17.3.12

সমাজ: অধ্যায়-৮


প্রশ্ন: বাংলাদেশের মৎস্য ক্ষেত্রগুলোর নাম লিখে এদের বর্ণনা দাও।
উত্তর: বাংলাদেশের মৎস্য ক্ষেত্রগুলো হলো—
ক) নদী বা প্রাকৃতিক জলাশয়ের মাছ
খ) কৃত্রিম জলাশয়ের মাছ
গ) বাংলাদেশের মোহনা বা খাড়ির মাছ
ঘ) উপকূলীয় অঞ্চলের নোনা পানির মাছ
ঙ) সামুদ্রিক মাছ
নিচে এই মৎস্য ক্ষেত্রগুলোর বর্ণনা তুলে ধরা হলো—
ক) নদী বা প্রাকৃতিক জলাশয়ের মাছ: এসব জলাশয়ের মধ্যে রয়েছে নদী, খালবিল, ঝিল, হাওর, বাঁওড় ইত্যাদি। এ ধরনের জলাশয়ের মাছকে মিঠা পানির মাছ বলে। বাংলাদেশের সব নদীতেই কমবেশি মাছ পাওয়া যায়। মিঠা পানির মাছের মধ্যে রয়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল, বাউশ, কালবাউশ, আইড়, বোয়াল, চিতল, বাটা, চিংড়ি প্রভৃতি।
খ) কৃত্রিম জলাশয়ের মাছ: এসব জলাশয়ের মধ্যে রয়েছে পুকুর, দিঘি, হ্রদ ইত্যাদি। যেমন: কাপ্তাই হ্রদ, সেচখাল ইত্যাদি। এই কৃত্রিম জলাশয়ে রুই, কাতলা, মৃগেল, বাউশ, কালবাউশ, শোল, গজার ইত্যাদি মাছ পাওয়া যায়।
গ) বাংলাদেশের মোহনা বা খাড়ির মাছ: বাংলাদেশের মোহনায় চিংড়ি, ইলিশ, তপসে, ভেটকি, কুড়াল, ফাইসা, বাঁশপাতা, চেলা ইত্যাদি মাছ পাওয়া যায়।
ঘ) উপকূলীয় অঞ্চলের নোনা পানির মাছ: বাংলাদেশের দক্ষিণে উপকূলীয় অঞ্চলে চিংড়ি মাছের ব্যাপক চাষ হয়। উৎপাদিত চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।
ঙ) সামুদ্রিক মাছ: সামুদ্রিক মাছের মধ্যে ভেটকি, লৈটা, চেলা, পোয়া, রূপচাঁদা, ভারতীয় স্যামন, ছুরিমাছ উল্লেখযোগ্য।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের শিল্পগুলোর নাম লেখো। শিল্পে ব্যবহূত কাঁচামাল সম্পর্কে লেখো।
উত্তর: বাংলাদেশ শিল্পে বেশি সমৃদ্ধ নয়। বর্তমানে পোশাকশিল্প বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রধান শিল্প। অন্যান্য শিল্পের মধ্যে সার, সিমেন্ট, কাগজ, দেশলাই, চিনি, পাটশিল্প উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া রয়েছে লোহা ও ইস্পাতশিল্প, জাহাজ মেরামত, চামড়া, কাচ, ওষুধ, বিভিন্ন ধরনের খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, মৎস্য প্রক্রিয়াজাত, রাসায়নিক এবং বিভিন্ন প্রকারের কুটির শিল্প।
আমাদের দেশে বেশ কিছু শিল্পে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আবার কিছু কিছু শিল্পে আমাদের কাঁচামালের সঙ্গে বাইরের দেশ থেকে আনা কাঁচামাল ব্যবহূত হয়। আবার এমন বেশ কিছু শিল্প আছে, যা বিদেশি কাঁচামালের ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। যেমন: লোহা ও ইস্পাতশিল্প। আমাদের দেশে দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে যেসব শিল্প গড়ে উঠেছে, সেগুলো হলো—চশিল্প, চামড়াশিল্প, কাগজশিল্প, চিনিশিল্প, বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্প, মৎস্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প, দেশলাইশিল্প, কাঁচামাল শিল্প ইত্যাদি।
বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল: পোশাকশিল্পের কাঁচামাল থানবস্ত্র ও উল প্রধানত বিদেশ থেকে আসে। সারশিল্পের কাঁচামাল গ্যাস, সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল চুনাপাথর, কাদা, ক্লিঙ্কার, ডলোমাইট ইত্যাদি। কাগজশিল্পের কাঁচামাল বাঁশ, আখের ছোবড়া, খড়, কাঠ, পাটকাঠি ইত্যাদি। দেশলাইশিল্পের প্রধান কাঁচামাল নরম কাঠ। চিনিশিল্পের কাঁচামাল আখ। পাটশিল্পের কাঁচামাল পাট। লোহা ও ইস্পাতশিল্পের কাঁচামাল লোহা। চামড়াশিল্পের কাঁচামাল চামড়া। কাচশিল্পের কাঁচামাল সিলিকা বালি, লবণ, চুনাপাথর ইত্যাদি। দেশের খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প দেশীয় খাদ্যশস্য ও ফলমূলের ওপর নির্ভর করে। চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত শিল্প দেশের উপকূল অঞ্চলের উৎপাদিত চিংড়ির ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন কুটির শিল্পের কাঁচামালের মধ্যে তাঁতশিল্পের কাঁচামাল সুতা, রেশমশিল্পের কাঁচামাল রেশম সুতা এবং সুতি বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল তুলা ব্যবহূত হয়। কাঠশিল্পে কাঠ ব্যবহূত হয়। বাঁশনির্ভর কুটির শিল্পের প্রধান কাঁচামাল বাঁশ।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ কী কী? কৃষিজ সম্পদ ও মৎস্য সম্পদের বর্ণনা দাও।
উত্তর: আমাদের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রকৃতি থেকে আমরা যেসব দ্রব্য পাই, সেগুলো প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে কৃষিজ সম্পদ, মৎস্য সম্পদ, খনিজ সম্পদ, বনজ সম্পদ ইত্যাদি।
কৃষিজ সম্পদের বর্ণনা: আমাদের কৃষিজ সম্পদের মধ্যে খাদ্যশস্য ও অর্থকরী ফসল প্রধান।
ক) খাদ্যশস্য: খাদ্যশস্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধান, গম, ডাল, তৈলবীজ, মসলা, শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে ধান, গম, ডাল, তৈলবীজ ইত্যাদি বাংলাদেশে জন্মে। বাংলাদেশে একসময় অসংখ্য প্রজাতির ধানের সমৃদ্ধ ভান্ডার ছিল। বর্তমানে অনেক ধরনের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমাদের দেশে প্রধানত তিন ধরনের ধান ব্যাপকভাবে চাষ হয়। এগুলো হলো: আউশ, আমন ও বোরো। এই তিন প্রকার ধানের প্রতিটির আবার উচ্চ ফলনশীল জাত রয়েছে। ধান আমাদের দেশের প্রধান শস্য। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই কমবেশি ধান জন্মে। তাই ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য।
খ) অর্থকরী ফসল: অর্থকরী ফসলের মধ্যে চা, পাট, তামাক, ইক্ষু, তুলা, রেশম ইত্যাদি প্রধান। অর্থকরী ফসল বলতে যেসব ফসলের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করা হয়, সেসব ফসলকে বোঝায়। বাংলাদেশে পাট একসময় প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে পাটের উৎপাদন কমে গেছে। এখন চা বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল।
মৎস্য সম্পদের বর্ণনা: বাংলাদেশ মাছে সমৃদ্ধ। আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে। যেমন: রুই, কাতলা, ইলিশ, চিতল, চিংড়ি, কই, মাগুর, শিং ইত্যাদি। বাংলাদেশের নদীনালা, খালবিল, পুকুর, সমুদ্র ইত্যাদি জলাশয়ের পানির বৈশিষ্ট্য অনুসারে মাছের পাঁচটি ক্ষেত্র রয়েছে। দু-একটি ক্ষেত্রে কিছু ভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া গেলেও বাংলাদেশের প্রধান মাছগুলো সাধারণত সব উপযুক্ত মৎস্য ক্ষেত্রেই পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের বনভূমির বর্ণনা দাও।
উত্তর: বাংলাদেশের বনভূমিকে তিনটি প্রধান অঞ্চলে ভাগ করা যায়। যথা—পাহাড়ি বনভূমি, শালবৃক্ষ বনভূমি এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমি।
পাহাড়ি বনভূমি: চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেটের পাহাড়ি এলাকায় এই বনভূমি দেখা যায়। এই বনভূমির প্রধান বৃক্ষ গর্জন। এ ছাড়া সেগুন, মেহগনি, চাপালিশ, তেলসুর, জলপাই, ছাতিম, কদম, জামরুল, জাম, গামারি, শিমুল, কড়ই, নাগেশ্বর, জারুল, অর্জুন, ময়না, রাবার ইত্যাদি প্রধান বৃক্ষ।
শালবৃক্ষের বনভূমি: এই বনভূমির প্রধান বৃক্ষ হচ্ছে শাল বা গজারি। ঢাকা, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলে মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়ে প্রধানত শালবৃক্ষের বনভূমি অবস্থিত। এ ছাড়া দিনাজপুর ও রংপুরে সামান্য পরিমাণে শালবৃক্ষের বনভূমি রয়েছে। এসব বনভূমিতে শাল ছাড়া অন্যান্য কাঠ ও ফলের বৃক্ষ রয়েছে।
ম্যানগ্রোভ বনভূমি: বাংলাদেশের সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বনভূমি। এ ধরনের বনভূমি বরগুনা, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা জেলায়ও রয়েছে। সুন্দরবনে স্বাদু ও লবণাক্ত পানির গাছ জন্মে। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি। সমুদ্রস্রোতের জোয়ার-ভাটার প্রভাবে এ বনভূমি গড়ে উঠেছে। সুন্দরী ও গেওয়া সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ। এ ছাড়া গরান, গোলপাতা, কেওড়া ইত্যাদি বৃক্ষ জন্মে।

No comments:

Post a Comment