অধ্যায়-পাঁচ
রশ্ন: জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকারগুলো কী? কয়েকটি মানবাধিকারের নাম লেখো।
উত্তর: স্বাধীন, সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানবাধিকারের বিকল্প নেই। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে আমরা মানবাধিকারগুলো পেয়ে থাকি। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য। সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে তাই বাংলাদেশ জাতিসংঘের ‘মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র’কে সম্মান করে। সে জন্যই আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার মূল দলিল সংবিধানে এসব অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকার তৈরি করেছে বিভিন্ন আইন, যেমন—শিশু অধিকার আইন, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন, শিশু ও নারী নির্যাতন রোধ আইন ইত্যাদি।
কয়েকটি মানবাধিকারের নাম
১। প্রত্যেক মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন। সবার রয়েছে সমান মর্যাদা ও অধিকার।
২। প্রত্যেকের জীবন, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা লাভের অধিকার আছে।
৩। কাউকে নির্যাতন ও অত্যাচার করা যাবে না।
৪। ব্যক্তি হিসেবে আইনের চোখে সবাই সমান।
৫। মৌলিক অধিকার ভঙ্গ হলে প্রত্যেকের বিচার লাভের অধিকার আছে।
৬। কাউকে খেয়াল-খুশিমতো গ্রেপ্তার ও আটক রাখা যাবে না।
৭। প্রত্যেকের চিন্তার ও নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রয়েছে।
৮। প্রত্যেকের শিক্ষার অধিকার রয়েছে।
প্রশ্ন: আমাদের দেশে শিশুরা কীভাবে মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে তোমার করণীয় কী?
উত্তর: আমাদের দেশের শিশুদের মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ—বাংলাদেশে অনেক শিশুই শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। গ্রামে শিশুরা প্রধানত খেতখামারে কাজ করে। আবার শহরে মানুষের বাড়িতে, দোকনে ও কলকারখানায়; কেউ বা ইট ভাঙে। শিশুশ্রমের প্রধান কারণ হলো দারিদ্র্য। শিশুশ্রমিকেরা সাধারণত লেখাপড়ার সুযোগ যায় না। অনেক ক্ষেত্রে মজুরি ঠিকভাবে পায় না। এমনকি খাওয়া, থাকার জায়গা, চিকিৎসাসুবিধা, পোশাক ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে এদের প্রতি বৈষম্য করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এরা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়।
আমাদের করণীয়: শিশুশ্রমের কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। অতএব, শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে। আমাদের দেশ থেকে শিশুদের পাচার করে সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাঠানো হয়। সেখানে তাদের উটের দৌড় প্রতিযোগিতায় জকি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। শিশুরা যেন মানুষ হিসেবে তাদের অধিকারগুলো ভোগ করতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি বিদেশে শিশু পাচার বন্ধ করতে হবে।
প্রশ্ন: সাম্প্রদায়িকতা মানবাধিকারের কোন দিকটি লঙ্ঘন করে? এটি রোধে আমাদের করণীয় কী?
উত্তর: আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধর্মের লোক বাস করে। কেউ মুসলমান, কেউ হিন্দু, কেউ খ্রিষ্টান, কেউ বা বৌদ্ধ। কিন্তু প্রত্যেকেই আমরা ভাই ভাই। সবাই আমরা সামাজিক জীব, সবাই এ দেশের নাগরিক। আমরা সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করি। স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করা আমাদের মানবাধিকার। কিন্তু আমরা অনেক সময় সামান্য কারণে এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোকদের ঘৃণা বা অবজ্ঞা করে সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি করি। সাম্প্রদায়িকতা স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম পালনের দিকটি লঙ্ঘন করে। এতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়।
সমাজের সদস্য এবং মানুষ হিসেবে আমাদের অনেক কিছু করণীয়। সাম্প্রদায়িকতা সমাজে নানারূপে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। সাম্প্রদায়িকতা রোধে আমাদের সচেতন হতে হবে। নিম্নোক্তভাবে সাম্প্রদায়িকতা রোধ করা যায়:
১. আমরা সবাই যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করব। ২. সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে চলব। ৩. কোনো ধর্মকে ছোট করে দেখব না। ৪. ধর্মীয় কারণে কাউকে আঘাত বা হেয় করব না। ৫. সব ধর্ম ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে সম্মান করব।
প্রশ্ন: সমাজে মানবাধিকারবিরোধী কয়েকটি কাজ উল্লেখ করো। প্রতিটি ঘটনায় একটি করে কুফল লেখো।
উত্তর: সমাজে মানবাধিকারবিরোধী কয়েকটি কাজ হলো: ক) শিশুশ্রম খ) সাম্প্রদায়িকতা গ) যৌতুক ঘ) নারী ও শিশুপাচার ঙ) এসিড নিক্ষেপ। নিচে এদের কুফলগুলো তুলে ধরা হলো:
ক) শিশুশ্রম: শিশুশ্রমের কারণে মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন ঘটছে। শিশু শ্রমিকেরা লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে না, অনেক ক্ষেত্রে মজুরি ঠিকমতো পাচ্ছে না। এমনকি খাওয়া, থাকার জায়গা, চিকিৎসাসুবিধা, পোশাক ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে এদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে এরা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
খ) সাম্প্রদায়িকতা: সাম্প্রদাযিকতার কারণে অন্য ধর্মের লোকদের অবজ্ঞা করলে তা তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে সমাজ এবং দেশের শান্তি নষ্ট হয়। শুধু তা-ই নয়, অনেক সময় জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া বিচিত্র কিছু নয়।
গ) যৌতুক: যৌতুকের কারণে নারীর ওপর নির্যাতন মানবাধিকার লঙ্ঘন। এটি একটি সামাজিক ব্যাধি। সামর্থ্যের অভাবে যৌতুক দিতে না পারায় আমাদের দেশে অনেক নারীই নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, এমনকি মৃত্যুবরণও করছেন।
ঘ) নারী ও শিশু পাচার: পাচারকৃত ছোট শিশুরা উটের জকি হিসেবে কাজ করতে গিয়ে অনেকে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে, মারাও যাচ্ছে অনেকে। পাচার হওয়া নারীরা বিদেশে নানা ধরনের কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছেন, যা তাঁদের জন্য উপযুক্ত সম্মান বয়ে আনছে না। অর্থাৎ পাচার হওয়া নারী ও শিশুরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছেন না এবং এতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
ঙ) এসিড নিক্ষেপ: এসিড নিক্ষেপ মানবাধিকারের চরম বিরোধী। আমাদের দেশে অনেকে, বিশেষ করে মেয়েরা এসিড নির্যাতনের শিকার হয়। এ কারণে তাদের চেহারা বিকৃত হয়ে যাচ্ছে, চোখ নষ্ট হয়ে যায়, অনেকে বিকলাঙ্গ হয়। সমাজের জন্য তারা একটি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
প্রশ্ন: মানবাধিকার বাস্তবায়িত না হলে সমাজে কী অসুবিধা সৃষ্টি হয়?
উত্তর: মানুষের জন্মই যখন অধিকার ভোগ করার, তখন মানবাধিকারের বাস্তবসম্মত প্রয়োগ না হলে সমাজজীবন কতটা বিঘ্ন হবে তা বর্ণনাতীত। স্বাধীন, সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানবাধিকারের বিকল্প নেই। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে আমরা যেসব সুবিধা ও অধিকার ভোগ করছি, তা সম্ভব হয়েছে একমাত্র মানবাধিকারের কল্যাণে। মানুষের মানবাধিকার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব হলো সমাজে মানবাধিকার বাস্তবায়ন করা। সমাজে মানবাধিকার বাস্তবায়িত না হলে নিচের অসুবিধার সৃষ্টি হয়: ১. শিশুশ্রম বেড়ে যায়। ২. নারী ও শিশুপাচার বেড়ে যায়। ৩. এসিড নিক্ষেপ বেড়ে যায়। ৪. সাম্প্রদায়িকতা ও যৌতুকপ্রবণতা বেড়ে যায়। ৫. মানুষের মর্যাদা নষ্ট হয়। ৬. মানুষের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা কমে যায়। ৭. নির্যাতন ও অত্যাচার বেড়ে যায়। ৮. সুষ্ঠু বিচার পাওয়া যায় না। ৯. নিজ নিজ ধর্ম পালনে অসুবিধা হয়। ১০। শিক্ষা গ্রহণের অধিকার অনিশ্চিত হয়ে যায়।
No comments:
Post a Comment