4.9.11

বাংলা: রচনা-গানের দেশ প্রাণের উল্লাস

প্রবন্ধ রচনা
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ বাংলার ‘গানের দেশেপ্রাণের উল্লাস’ বিষয়ের ওপর একটি দরকারি প্রবন্ধ দেওয়া হলো।
গানের দেশে প্রাণের উল্লাস
ভূমিকা: ছয় ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতুতে প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটে। সেই পরিবর্তনের ছাপ পড়ে মানুষের মনে আর জেগে ওঠে নানা ধরনের ভাব। মানুষের মনে জেগে ওঠা এই ভাবেরই প্রতিফলন ঘটে কথায়, কাব্যে ও সংগীতে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নানাবিধ বৈশিষ্ট্যও প্রতিফলিত হয় গানের ভাবে, কথায় আর সুরে। প্রাণের উল্লাসে মানুষ গেয়ে থাকে গান। সে জন্য এ দেশকে বলা হয় গানের দেশ।
উদ্দীপনা সৃষ্টিতে সংগীত: প্রাচীনকাল থেকে মানুষ ভাব প্রকাশ করার জন্য গান করে এসেছে। কাজে উদ্দীপনা সৃষ্টির জন্য শ্রমজীবী মানুষ সমস্বরে গান করে থাকে। এগুলোকে বলা হয় শ্রমসংগীত। শ্রমজীবী মানুষ ছাদ পেটায় আর কষ্ট কমানোর জন্য সমস্বরে ছাদ পেটানোর গান গায়। ধান কাটার সময়, ফসল তোলার সময় কৃষক গান করে। এভাবে মানুষ শ্রমের সঙ্গে বিনোদন যুক্ত করে শ্রমকে আনন্দদায়ক করে তোলে।
সংগীত সাধনা: গান শোনা যত সহজ, গান গাওয়া তত সহজ নয়। সংগীত সাধনা একটি কঠিন সাধনা। সংগীতে পারদর্শী হওয়ার জন্য প্রতিদিন রেওয়াজ করতে হয়। উপযুক্ত গুরুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী সাধনা করলে সংগীত জগতে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়।
উপমহাদেশের বিখ্যাত সংগীত সাধক: সুকণ্ঠ গায়ক আর সুকণ্ঠী গায়িকা সবার প্রিয়। চিরকাল এই উপমহাদেশের বিখ্যাত সংগীত সাধকেরা পৃথিবীর মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করে এসেছেন। আব্বাস উদ্দীন, আবদুল আলীম কণ্ঠসংগীতে এবং ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ও ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ যন্ত্রসংগীতে আমাদের দেশের গৌরব। তাঁরা চিরকাল সংগীত সাধনা করেছেন। সে জন্য তাঁদের বলা হয় সংগীত সাধক।
সংগীতের ক্ষেত্র: সংগীতের দুটি ক্ষেত্র আছে। এক. কণ্ঠসংগীত, দুই. যন্ত্রসংগীত। সচরাচর কণ্ঠসংগীতের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহূত হয় যন্ত্রসংগীত। তবে শুধু কণ্ঠসংগীত যেমন সম্ভব, তেমনি শুধু যন্ত্রসংগীতও সম্ভব।
সংগীতে ব্যবহূত বাদ্যযন্ত্র: সংগীতে ব্যবহূত হয় অনেক রকম বাদ্যযন্ত্র। সাধারণত কণ্ঠসংগীতের সহযোগী হিসেবে বাঁশি, ঢোল, তবলা, করতার, খোল, খঞ্জনি, মাদল, হারমোনিয়াম, একতারা, দোতারা, সেতার, সরোদ ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহূত হয়। এসব যন্ত্র যাঁরা ব্যবহার করেন তাঁদেরও ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে। বাঁশি বাজান যিনি তাঁকে বলা হয় বংশীবাদক, ঢোল বাজান যিনি তাঁকে বলা হয় ঢুলি, যিনি তবলা বাজান তাঁকে বলা হয় তবলচি।
গ্রামবাংলার সংগীত: গ্রামবাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যেও সংগীতচর্চার ঐতিহ্য রয়েছে। এসব গানকে সাধারণভাবে লোকসংগীত বলা হয়। লোকসংগীতে সমৃদ্ধ আমাদের দেশের কোনো অঞ্চলে আছে ভাওয়াইয়া, কোনো অঞ্চলে ভাটিয়ালি, কোনো অঞ্চলে বাউল গান, আবার কোনো অঞ্চলে আছে মাইজভাণ্ডারি। এসব আঞ্চলিক গানের মধ্যে নারীশিল্পীদেরও অবদান আছে। এগুলোকে বলা হয় মেয়েলি গীত।
উপসংহার: আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশের মানুষ সংগীতের জগতে বিচরণ করছে। আনন্দ কিংবা দুঃখ প্রকাশ করার জন্য মানুষ গান রচনা করেছে। সেই গান গেয়েছে। অন্যরা সেই গান শুনেছে। এ দেশের দোয়েল-শ্যামার সুমধুর কলকাকলির মতো, নদীর কলতানের মতো, এসব গান আমাদের জীবনের সঙ্গে মিশে আছে। ধান উৎপাদন করে আমরা যেমন জীবন রক্ষা করি, তেমনি গানের মাধ্যমে আমরা অন্তরের আবেগ ও প্রাণের উল্লাস প্রকাশ করি। তাই তো বলা হয় ‘ধানের দেশ, গানের দেশ, এই আমাদের বাংলাদেশ।’

No comments:

Post a Comment