প্রশ্ন: পরিবেশদূষণের কারণ লেখো। পরিবেশদূষণের প্রভাবে কী কী সমস্যা দেখা দেয়?
উত্তর: পরিবেশ নানাভাবে দূষিত হয়। তবে পরিবেশদূষণের প্রধান কারণ হলো জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত লোকের খাদ্য জোগাতে আমরা জমিতে কীটনাশক ও কৃত্রিম সার ব্যবহার করি। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে গাছ কাটি। পাখি শিকার করি। খালবিল ভরাট করে বসতি, দোকানপাট গড়ে তুলি। পাহাড় কেটে সমভূমি গড়ি। যেখানে-সেখানে গাড়ির হর্ন দিই। উচ্চ শব্দে মাইক বাজাই। গাড়ি থেকে কালো ধোঁয়া বাতাসে ছেড়ে দিয়ে বাতাস দূষিত করি। কলকারখানার বর্জ্য নদীতে ও খোলা জায়গায় ফেলি। এভাবে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান, যেমন—মাটি, পানি, বায়ু ইত্যাদি দূষিত হয়।
এ ছাড়া বিভিন্নভাবে আমরা পরিবেশ দূষিত করে চলেছি। যেমন—ইটের ভাটায় গাছ পুড়িয়ে, যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে, রাস্তা কেটে ও রাস্তার ওপর স্তূপাকার জিনিস রেখে। সরকার পরিবেশ রক্ষার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করছে। এসব আইন না মানার কারণে পরিবেশ দূষিত হয়। এ ছাড়া পরিবেশ সম্পর্কে আমদের শিক্ষার অভাব ও অসচেতনতাও পরিবেশদূষণের অন্যতম কারণ।
পরিবেশদূষণের প্রভাবে সমস্যা: আমাদের দেশে পরিবেশদূষণজনিত সমস্যা দিনে দিনে বাড়ছে। দূষিত পরিবেশ সব জীব ও প্রাণীর বসবাসের জন্য ক্ষতিকর। দূষণের কারণে সৃষ্ট অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করলে আমাদের নানা রকম অসুখ-বিসুখ হয়। আজকাল আমাদের দেশে ফুসফুসের রোগসহ বিভিন্ন রোগ বেড়ে গেছে। এর প্রধান কারণ বায়ু ও পানিদূষণ। মাটিদূষণ খাদ্যগুণ নষ্ট করে। এ ধরনের খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রাণী। প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। মৎস্যসম্পদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। বন উজাড় হচ্ছে। সামাজিক পরিবেশে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা। দেখা দিচ্ছে আরও নানা ধরনের পরিবেশগত সমস্যা।
প্রশ্ন: পরিবেশ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা এবং পরিবেশ রক্ষায় নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য লেখো।
উত্তর: আমাদের এই দেশকে এবং এই পৃথিবীকে সবার বসবাসের উপযোগী রাখতে হলে পরিবেশ হতে হবে দূষণমুক্ত, নির্মল, সুন্দর এবং সবার জন্য নিরাপদ। পরিবেশকে দূষণমুক্ত ও নির্মল রাখতে নিচের কাজগুলো করা যেতে পারে:
১। আমরা বেশি করে গাছ লাগাব এবং গাছের যত্ন নেব।
২। পাহাড় কাটব না, জলাভূমি ভরাট করব না।
৩। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলব।
৪। পরিবেশবান্ধব সার, কীটনাশক, যানবাহন ব্যবহার করব।
৫। শিল্প কল-কারখানার বর্জ্য নদীতে বা যেখানে-সেখানে না ফেলে যথাযথভাবে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করব।
৬। বাড়ির আঙিনা, বিদ্যালয়, রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখব।
পরিবেশ রক্ষায় নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য: নাগরিক হিসেবে আমাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। নাগরিকের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এলাকার পরিবেশ সুন্দর রাখাও আমাদের দায়িত্ব। সরকার পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন ধরনের আইন প্রণয়ন করেছে—গ্রহণ করেছে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড। যেমন—পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। অতিথি পাখি ধরা ও শিকার করা আইনত নিষিদ্ধ। পাহাড় কাটা ও জলাভূমি ভরাট ইত্যাদি বেআইনি কাজ। নাগরিক হিসেবে এসব আইন মেনে চলা আমাদের কর্তব্য। সমাজের অন্যরাও যেন এসব আইন মেনে চলে সে বিষয়ে আমাদের লক্ষ রাখা উচিত। এ ছাড়া সরকার পরিবেশ রক্ষার জন্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। যেমন—বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ইত্যাদি। এসব কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণ করাও আমাদের প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের কয়েকটি প্রধান পরিবেশগত সমস্যা লেখো।
উত্তর: আমরা পরিবেশে জন্মগ্রহণ করি। পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকি। কিন্তু পরিবেশদূষণের কারণে আমাদের দেশে দেখা দিয়েছে নানাবিধ সমস্যা। নিচে আমাদের দেশে পরিবেশদূষণের ফলে সৃষ্ট কয়েকটি পরিবেশগত সমস্যা তুলে ধরা হলো—
সামাজিক সমস্যা:
১। ঘনবসতি ২। বস্তি সমস্যা
৩। অপরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট ৪। যানজট
৫। যানবাহনে ভিড় ৬। সামাজিক অবক্ষয়
৭। স্বাস্থ্য সমস্যা ৮। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব
প্রাকৃতিক পরিবেশগত সমস্যা:
১। পানিদূষণ ২। শব্দদূষণ
৩। বায়ুদূষণ ৪। মাটিদূষণ
৫। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ৬। প্লাবন ও বন্যা
৭। জলাবদ্ধতা ৮। মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি
৯। মরুকরণ ১০। প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ হ্রাস।
No comments:
Post a Comment