ্রাম করেছেন। একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হলেও অন্য ধর্মের প্রতিও ছিল তাঁর গভীর শ্রদ্ধা। তাই ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এই অকুতোভয় বীরকে দুর্ভেদ্য বাঁশের কেল্লা তৈরিতে সহযোগিতা করে ছিলেন জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষ।
জন্ম ও শৈশব: ১৭৮২ সালে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বশিরহাট মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে তিতুমীরের জন্ম। বনেদি মুসলিম পরিবারের সৈয়দ বংশে জন্ম নেওয়া এই ছোট্ট শিশুটি ছিল যেমন দেখতে সুন্দর, তেমনই বলিষ্ঠ গড়ন। এই শিশুটির একবার কঠিন অসুখ হয়। রোগ সারানোর জন্য তাকে দেওয়া হয় ভীষণ তেতো ওষুধ। প্রায় ১০-১২ দিন এই তেতো ওষুধ শিশুটি আনন্দের সঙ্গে সেবন করে। এ জন্য তার ডাকনাম রাখা হয় তেতো। তেতো থেকে তিতু। এর সঙ্গে মীর লাগিয়ে হয় তিতুমীর। তবে তাঁর প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী।
শিক্ষাজীবন: তিতুমীরের গ্রামে ছিল একটি মাদরাসা। সেখানে শিক্ষক ছিলেন ধর্মপ্রাণ একজন হাফেজ নাম নেয়ামত উল্লাহ। তিতুমীর সেই মাদরাসায় পড়তেন। অল্প সময়েই হাফেজ নেয়ামত উল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন তিতুমীর। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি তিনি মুষ্টিযুদ্ধ, লাঠিখেলা, তীর ছোড়া ও অসিচালনা শেখেন। এর পর ওস্তাদের সঙ্গে বিহার সফরে এসে তিতুমীর মানুষের দুরবস্থা প্রত্যক্ষ করেন। মানুষের দুরবস্থা দেখে তাঁর মনে দেশ স্বাধীন করার চিন্তা আসে।
সংগ্রামী জীবনের শুরু: ১৮২২ সাল। তিতুমীরের বয়স তখন ৪০। তিনি হজ পালন করতে মক্কায় গেলেন। সেখানে পরিচয় হলো ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, সংগ্রামী পুরুষ, ধর্মপ্রাণ হজরত শাহ সৈয়দ আহমেদ বেরলভির সঙ্গে। তিতুমীর তাঁর শিষ্য হয়ে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে, নীলকরদের রুখতে সবাইকে সংগঠিত হতে আহ্বান জানান। কিন্তু প্রথমেই বাধা পান জমিদারদের কাছ থেকে। সংগ্রামের শুরুতেই তাঁর ওপর শুরু হয় অত্যাচার। নিজ গ্রাম ছেড়ে তিনি বারাসাতের নারিকেলবাড়িয়া চলে যান।
বাঁশের কেল্লা তৈরি: নারিকেলবাড়িয়া আসার পর সেখানকার লোকজন তিতুমীরকে সাদরে গ্রহণ করে। হাজার হাজার সাধারণ মানুষ সঙ্গে নিয়ে তিনি তৈরি করেন এক দুর্ভেদ্য বাঁশের দুর্গ। এটাই নারিকেলবাড়িয়ার ‘বাঁশের কেল্লা’ নামে ইতিহাস বিখ্যাত। এই দুর্গে তিনি তাঁর শিষ্যদের লড়াইয়ের শিক্ষা দিতে শুরু করেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করার কৌশল শেখানোর পাশাপাশি তাদের আক্রমণ করার প্রস্তুতিও নিতে থাকেন।
ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ: তিতুমীরের ইংরেজবিরোধী সংগ্রামের প্রস্তুতির খবর ইংরেজ শাসকগোষ্ঠীর কাছে চলে যায়। ইংরেজদের সঙ্গে হাত মেলায় দেশি জমিদারেরা। ১৮৩০ সালে ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারকে পাঠানো হয় তিতুমীরকে দমন করার জন্য। কিন্তু আলেকজান্ডার তার বাহিনী নিয়ে পরাস্ত হয় তিতুমীরের হাতে। তিতুমীর কয়েকটি নীলকুঠি দখল করে নেন। তারপর ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর তৎকালীন ভারতবর্ষের গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক কর্নেল স্টুয়ার্ডের নেতৃত্বে বিরাট সেনাবহর পাঠান তিতুমীরকে শায়েস্তা করার জন্য। কর্নেল স্টুয়ার্ড বিরাট সেনাবহর আর গোলন্দাজ বাহিনী নিয়ে আক্রমণ করে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা। স্টুয়ার্ডের ছিল হাজার হাজার প্রশিক্ষিত সেনা আর অজস্র গোলাবারুদ। তিতুমীরের ছিল মাত্র চার-পাঁচ হাজার স্বাধীনতাপ্রিয় সৈনিক। তাঁর না ছিল কামান, না ছিল গোলাবারুদ-বন্দুক। তবুও প্রচণ্ড যুদ্ধ হলো। তিতুমীর আর তাঁর বীর সৈনিকেরা প্রাণপণ যুদ্ধ করলেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ইংরেজ সেনাদের গোলার আঘাতে ছারখার হয়ে যায় নারিকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লা। শহীদ হলেন বীর তিতুমীর। শহীদ হলেন অসংখ্য মুক্তিকামী বীর সৈনিক। তিতুমীরের ২৫০ জন সৈন্যকে ইংরেজরা বন্দী করল। তাঁদের কারও হলো কারাদণ্ড, কারও হলো ফাঁসি। এভাবেই শেষ হলো যুদ্ধ।
উপসংহার: আজ থেকে প্রায় পৌনে ২০০ বছর আগে তিতুমীর পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাযুদ্ধে বীর তিতুমীরই হলেন বাংলার প্রথম শহীদ। আমরা তাঁকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।
No comments:
Post a Comment