20.6.12

সমাজ :অধ্যায়-১২


প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমাদের জন্য পরিবেশ পরিচিতি সমাজ বইয়ের অধ্যায়-১২ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নমুনা প্রশ্নোত্তর ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করব।

 সঠিক শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করো।
ক. বখতিয়ার খিলজি প্রথমে — দখল করেন।
উত্তর: বখতিয়ার খিলজি প্রথমে নদীয়া দখল করেন।
খ. হোসেন শাহের আমলে শ্রীচৈতন্য — ধর্ম প্রচার করেন।
উত্তর: হোসেন শাহের আমলে শ্রীচৈতন্য বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করেন।
গ. মুর্শিদকুলী খান এ দেশের — সংস্কারের জন্য খ্যাতিমান।
উত্তর: মুর্শিদকুলী খান এ দেশের রাজস্ব সংস্কারের জন্য খ্যাতিমান।
ঘ: মধ্যযুগে সাধারণ হিন্দুরা ধুতি ও — ব্যবহার করতেন।
উত্তর: মধ্যযুগে সাধারণ হিন্দুরা ধুতি ও চাদর ব্যবহার করতেন।
ঙ. মধ্যযুগে বাংলা রকমারি — কাপড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল।
উত্তর: মধ্যযুগে বাংলা রকমারি মসলিন কাপড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল।
 নিচের শুদ্ধ উক্তিগুলোর ডান পাশে ‘শু’ এবং অশুদ্ধ উক্তিগুলোর ডান পাশে ‘অ’ লেখো।
ক. বাংলায় মুসলিম শাসনের আগে মধ্যযুগের সূচনা ঘটে।—অ
খ. বাঙ্গালাহ নামটি ইলিয়াস শাহের সময় শুরু হয়। —শু
গ. ঈসা খান সারা বাংলায় সুবাদারি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। —অ
ঘ. মধ্যযুগে বাংলার সব ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে। —শু
ঙ. মধ্যযুগে বাণিজ্যিক নগর হিসেবে ঢাকার নাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। —অ
 বাঁ পাশের কথাগুলোর সঙ্গে ডান পাশের কথাগুলোর মিল করো।
ক. ইবনে বতুতা সোনারগাঁ আসেন মোগল যুগের খাবার
খ. গ্রান্ড ট্রাংক রোড নির্মাণ করেন শেরশাহ
গ. বাংলায় আফগান শাসনের অবসান ঘটান সম্রাট আকবর
ঘ. কাবাব, রেজালা, কোরমা ইত্যাদি ছিল মুদ্রার প্রবর্তন হয়
ঙ. মোগল আমলে বিনিময়মাধ্যম হিসেবে ফখরউদ্দিন মুবারক শাহের আমলে

উত্তর: ক. ইবনে বতুতা সোনারগাঁ আসেন—ফখরউদ্দিন মুবারক শাহের আমলে
খ. গ্রান্ড ট্রাংক রোড নির্মাণ করেন—শেরশাহ
গ. বাংলায় আফগান শাসনের অবসান ঘটান—সম্রাট আকবর
ঘ. কাবাব, রেজালা, কোরমা ইত্যাদি ছিল—মোগল যুগের খাবার
ঙ. মোগল আমলে বিনিময়মাধ্যম হিসেবে—মুদ্রার প্রবর্তন হয়
 সঠিক উত্তরটি লেখো।
১. শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ প্রথমে কোনটির ক্ষমতা দখল করেন?
ক) সাতগাঁও, খ) সোনারগাঁ, গ. লক্ষেৗতি ঘ. নদীয়া
উত্তর: লক্ষেৗতি।
২. বাংলার বার ভূঁইয়াদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কে ছিলেন?
ক. ঈসা খান খ. প্রতাপাদিত্য গ. কেদার রায় ঘ. ফতেহ খান
উত্তর: ঈসা খান।
৩. বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষকে পর্তুগিজ ও মগ জলদস্যুদের অত্যাচার থেকে কে রক্ষা করেন?
ক. ইসলাম খান খ. মীর জুমলা গ. শায়েস্তা খান ঘ. মুর্শিদকুলী খান
উত্তর: শায়েস্তা খান।
৪. কোনটি মধ্যযুগে মুসলমানদের প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল?
ক. টোল খ. মক্তব গ. মাদ্রাসা ঘ. রাজদরবার।
উত্তর: মক্তব।
৫. কোন আমলে গজল ও সুফিসাহিত্য সৃষ্টি হয়?
ক. ইলিয়াস শাহি খ. হোসেন শাহি গ. সুলতানি ঘ. মোগল।
উত্তর: মোগল।
 সংক্ষেপে উত্তর দাও।
প্রশ্ন: বাংলায় কে এবং কীভাবে স্বাধীন সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর: বাংলায় স্বাধীন সুলতানি শাসনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ। তিনি দিল্লির সুলতানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বাংলায় স্বাধীন সুলতানি আমলের সূচনা করেন। ১৩৩৮ সালে তিনি সোনারগাঁয়ের ক্ষমতা গ্রহণ করে নিজেকে সোনারগাঁয়ের স্বাধীন শাসক ঘোষণা করেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল ফখরা। তিনি একজন দক্ষ সুশাসক ছিলেন।
প্রশ্ন: বার ভূঁইয়া বলতে কী বোঝায়? বাংলায় বার ভূঁইয়াদের কয়েকজনের নাম লেখো।
উত্তর: ঐতিহাসিকগণ মনে করেন, বার ভূঁইয়া বলতে মূলত ১২ জন জমিদারকে বোঝায় না, বরং ভূঁইয়া ও তাঁদের নেতাসহ ১৩ জন ভূঁইয়াকেই বোঝানো হয়ে থাকে। মোগল শাসনামলে পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিম-উত্তরবঙ্গের বিশাল অঞ্চল একশ্রেণীর জমিদারের অধিকারে ছিল। তাঁদের অনেকেই মোগল শাসনকে মেনে নেননি। তাঁরা নিজ নিজ অঞ্চলে স্বাধীনভাবে জমিদারি পরিচালনা করতেন। তাঁদের শক্তিশালী সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী ছিল। ইতিহাসে তাঁরাই বার ভূঁইয়া নামে পরিচিত।
বার ভূঁইয়াদের কয়েকজনের নাম: ঈসা খান, রাজা প্রতাপাদিত্য, চাঁদ রায়, কেদার রায়, মুসা খান, ফতেহ খান প্রমুখ। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিলেন সোনারগাঁয়ের ঈসা খান ও তাঁর পুত্র মুসা খান।
প্রশ্ন: সুবাদার শায়েস্তা খানের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ উল্লেখ করো।
উত্তর: শায়েস্তা খানের গৃহীত পদক্ষেপ: ১৬৬৪ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেব শায়েস্তা খানকে বাংলার সুবাদার হিসেবে নিয়োগ দেন। ১৬৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলার সুবাদার ছিলেন। রাজ্যে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি কতকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এসব পদক্ষেপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল:
১. শায়েস্তা খান ১৬৬৬ সালে চট্টগ্রাম দখল করেন।
২. শায়েস্তা খান তাঁর সুবাদারির শেষ দিকে ইংরেজদের বাংলা সুবা থেকে বিতাড়িত করেন।
৩. শায়েস্তা খান সব জিনিসপত্রের দাম সস্তা রাখার ব্যবস্থা করেন।
৪. সুবাদার শায়েস্তা খান পার্শ্ববর্তী রাজ্যের আক্রমণ থেকে বাংলাকে রক্ষার পদক্ষেপ নেন।
৫. বাংলায় শান্তি প্রতিষ্ঠা, মানুষের জানমাল রক্ষা এবং রাজ্যসীমা অক্ষুণ্ন রাখতে যোগ্য সেনাপতি নিয়োগ করেন।
প্রশ্ন: মধ্যযুগে বাংলায় বিনোদনের কী কী ব্যবস্থা ছিল?
উত্তর: মধ্যযুগে বাংলার বিনোদনের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা প্রচলিত ছিল। যেমন চৌগান খেলা, পাশা খেলা, তাস খেলা ইত্যাদি। বাজিকরদের খেলা বেশ জনপ্রিয় ছিল। এ ছাড়া পায়রা ওড়ানো, সাঁতার কাটা, নৌকাবাইচ ইত্যাদি ছিল তখনকার জনপ্রিয় বিনোদনমাধ্যম। পালাগান খুব জনপ্রিয় ছিল।
প্রশ্ন: মধ্যযুগে বাংলার ধর্মীয় অবস্থা কীরূপ ছিল?
উত্তর: মধ্যযুগে বাংলার ধর্মীয় অবস্থা: মুসলমান সুফিসাধক ও শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং বৈষ্ণব আন্দোলন বাংলায় এক উদার ধর্মীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে। সমাজে সব ধর্মের মানুষের সমান সুযোগ-সুবিধা ছিল। সুলতানি আমলে নানা ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় ছিল। শ্রীচৈতন্যের নব্যবৈষ্ণব ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করা হতো। মুসলমান শাসকদের দরবারে অনেক হিন্দু উচ্চ রাজপদে কাজ করতেন। মুসলমান সমাজে প্রধান ধর্মীয় উৎসব ছিল ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। এ ছাড়া হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মবার্ষিকী ঈদে মিলাদুন্নবী ও লাইলাতুল বরাত আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হতো। হিন্দু সম্প্রদায়ের নানা ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পূজা-পার্বণ জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করা হতো।
অন্যদিকে মোগল আমলেও ধর্মীয় স্বাধীনতা অব্যাহত থাকে। রাষ্ট্র প্রশাসনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ধর্ম তেমন কোনো বাধা সৃষ্টি করেনি। বৈষ্ণব আন্দোলন মোগল যুগেও প্রবল ছিল। এ যুগে ধর্মীয় ইমারতের মধ্যে মসজিদ, মন্দির, সমাধি, ঈদগাহ ছিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশ্ন: ইবনে বতুতার বিবরণ থেকে কী জানা যায়?
উত্তর: বাংলা সম্পর্কে ইবনে বতুতার বিবরণ: সুলতানি আমলে বাংলা সফর করেন উত্তর আফ্রিকার বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা। তাঁর বিবরণ থেকে এ আমলে বাংলার মানুষের পোশাক, অলংকার ও খাদ্য সম্পর্কে জানা যায়।
পোশাক: মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নর-নারীরা বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরতেন। নিচে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
মুসলমান পুরুষদের পোশাক—ধনী মুসলমান পরিবারের পুরুষদের পোশাক ছিল ইজার (পায়জামা) ও লম্বা জামা। জামায় থাকত গলাবন্ধ এবং কোমরে বাঁধা থাকত উজ্জ্বল ফিতা। মাথায় পাগড়ি পরার রেওয়াজ ছিল। পায়ে ব্যবহার করতেন কারুকাজখচিত চামড়ার জুতা ও মোজা। মধ্যবিত্ত মুসলমান পুরুষেরা পায়জামা, জামা, পাগড়ি ও জুতা ব্যবহার করতেন। সাধারণ মুসলিম পুরুষদের পরিধান ছিল লুঙ্গি ও ফতুয়া ধরনের জামা এবং তাঁরা মাথায় টুপি পরতেন।
মুসলমান নারীদের পোশাক—কামিজ, সালোয়ার এবং কখনো কখনো দামি শাড়ি ছিল অভিজাত মুসলিম মহিলাদের পোশাক। দামি ওড়না তাঁরা ব্যবহার করতেন। স্বল্প আয়ের সাধারণ মহিলারা শাড়ি পরতেন।
হিন্দুদের পোশাক—অভিজাত হিন্দু পুরুষ ও রমণীরা জাঁকজমকপূর্ণ ও রুচিসম্মত পোশাক পরতেন। সাধারণ হিন্দুরা ধুতি ও চাদর ব্যবহার করতেন। হাঁটু পর্যন্ত একধরনের লম্বা জামাও পরতেন। এর নাম ছিল অঙ্গরাখি। জুতার বদলে তাঁরা পায়ে খড়ম ব্যবহার করতেন। নিম্নশ্রেণীর হিন্দুরা শুধু ধুতি পরতেন। হিন্দু মহিলাদের সাধারণ পোশাক ছিল শাড়ি।
অলংকার: পুরুষ-মহিলা সবাই অলংকার পছন্দ করতেন। তবে অলংকার বেশি প্রিয় ছিল মহিলাদের। সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের অলংকার ব্যবহূত হতো।
খাদ্য: ভাত, মাছ, তরকারি, ডাল ছিল জনপ্রিয় খাবার। উৎসব অনুষ্ঠানে মাংস পরিবেশনের রেওয়াজ ছিল। তা ছাড়া দুধ, দই, ছানা, মিষ্টি, পায়েস, ক্ষীর খেতে লোকে ভালোবাসত। খাওয়া শেষে পান খাওয়ার চল ছিল। মোগল আমলে এই খাদ্যাভ্যাসেও যথেষ্ট পরিবর্তন আসে। ভাত, মাছ, তরকারির পাশাপাশি কাবাব, রেজালা, কোরমা এবং ঘি সহযোগে রান্নার যাবতীয় মোগলাই খাবার জায়গা করে নেয়।

No comments:

Post a Comment