অধ্যায়-১০
প্রশ্ন: জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ও জাতীয় জীবনে এর সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর: জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির ফলে আমাদের জাতীয় জীবনে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা হলো: বেকার সমস্যা, নিম্ন মাথাপিছু আয়, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার, পরিবেশদূষণ।
বেকার সমস্যা: বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় সম্পদের অভাবে অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য রাষ্ট্র কাজের ব্যবস্থা করতে পারছে না। ফলে অনেক লোক বেকার জীবন যাপন করছে।
নিম্ন মাথাপিছু আয়: এ দেশে সম্পদ সীমিত। বেকার সমস্যাও প্রকট। ফলে বার্ষিক মাথাপিছু আয় খুবই কম। ২৬ হাজার টাকা মাত্র (৪২১ ইউএস ডলার, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০০৪)। নিম্ন মাথাপিছু আয় নিম্নমানের জীবনযাত্রার একটি অন্যতম কারণ।
আইনশৃঙ্খলার অবনতি: দ্রুত জনসংখ্যার বৃদ্ধি ফলে এ দেশে জীবনযাত্রার মান নিম্নপর্যায়ের। ফলে অভাবগ্রস্ত হয়ে কেউ কেউ জীবিকার তাগিদে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদিতে লিপ্ত হয়। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। আমরা রাস্তাঘাটে চলতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করি।
প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার: মানুষের বেঁচে থাকার জন্য নানা উপাদান প্রয়োজন। যেমন—পানি, খাদ্য, বাসস্থান ইত্যাদি। প্রকৃতি থেকে মানুষ এগুলো পেয়ে থাকে। লোকসংখ্যা বেশি হলে এগুলো বেশি সংগৃহীত হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদ সীমিত। অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তা দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
পরিবেশদূষণ: চারপাশের প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ নিয়েই আমাদের পরিবেশ। কিন্তু অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে একদিকে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন দূষিত হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে সামাজিক পরিবেশেও দেখা দিয়েছে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা। ফলে সামগ্রিকভাবে বসবাসের পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে।
প্রশ্ন: জীবনযাত্রার মানের ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর: জীবনযাত্রার মানের ওপর রয়েছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, যানবাহন, আবাদি জমি ইত্যাদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
জনসংখ্যা ও খাদ্য: জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেলে খাদ্য গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে খাদ্যঘাটতি দেখা দেয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ টন খাদ্যঘাটতি দেখা দেয়। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এ ক্ষেত্রে একটি বিরাট সমস্যা। খাদ্যঘাটতির ফলে দেশের অনেক লোক দারিদ্র্য ও অপুষ্টির শিকার।
জনসংখ্যা ও বস্ত্র: খাদ্যের পরেই সুন্দর জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজন পরিধেয় বস্ত্র। কিন্তু পরিবারে লোকসংখ্যা বেশি হলে অনেক ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড়, বিদ্যালয়ের পোশাক ইত্যাদি কিনে দেওয়া সম্ভব হয় না। পরিবারে লোকসংখ্যা কম হলে এ সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা কম।
জনসংখ্যা ও বাসস্থান: লোকসংখ্যা বেশি হলে সবার জন্য বাসস্থান তৈরি একটি কঠিন সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমানে দেশে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে প্রতিবছর আড়াই লাখের মতো অতিরিক্ত গৃহের প্রয়োজন। সীমিত সম্পদের কারণে সরকারের পক্ষে এ প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। শহরে গড়ে উঠছে বস্তি। অনেক লোকই বাসস্থানের অভাবে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করে। এ ছাড়া বাড়তি লোকের জন্য বাসস্থান তৈরি করায় আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। গাছপালা ও বনজঙ্গল উজাড় হচ্ছে। ফলে সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যস্ত হচ্ছে।
জনসংখ্যা ও শিক্ষা: দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নিরক্ষর। জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি এ অবস্থার জন্য প্রধানত দায়ী। দেশের সীমিত সম্পদ দিয়ে সরকারের পক্ষে বাড়তি জনসংখ্যার জন্য শিক্ষার সুযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে পরিবার বড় হওয়ায় ও দারিদ্র্যের কারণে অনেক বাবা-মা নিজেরাও সন্তানদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারেন না। ফলে বিদ্যালয়ে পড়ার উপযোগী শিশু-কিশোরদের অনেকেই শিক্ষালাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জনসংখ্যা ও চিকিৎসা: জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি চিকিৎসাসুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি প্রধান প্রতিবন্ধকতা। আমাদের দেশে প্রতি চার হাজার ৪৩ জন ব্যক্তির জন্য মাত্র একজন যোগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসক রয়েছেন। এ ছাড়া হাসপাতালে যে চিকিৎসাসুবিধা রয়েছে তার চেয়ে চিকিৎসাপ্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে মিল রেখে দেশে চিকিৎসাসুবিধার প্রসার সম্ভব হচ্ছে না বলেই লোকজন প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জনসংখ্যা যদি দ্রুত বৃদ্ধি না পেত তাহলে হয়তো এ সমস্যার সৃষ্টি হতো না।
জনসংখ্যা ও যানবাহন: জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির কারণে লেখাপড়া, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের পরিমাণও বেড়েছে। যানবাহনের সংখ্যাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে যানজট ও অতিরিক্ত যানবাহনের ধোঁয়ায় বাতাস দূষিত হচ্ছে। অনেক সময় এই অতিরিক্ত যানবাহন দিয়েও বাড়তি লোকের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে।
জনসংখ্যা ও আবাদি জমি: বর্ধনশীল জনসংখ্যার জন্য ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ইত্যাদি তৈরি মাথাপিছু জমির পরিমাণ হ্রাসের অন্যতম প্রধান কারণ। ফলে দেশে খাদ্যসংকট দেখা দেয়।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির কারণগুলো বর্ণনা করো।
উত্তর: সাধারণভাবে জনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে তিনটি কারণে। যথা—জন্ম, মৃত্যু ও দেশান্তর। জন্মহার মৃত্যুহারের চেয়ে বেশি হলে জনসংখ্যা বাড়ে। এ ছাড়া বহিরাগমনের ফলে অধিকসংখ্যক বিদেশি এসে বসবাস শুরু করলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তবে বাংলাদেশে বহিরাগমনের সংখ্যা খুব কম। সাধারণত বাংলাদেশে অধিক জন্মহারের ফলেই জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিক জন্মহারের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে—শিক্ষার অভাব, নারীশিক্ষার অভাব, বাল্যবিবাহ, অধিক শিশুমৃত্যু, পুত্রসন্তানের প্রত্যাশা।
শিক্ষার অভাব: আমাদের দেশে সাক্ষরতার হার অনেক কম। লোকজন শিক্ষিত হলে নিজের ভালো-মন্দ সম্পর্কে সচেতন থাকে। পরিবার, সমাজ ও দেশের কল্যাণের কথা ভাবে। ফলে পরিবার ছোট রাখে কিন্তু শিক্ষার অভাবে আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়ে সচেতন নয়।
নারীশিক্ষার অভাব: নারী সাক্ষরতার হার খুবই কম। গ্রামে এই হার আরও কম। সাক্ষরতার নিম্নহার দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ।
বাল্যবিবাহ: বাংলাদেশে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। কিন্তু এখনো বাল্যবিবাহ প্রচলিত আছে। বিশেষ করে গ্রাম এলাকায় এবং দরিদ্র পরিবারে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। ফলে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
অধিক শিশুমৃত্যু: অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশে শিশুদের মৃত্যুহার অনেক বেশি। শিশুদের মৃত্যুহার বেশি বলে ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাবা-মা অধিক সন্তান চান। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
পুত্রসন্তানের প্রত্যাশা: আমাদের দেশের লোকেরা পুত্রসন্তান বেশি পছন্দ করে। ফলে পুত্রসন্তানের প্রত্যাশায় পরিবারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন: আমাদের দেশে নারীর সামাজিক পদমর্যাদা বৃদ্ধির উপায়গুলো লেখো।
উত্তর: আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। কিন্তু এ দেশে মহিলারা সামাজিকভাবে অবহেলিত। এই অর্ধেক জনসংখ্যা বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নারীর উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন—১. নারীশিক্ষার প্রসার, ২. নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, ৩. নারীর সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি এবং ৪. সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ। গবেষণায় দেখা গেছে, এই দিকগুলোর উন্নতি হলে তা দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি কমাতে সহায়ক হবে। অতএব নারীর সামাজিক অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি কমাতে হলে নারীর সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। নারীর সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির মাধ্যমেই জাতীয় অগ্রগতি সম্ভব।
প্রশ্ন: জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ও জাতীয় জীবনে এর সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর: জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির ফলে আমাদের জাতীয় জীবনে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা হলো: বেকার সমস্যা, নিম্ন মাথাপিছু আয়, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার, পরিবেশদূষণ।
বেকার সমস্যা: বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় সম্পদের অভাবে অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য রাষ্ট্র কাজের ব্যবস্থা করতে পারছে না। ফলে অনেক লোক বেকার জীবন যাপন করছে।
নিম্ন মাথাপিছু আয়: এ দেশে সম্পদ সীমিত। বেকার সমস্যাও প্রকট। ফলে বার্ষিক মাথাপিছু আয় খুবই কম। ২৬ হাজার টাকা মাত্র (৪২১ ইউএস ডলার, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০০৪)। নিম্ন মাথাপিছু আয় নিম্নমানের জীবনযাত্রার একটি অন্যতম কারণ।
আইনশৃঙ্খলার অবনতি: দ্রুত জনসংখ্যার বৃদ্ধি ফলে এ দেশে জীবনযাত্রার মান নিম্নপর্যায়ের। ফলে অভাবগ্রস্ত হয়ে কেউ কেউ জীবিকার তাগিদে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদিতে লিপ্ত হয়। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। আমরা রাস্তাঘাটে চলতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করি।
প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার: মানুষের বেঁচে থাকার জন্য নানা উপাদান প্রয়োজন। যেমন—পানি, খাদ্য, বাসস্থান ইত্যাদি। প্রকৃতি থেকে মানুষ এগুলো পেয়ে থাকে। লোকসংখ্যা বেশি হলে এগুলো বেশি সংগৃহীত হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদ সীমিত। অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তা দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
পরিবেশদূষণ: চারপাশের প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ নিয়েই আমাদের পরিবেশ। কিন্তু অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে একদিকে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন দূষিত হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে সামাজিক পরিবেশেও দেখা দিয়েছে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা। ফলে সামগ্রিকভাবে বসবাসের পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে।
প্রশ্ন: জীবনযাত্রার মানের ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর: জীবনযাত্রার মানের ওপর রয়েছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, যানবাহন, আবাদি জমি ইত্যাদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
জনসংখ্যা ও খাদ্য: জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেলে খাদ্য গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে খাদ্যঘাটতি দেখা দেয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ টন খাদ্যঘাটতি দেখা দেয়। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এ ক্ষেত্রে একটি বিরাট সমস্যা। খাদ্যঘাটতির ফলে দেশের অনেক লোক দারিদ্র্য ও অপুষ্টির শিকার।
জনসংখ্যা ও বস্ত্র: খাদ্যের পরেই সুন্দর জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজন পরিধেয় বস্ত্র। কিন্তু পরিবারে লোকসংখ্যা বেশি হলে অনেক ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড়, বিদ্যালয়ের পোশাক ইত্যাদি কিনে দেওয়া সম্ভব হয় না। পরিবারে লোকসংখ্যা কম হলে এ সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা কম।
জনসংখ্যা ও বাসস্থান: লোকসংখ্যা বেশি হলে সবার জন্য বাসস্থান তৈরি একটি কঠিন সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমানে দেশে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে প্রতিবছর আড়াই লাখের মতো অতিরিক্ত গৃহের প্রয়োজন। সীমিত সম্পদের কারণে সরকারের পক্ষে এ প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। শহরে গড়ে উঠছে বস্তি। অনেক লোকই বাসস্থানের অভাবে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করে। এ ছাড়া বাড়তি লোকের জন্য বাসস্থান তৈরি করায় আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। গাছপালা ও বনজঙ্গল উজাড় হচ্ছে। ফলে সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যস্ত হচ্ছে।
জনসংখ্যা ও শিক্ষা: দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নিরক্ষর। জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি এ অবস্থার জন্য প্রধানত দায়ী। দেশের সীমিত সম্পদ দিয়ে সরকারের পক্ষে বাড়তি জনসংখ্যার জন্য শিক্ষার সুযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে পরিবার বড় হওয়ায় ও দারিদ্র্যের কারণে অনেক বাবা-মা নিজেরাও সন্তানদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারেন না। ফলে বিদ্যালয়ে পড়ার উপযোগী শিশু-কিশোরদের অনেকেই শিক্ষালাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জনসংখ্যা ও চিকিৎসা: জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি চিকিৎসাসুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি প্রধান প্রতিবন্ধকতা। আমাদের দেশে প্রতি চার হাজার ৪৩ জন ব্যক্তির জন্য মাত্র একজন যোগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসক রয়েছেন। এ ছাড়া হাসপাতালে যে চিকিৎসাসুবিধা রয়েছে তার চেয়ে চিকিৎসাপ্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে মিল রেখে দেশে চিকিৎসাসুবিধার প্রসার সম্ভব হচ্ছে না বলেই লোকজন প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জনসংখ্যা যদি দ্রুত বৃদ্ধি না পেত তাহলে হয়তো এ সমস্যার সৃষ্টি হতো না।
জনসংখ্যা ও যানবাহন: জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির কারণে লেখাপড়া, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের পরিমাণও বেড়েছে। যানবাহনের সংখ্যাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে যানজট ও অতিরিক্ত যানবাহনের ধোঁয়ায় বাতাস দূষিত হচ্ছে। অনেক সময় এই অতিরিক্ত যানবাহন দিয়েও বাড়তি লোকের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে।
জনসংখ্যা ও আবাদি জমি: বর্ধনশীল জনসংখ্যার জন্য ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ইত্যাদি তৈরি মাথাপিছু জমির পরিমাণ হ্রাসের অন্যতম প্রধান কারণ। ফলে দেশে খাদ্যসংকট দেখা দেয়।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির কারণগুলো বর্ণনা করো।
উত্তর: সাধারণভাবে জনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে তিনটি কারণে। যথা—জন্ম, মৃত্যু ও দেশান্তর। জন্মহার মৃত্যুহারের চেয়ে বেশি হলে জনসংখ্যা বাড়ে। এ ছাড়া বহিরাগমনের ফলে অধিকসংখ্যক বিদেশি এসে বসবাস শুরু করলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তবে বাংলাদেশে বহিরাগমনের সংখ্যা খুব কম। সাধারণত বাংলাদেশে অধিক জন্মহারের ফলেই জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিক জন্মহারের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে—শিক্ষার অভাব, নারীশিক্ষার অভাব, বাল্যবিবাহ, অধিক শিশুমৃত্যু, পুত্রসন্তানের প্রত্যাশা।
শিক্ষার অভাব: আমাদের দেশে সাক্ষরতার হার অনেক কম। লোকজন শিক্ষিত হলে নিজের ভালো-মন্দ সম্পর্কে সচেতন থাকে। পরিবার, সমাজ ও দেশের কল্যাণের কথা ভাবে। ফলে পরিবার ছোট রাখে কিন্তু শিক্ষার অভাবে আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়ে সচেতন নয়।
নারীশিক্ষার অভাব: নারী সাক্ষরতার হার খুবই কম। গ্রামে এই হার আরও কম। সাক্ষরতার নিম্নহার দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ।
বাল্যবিবাহ: বাংলাদেশে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। কিন্তু এখনো বাল্যবিবাহ প্রচলিত আছে। বিশেষ করে গ্রাম এলাকায় এবং দরিদ্র পরিবারে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। ফলে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
অধিক শিশুমৃত্যু: অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশে শিশুদের মৃত্যুহার অনেক বেশি। শিশুদের মৃত্যুহার বেশি বলে ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাবা-মা অধিক সন্তান চান। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
পুত্রসন্তানের প্রত্যাশা: আমাদের দেশের লোকেরা পুত্রসন্তান বেশি পছন্দ করে। ফলে পুত্রসন্তানের প্রত্যাশায় পরিবারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন: আমাদের দেশে নারীর সামাজিক পদমর্যাদা বৃদ্ধির উপায়গুলো লেখো।
উত্তর: আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। কিন্তু এ দেশে মহিলারা সামাজিকভাবে অবহেলিত। এই অর্ধেক জনসংখ্যা বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নারীর উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন—১. নারীশিক্ষার প্রসার, ২. নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, ৩. নারীর সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি এবং ৪. সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ। গবেষণায় দেখা গেছে, এই দিকগুলোর উন্নতি হলে তা দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি কমাতে সহায়ক হবে। অতএব নারীর সামাজিক অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি কমাতে হলে নারীর সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। নারীর সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির মাধ্যমেই জাতীয় অগ্রগতি সম্ভব।
No comments:
Post a Comment