অধ্যায়-১৫
প্রিয় শিক্ষার্থী, আলোচ্যসূচিতে আজ রয়েছে অধ্যায় ১৫ থেকে প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা।
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।
প্রশ্ন: অপারেশন সার্চলাইট কী? ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতকে কালরাত বলা হয় কেন?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তাঁর নির্দেশে পূর্ব পাকিস্তানের সব প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড চলতে থাকে। সমস্যা সমাধানের নামে আলোচনা করতে ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান। পরে এসে যোগ দেন পশ্চিম পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো। ১০ দিন ধরে আলোচনার নামে চলে প্রহসন। এ সময় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কৌশলে সেনাবাহিনী ও অস্ত্রশস্ত্র এনে বাঙালিদের দমন করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। এরপর ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় কোনো ঘোষণা ছাড়াই ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টো ঢাকা ত্যাগ করেন। যাওয়ার আগেই ইয়াহিয়া খান গণহত্যার নির্দেশ দেন। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের স্বাধীনতার স্বপ্ন চিরদিনের জন্য থামিয়ে দিতে এই গণহত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এই পরিকল্পনার নাম ছিল অপারেশন সার্চলাইট। এই অপারেশনের দায়িত্বে থাকেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান।
কালরাত বলার কারণ: পাকিস্তানি সেন্যরা ২৫ মার্চের মধ্যরাতে নিরীহ, নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা ট্যাংক, ভারী কামান ও নানাবিধ আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল আক্রমণ করে। এ ছাড়া হলসংলগ্ন শিক্ষকদের বাসগৃহ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসস্থান ও বিভিন্ন দলীয় কার্যালয়ে তারা এই বর্বরোচিত হামলা চালায়। এসব স্থানে বাঙালি, পুলিশ ইপিআর বাহিনীর বাঙালি সদস্য, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। অন্যান্য স্থানেও তারা নির্মম হত্যাকাণ্ড শুরু করে। বাড়িঘর, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয় এবং লুটপাট করে। বিদেশে সংবাদ প্রেরণের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে। ঢাকা শহর বধ্যভূমি ও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এ জন্য ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতকে কালরাত বলা হয়।
প্রশ্ন: মার্চের কালরাতে হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার বিবরণ দাও। হানাদার বাহিনী কর্তৃক বুদ্ধিজীবী হত্যার কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর: নৃশংসতার বিবরণ: পাকিস্তানি সেন্যরা ২৫ মার্চের মধ্যরাতে নিরীহ ও নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা ট্যাংক, ভারী কামান ও নানাবিধ আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল আক্রমণ করে। এ ছাড়া হলসংলগ্ন শিক্ষকদের বাসগৃহ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসস্থান ও বিভিন্ন দলীয় কার্যালয়ে তারা এই বর্বরোচিত হামলা চালায়। এসব স্থানে বাঙালি পুলিশ, ইপিআর বাহিনীর বাঙালি সদস্য, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। অন্যান্য স্থানেও তারা নির্মম হত্যাকাণ্ড শুরু করে। বাড়িঘর, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয় এবং লুটপাট করে। বিদেশে সংবাদ প্রেরণের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে। ঢাকা শহর বধ্যভূমি ও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
বুদ্ধিজীবী হত্যার উদ্দেশ্য: ১৯৭১ সালের ৯ থেকে ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের অধিকাংশই অঞ্চলই হানাদারমুক্ত হয়। পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি শাসকচক্র বাংলাদেশকে চিরতরে মেধাশূন্য করার এক ঘৃণ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়। তারা ভেবেছিল, এ দেশকে মেধাশূন্য করা গেলে বাঙালি জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে এবং এ জাতি আর কোনো দিন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই তারা বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে তবে ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে এই হত্যাযজ্ঞ অত্যন্ত ভয়াবহরূপ ধারণ করে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশনা ও মদদে এক শ্রেণীর দালালেরা এই হত্যাযজ্ঞ ঘটায়। তারা ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য, প্রফেসর মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার, ডা. ফজলে রাব্বীসহ এ দেশের প্রথম সারির অনেক বুদ্ধিজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। দুই লাখ মা-বোন হয়েছেন নির্যাতিতা। এ ছাড়া দেশের বিপুল সম্পদ নষ্ট হয়েছে। যাঁরা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ ত্যাগ করেছেন, বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন, তাঁদের সবার কাছেই আমরা চিরঋণী। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধর্ম-বর্ণ-গোত্রনির্বিশেষে আমরা সবাই একত্রে শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। এভাবে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের এই জাতীয় ঐক্য ও দেশপ্রেম সব সময় প্রয়োজন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের উদার মনোভাব ও গণতান্ত্রিক চেতনা সর্বদা লালন করব। স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিসব উদ্যাপন করব। এ দেশকে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধরূপে গড়ে তুলতে যার যার অবস্থান থেকে আমরা দেশগঠনমূলক কাজে অংশগ্রহণ করব।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা কী ছিল?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৭০ সালের নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল আগরতলায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। এ সরকার ছিল অস্থায়ী প্রবাসী সরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি করা হয়। কিন্তু তিনি তখন পাকিস্তান কারাগারে বন্দীছিলেন। ফলেরাষ্ট্রপতির দায়িত্ব অর্পিত হয় উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুলইসলামের ওপর।তাজউদ্দীন আহমদ এই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ১৭ এপ্রিল এই সরকার মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা (মুজিবনগর) গ্রামের আমবাগানে শপথ নেয়। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআরের বাঙালি সদস্য, পুলিশ, আনসার, ছাত্র, যুবক, নারী, কৃষক, শ্রমিক ও বুদ্ধিজীবী নিয়ে গড়ে ওঠে মুক্তিবাহিনী। জেনারেল মোহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিয়োগ করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা, দেশের জনগণের সমর্থন আদায় করা এবং বিদেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সরকার ও জনগণের সমর্থন পাওয়ার জন্য এই সরকার গঠন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এককথায় বলতে গেলে, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা, অস্ত্র সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ, বিদেশের সমর্থন আদায় ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী ও বহির্বিশ্বের মিত্র দেশগুলোর ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রতিবেশী দেশের ভূমিকা: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ২৫ মার্চ রাতে হানাদার বাহিনীর নির্বচারে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের পর থেকেই এ দেশের সর্বস্তরের প্রায় এক কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয়। ভারত সরকার ও বন্ধুপ্রতিম জনগণ শরণার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করে এবং ভরণ-পোষণসহ নানা রকম সাহায্য-সহযোগিতা দেয়। ভারত সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। একপর্যায়ে সামরিক শক্তি দিয়েও বাংলাদেশকে স্বাধীন হতে সাহায্য করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারত ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয়।
বহির্বিশ্বের মিত্র দেশের ভূমিকা: বহির্বিশ্বের সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্র দেশ যুক্তরাজ্য, জাপান ও পশ্চিমের অনেক দেশের সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়। কারণ, সবাই বুঝেছিল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ একটি ন্যায়সংগত যুদ্ধ। পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা ও গণহত্যা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। অন্য রাষ্ট্রের বহু নাগরিকও মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে অবদান রাখেন।
প্রিয় শিক্ষার্থী, আলোচ্যসূচিতে আজ রয়েছে অধ্যায় ১৫ থেকে প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা।
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।
প্রশ্ন: অপারেশন সার্চলাইট কী? ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতকে কালরাত বলা হয় কেন?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তাঁর নির্দেশে পূর্ব পাকিস্তানের সব প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড চলতে থাকে। সমস্যা সমাধানের নামে আলোচনা করতে ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান। পরে এসে যোগ দেন পশ্চিম পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো। ১০ দিন ধরে আলোচনার নামে চলে প্রহসন। এ সময় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কৌশলে সেনাবাহিনী ও অস্ত্রশস্ত্র এনে বাঙালিদের দমন করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। এরপর ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় কোনো ঘোষণা ছাড়াই ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টো ঢাকা ত্যাগ করেন। যাওয়ার আগেই ইয়াহিয়া খান গণহত্যার নির্দেশ দেন। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের স্বাধীনতার স্বপ্ন চিরদিনের জন্য থামিয়ে দিতে এই গণহত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এই পরিকল্পনার নাম ছিল অপারেশন সার্চলাইট। এই অপারেশনের দায়িত্বে থাকেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান।
কালরাত বলার কারণ: পাকিস্তানি সেন্যরা ২৫ মার্চের মধ্যরাতে নিরীহ, নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা ট্যাংক, ভারী কামান ও নানাবিধ আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল আক্রমণ করে। এ ছাড়া হলসংলগ্ন শিক্ষকদের বাসগৃহ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসস্থান ও বিভিন্ন দলীয় কার্যালয়ে তারা এই বর্বরোচিত হামলা চালায়। এসব স্থানে বাঙালি, পুলিশ ইপিআর বাহিনীর বাঙালি সদস্য, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। অন্যান্য স্থানেও তারা নির্মম হত্যাকাণ্ড শুরু করে। বাড়িঘর, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয় এবং লুটপাট করে। বিদেশে সংবাদ প্রেরণের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে। ঢাকা শহর বধ্যভূমি ও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এ জন্য ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতকে কালরাত বলা হয়।
প্রশ্ন: মার্চের কালরাতে হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার বিবরণ দাও। হানাদার বাহিনী কর্তৃক বুদ্ধিজীবী হত্যার কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর: নৃশংসতার বিবরণ: পাকিস্তানি সেন্যরা ২৫ মার্চের মধ্যরাতে নিরীহ ও নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা ট্যাংক, ভারী কামান ও নানাবিধ আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল আক্রমণ করে। এ ছাড়া হলসংলগ্ন শিক্ষকদের বাসগৃহ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসস্থান ও বিভিন্ন দলীয় কার্যালয়ে তারা এই বর্বরোচিত হামলা চালায়। এসব স্থানে বাঙালি পুলিশ, ইপিআর বাহিনীর বাঙালি সদস্য, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। অন্যান্য স্থানেও তারা নির্মম হত্যাকাণ্ড শুরু করে। বাড়িঘর, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয় এবং লুটপাট করে। বিদেশে সংবাদ প্রেরণের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে। ঢাকা শহর বধ্যভূমি ও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
বুদ্ধিজীবী হত্যার উদ্দেশ্য: ১৯৭১ সালের ৯ থেকে ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের অধিকাংশই অঞ্চলই হানাদারমুক্ত হয়। পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি শাসকচক্র বাংলাদেশকে চিরতরে মেধাশূন্য করার এক ঘৃণ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়। তারা ভেবেছিল, এ দেশকে মেধাশূন্য করা গেলে বাঙালি জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে এবং এ জাতি আর কোনো দিন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই তারা বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে তবে ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে এই হত্যাযজ্ঞ অত্যন্ত ভয়াবহরূপ ধারণ করে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশনা ও মদদে এক শ্রেণীর দালালেরা এই হত্যাযজ্ঞ ঘটায়। তারা ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য, প্রফেসর মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার, ডা. ফজলে রাব্বীসহ এ দেশের প্রথম সারির অনেক বুদ্ধিজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। দুই লাখ মা-বোন হয়েছেন নির্যাতিতা। এ ছাড়া দেশের বিপুল সম্পদ নষ্ট হয়েছে। যাঁরা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ ত্যাগ করেছেন, বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন, তাঁদের সবার কাছেই আমরা চিরঋণী। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধর্ম-বর্ণ-গোত্রনির্বিশেষে আমরা সবাই একত্রে শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। এভাবে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের এই জাতীয় ঐক্য ও দেশপ্রেম সব সময় প্রয়োজন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের উদার মনোভাব ও গণতান্ত্রিক চেতনা সর্বদা লালন করব। স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিসব উদ্যাপন করব। এ দেশকে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধরূপে গড়ে তুলতে যার যার অবস্থান থেকে আমরা দেশগঠনমূলক কাজে অংশগ্রহণ করব।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা কী ছিল?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৭০ সালের নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল আগরতলায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। এ সরকার ছিল অস্থায়ী প্রবাসী সরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি করা হয়। কিন্তু তিনি তখন পাকিস্তান কারাগারে বন্দীছিলেন। ফলেরাষ্ট্রপতির দায়িত্ব অর্পিত হয় উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুলইসলামের ওপর।তাজউদ্দীন আহমদ এই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ১৭ এপ্রিল এই সরকার মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা (মুজিবনগর) গ্রামের আমবাগানে শপথ নেয়। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআরের বাঙালি সদস্য, পুলিশ, আনসার, ছাত্র, যুবক, নারী, কৃষক, শ্রমিক ও বুদ্ধিজীবী নিয়ে গড়ে ওঠে মুক্তিবাহিনী। জেনারেল মোহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিয়োগ করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা, দেশের জনগণের সমর্থন আদায় করা এবং বিদেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সরকার ও জনগণের সমর্থন পাওয়ার জন্য এই সরকার গঠন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এককথায় বলতে গেলে, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা, অস্ত্র সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ, বিদেশের সমর্থন আদায় ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী ও বহির্বিশ্বের মিত্র দেশগুলোর ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রতিবেশী দেশের ভূমিকা: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ২৫ মার্চ রাতে হানাদার বাহিনীর নির্বচারে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের পর থেকেই এ দেশের সর্বস্তরের প্রায় এক কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয়। ভারত সরকার ও বন্ধুপ্রতিম জনগণ শরণার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করে এবং ভরণ-পোষণসহ নানা রকম সাহায্য-সহযোগিতা দেয়। ভারত সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। একপর্যায়ে সামরিক শক্তি দিয়েও বাংলাদেশকে স্বাধীন হতে সাহায্য করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারত ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয়।
বহির্বিশ্বের মিত্র দেশের ভূমিকা: বহির্বিশ্বের সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্র দেশ যুক্তরাজ্য, জাপান ও পশ্চিমের অনেক দেশের সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়। কারণ, সবাই বুঝেছিল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ একটি ন্যায়সংগত যুদ্ধ। পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা ও গণহত্যা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। অন্য রাষ্ট্রের বহু নাগরিকও মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে অবদান রাখেন।
No comments:
Post a Comment