28.2.12

অধ্যায়-৭  সমাজ


প্রিয় শিক্ষার্থী, শুভেচ্ছা নিয়ো। পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় প্রতিবছরই রচনামূলক প্রশ্ন দেওয়া হয়ে থাকে। সে আলোকে আজ তোমাদের পরিবেশ পরিচিতি সমাজ বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করব।

রশ্ন: নাগরিক কাকে বলে? নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো লেখো।
উত্তর: বিশ্বের সব মানুষই কোনো না কোনো দেশের নাগরিক। নাগরিক হলো তারা, যারা রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকে। রাষ্ট্রের কল্যাণ কামনা করে। রাষ্ট্রের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে এবং রাষ্ট্রের প্রতি বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক।
নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য: অধিকার ভোগের পাশাপাশি রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। নাগরিক যদি রাষ্ট্রের প্রতি তার কর্তব্য যথাযথভাবে পালন না করে, তাহলে রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, শান্তি নষ্ট হবে এবং রাষ্ট্রের উন্নতি ব্যাহত হবে। তাই নাগরিককে রাষ্ট্রের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করতে হবে। নিচে নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—
আনুগত্য: নাগরিকরে প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। আনুগত্য বলতে রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকা বোঝায় এবং এটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা রক্ষা ও উন্নতির জন্য অত্যাবশ্যক।
সততার সঙ্গে ভোট দান: এটি নাগরিকের একটি অবশ্য কর্তব্য। এর মাধ্যমে একজন নাগরিক রাষ্ট্রের শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করে।
আইন মেনে চলা: নাগরিকদের জীবন যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়, এ জন্য রাষ্ট্র বিভিন্ন প্রকার আইন প্রণয়ন করে। এসব আইন যথাযথভাবে মেনে চলা প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য।
কর দেওয়া: দেশের শাসনকার্য পরিচালনা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থের প্রয়োজন। নাগরিকদের ওপর কর আরোপ করে রাষ্ট্র এই অর্থ সংগ্রহ করে।
ধর্মীয় সহিষ্ণুতা: বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে। নিজ নিজ ধর্ম পালনের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের প্রতি সম্মান দেখানো প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য।
রাষ্ট্র প্রদত্ত দায়িত্ব পালন: দেশের কল্যাণের জন্য রাষ্ট্র মাঝেমধ্যে নাগরিকদের কিছু দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়। এ দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য।
সন্তানকে সুশিক্ষা দান: সন্তানদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে সুনাগরিক করে গড়ে তোলা প্রতিটি নাগরিকের অন্যতম কর্তব্য। এসব কর্তব্য পালন ছাড়াও সুনাগরিক হতে হলে নাগরিকের তিনটি প্রধান গুণ থাকতে হবে। এ তিনটি গুণ হচ্ছে, বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বুদ্ধি, বিবেক ও সংযম প্রদর্শন করা।
প্রশ্ন: নাগরিকের কেন কর প্রদান করা উচিত? কর প্রদান না করলে কী অসুবিধা হয়?
উত্তর: নাগরিক রাষ্ট্রের কাছ থেকে বিভিন্ন অধিকার ভোগ করে। পাশাপাশি প্রতিটি নাগরিকের রাষ্ট্রের প্রতি কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। দেশের শাসনকাজ পরিচালনা ও উন্নয়নমূলক কাজ করার জন্য অর্থের প্রয়োজন। নাগরিকদের ওপর কর আরোপ করে রাষ্ট্র এই অর্থ সংগ্রহ করে। তাই রাষ্ট্রীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য নাগরিকের কর প্রদান করা উচিত।
কর প্রদান না করলে অসুবিধা: নাগিরকেরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে যেরূপ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে, তেমনি রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকেরও কিছু কর্তব্য পালন করতে হয়। সমাজে সুষ্ঠুভাবে জীবিকা নির্বাহের জন্য আমাদের অর্থনৈতিক অধিকার প্রয়োজন। নাগরিকদের জীবন সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য ও রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক কাজ করার জন্য রাষ্ট্রের অর্থের প্রয়োজন হয়। নাগরিকদের ওপর কর আরোপ করে রাষ্ট্র এই অর্থ সংগ্রহ করে। তাই নিয়মিত কর প্রদান করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কর প্রদান না করলে রাষ্ট্রের শাসনকাজ পরিচালনা করতে অসুবিধা হবে এবং দেশের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যাঘাত ঘটবে।
প্রশ্ন: সুষ্ঠু নির্বাচনে নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী? নাগরিক এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?
উত্তর: নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিম্নরূপ—
১. নির্বাচনের মাধ্যমে সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও উপযুক্ত প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে।
২. প্রতিটি ভোটাধিকারপ্রাপ্ত নাগরিককে ভোট প্রদান করতে হবে।
৩. সততার সঙ্গে সব নাগরিককে ভোট দিতে হবে।
৪. নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রণীত সব আইন মেনে চলতে হবে।
৫. নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত সব আচরণবিধি মেনে চলতে হবে।
নাগরিকের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সৃষ্ট সমস্যা: নির্বাচনে উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত না হলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাবে যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচিত করা সম্ভব হয় না। এতে দেশের ক্ষতি হয়। তাই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য।
প্রশ্ন: নাগরিক রাষ্ট্রের কাছ থেকে কী কী অধিকার ভোগ করে? লেখো।
উত্তর: নাগরিকেরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের অধিকার ভোগ করে। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। সে কারণে আমরাও রাষ্ট্রের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকি। এসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা আমাদের অধিকার। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমরা যেসব মৌলিক অধিকার ভোগ করি, সেগুলো প্রধানত তিন প্রকার। যথা:
ক. সামাজিক অধিকার: সামাজিক জীবনের বিকাশের জন্য রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমরা যেসব অধিকার ভোগ করি, তাকে সামাজিক অধিকার বলে। আমাদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অধিকার হলো—
ক) জীবন রক্ষার অধিকার খ) সম্পত্তি ভোগের অধিকার গ. নিজের মতামত প্রকাশের অধিকার ঘ. শিক্ষা লাভের অধিকার।
খ. রাজনৈতিক অধিকার: দেশের রাজনীতি ও শাসনকার্যে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুযোগকে রাজনৈতিক অধিকার বলে। এ অধিকারগুলো না থাকলে কোনো ব্যক্তিকে নাগরিক বলা যায় না। নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকারগুলো হলো—
ক) নির্বাচিত হওয়ার অধিকার বা নির্বাচনের ভোট দেওয়ার অধিকার।
খ) রাষ্ট্রের যেকোনো স্থানে বসবাসের অধিকার
গ) সরকারি চাকরির অধিকার
ঘ) সরকারের সমালোচনা করার অধিকার
গ. অর্থনেতিক অধিকার: জীবনধারণের জন্য আমরা যে কাজগুলো করি, সেগুলোই অর্থনৈতিক অধিকার। যেমন, আমরা কেউ চাকরি করি, কেউ ব্যবসা করি আবার কেউবা রিকশা চালাই। এগুলো আমাদের অর্থনৈতিক অধিকার। এ ছাড়া আরও রয়েছে ন্যায্য মজুরি লাভের অধিকার ও অবকাশ লাভের অধিকার।

No comments:

Post a Comment