8.9.11

বাংলা: রচনা- যোগাযোগের সেকাল-একাল

প্রবন্ধ রচনা
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ বাংলা বিষয়ের ‘যোগাযোগের সেকাল-একাল’ প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করবো।

যোগাযোগের সেকাল-একাল

ভূমিকা: যোগাযোগ বলতে অন্যকে কোনো কিছু জানানোর উপায় বা কৌশল বোঝায়। মানুষ লিখে, বলে বা সংকেত ব্যবহার করে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। যোগাযোগ ছাড়া মানুষ চলতে পারে না। তাই বলা হয়, যে জাতির যোগাযোগব্যবস্থা যত উন্নত, সে জাতি তত উন্নত।
যোগাযোগের সেকাল: মানুষের জীবনে যোগাযোগের সূচনা আদিকাল থেকে। ভাষা আবিষ্কার যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। লেখা আবিষ্কারের আগে মানুষ হাত নেড়ে, চিৎকার করে, ঢাকঢোল বাজিয়ে এবং আগুন বা ধোঁয়া ব্যবহার করে যোগাযোগ করত।
আদিকালের বিভিন্ন যোগাযোগ-মাধ্যম: দৃষ্টিগ্রাহ্য দূরত্বে আদিম মানুষের যোগাযোগের একটা মাধ্যম ছিল আগুনের সংকেত। গাছের উঁচু ডগায় উঠে মশাল নেড়ে কিংবা আগুনের তীর ছুড়ে আদিম মানুষ শিকারিদের ফিরে আসার বা অন্য কোনো সংকেত দিত। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ ধ্বনির সাহায্যেও যোগাযোগের কাজ করেছে। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে পারস্যের সম্রাট সাইরাস তাঁর রাজ্যে কিছুটা দূরে দূরে অনেক টাওয়ার বসিয়েছিলেন। সেগুলোয় যারা প্রহরী থাকত, তারা চিৎকার করে এক টাওয়ার থেকে অন্য টাওয়ারে সংবাদ পাঠাত। আদিকালে সংবাদ জানানোর জন্য ঢোলও ব্যবহূত হতো। আফ্রিকার উপজাতিরা কাঠের ঢোল পিটিয়ে দূর-দূরান্তে সংবাদ-সংকেত পাঠাত। ভারতবর্ষের রাজারা ঢোল-শহরৎ করে রাজ্যে আদেশ-নির্দেশ জারি করতেন।
যোগাযোগের অগ্রগতি: লেখা আবিষ্কারের পর মানুষের যোগাযোগব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় এবং এককাল থেকে অন্যকালে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব হয়ে ওঠে। যোগাযোগের অগ্রগতির ক্ষেত্রে এর পরের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার এবং ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা। ছাপাখানা যোগাযোগব্যবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটায়। বই ও পত্রপত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে হাজার হাজার লোকের সঙ্গে যোগাযোগের রাস্তা খুলে যায়। বই ও পত্রপত্রিকা একদিকে মানুষের জ্ঞান সংরক্ষণের সুযোগ এনে দেয়, অন্যদিকে এককাল থেকে অন্যকালে জ্ঞান বিস্তার করাও সম্ভব হয়ে ওঠে। যোগাযোগের আরও দুটি অগ্রগতি ডাকযোগাযোগ ও টেলিযোগাযোগব্যবস্থা। প্রতিনিয়ত যোগাযোগের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে বিশ্বব্যাপী টেলিযোগাযোগব্যবস্থা। টেলিফোনে কথা বলা, কাউকে ই-মেইল পাঠানো, ফ্যাক্স মেশিনে বার্তা পাঠানো ইত্যাদি মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
যোগাযোগের একাল: যোগাযোগের একাল বা আধুনিকতম যোগাযোগের উপায় শুরু হয়েছে রেডিও বা বেতারযন্ত্র উদ্ভাবনের ফলে। বেতার বলতে বোঝায় বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগ। জরুরি যোগাযোগের জন্য সেনাবাহিনী, পুলিশ, রেডক্রস, অগ্নিনির্বাপক বাহিনী, সড়ক, রেল, নৌ ও বিমান যোগাযোগের বিভিন্ন সংস্থার কাজে আজকাল বেতার যোগাযোগ অপরিহার্য। এ কাজে ব্যবহার করা হয় ওয়াকিটকি। যোগাযোগের আরেকটি আধুনিক মাধ্যম হচ্ছে টেলিভিশন।
আধুনিক যোগাযোগে সর্বশেষ সংযোজন: আধুনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে ইন্টারনেট। এটা বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের এক বিশাল নেটওয়ার্ক। এর মাধ্যমে মানুষ এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন সারা বিশ্বের জ্ঞানসম্পদের বিপুল তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। একে সংক্ষেপে বলা হয় ওয়েব। পুরো নাম হলো ওয়াল্ড ওয়াইড ওয়েব বা www.
উপসংহার: জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত জাতির পরিচয় বহন করে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের এই যুগে নিজেকে সম্পৃক্ত করে এর সুফল ভোগ করা সবারই দরকার।