7.3.12

বাংলা: বিদায় হজ

বিদায় হজ
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, বাংলা বিষয়ের ওপর পড়াশোনায় তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আমাদের আজকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে বিদায় হজ'। এসো, তাহলে প্রশ্নোত্তর আলোচনা থেকে দেখা যাক বিদায় হজ' পড়ে এর বিষয়বস্তু আমরা কতটুকু অনুধাবন করতে পেরেছি।
প্রশ্ন: বিদায় হজ' বলতে কী বোঝ?
উত্তর: মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে পালিত শেষ হজ বিদায় হজ নামে পরিচিত। হিজরি দশম সালে লাখ লাখ মুসলমানসহ মহানবী (সা.) এই হজব্রত পালন করেন।
প্রশ্ন: হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে ছিলেন?
উত্তর: হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত, ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক, আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল।
প্রশ্ন: হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানুষের কাছে কী পঁেৌছে দিয়েছেন?
উত্তর: হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানুষের কাছে সত্য, ন্যায় ও মানবতার বাণী পঁেৌছে দিয়েছেন।
প্রশ্ন: বিদায় হজ কী?
উত্তর: মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের শেষ হজ Èবিদায় হজ' নামে পরিচিত। জিলকদ মাসের ২৫ তারিখ হজরত মুহাম্মদ (সা.) অসংখ্য সঙ্গী-সাথিসহ হজ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কার পথে যাত্রা করেন। জিলহজ মাসের পঁাচ তারিখে মহানবী (সা.) মক্কা শরিফে উপনীত হন। আরব দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা প্রায় দুই লাখ মানুষ সঙ্গে নিয়ে মহানবী (সা.) এই হজ পালন করেন। হিজরি দশ সালের জিলহজ মাসে অনুষ্ঠিত এই হজ ছিল মহানবী (সা.)-এর জীবনে শেষ হজ। ইসলামের ইতিহাসে এই হজই বিদায় হজ নামে খ্যাত।
প্রশ্ন: জিলকদ মাসের কোন সময় মহানবী (সা.) মক্কার পথে যাত্রা করেন?
উত্তর: জিলকদ মাসের শেষ দিকে মহানবী (সা.) মক্কার পথে যাত্রা করেন।
প্রশ্ন: হিজরি কত সালে বিদায় হজ অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তর: হিজরি দশম সালে বিদায় হজ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন: দশম হিজরির হজের সময় এলে মহানবী (সা.) অন্তরের গভীরে কী অনুভব করলেন?
উত্তর: কাবার আহ্বান অনুভব করলেন।
প্রশ্ন: মহানবী (সা.) কী স্থির করলেন?
উত্তর: সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে হজ পালন করবেন।
প্রশ্ন: যঁারা হজরতকে কখনো দেখেননি, তঁারা কী করলেন?
উত্তর: এই মহামানবকে একবার দেখার জন্য কাবা শরিফে এলেন।
প্রশ্ন: আরব দেশের নানা স্থান থেকে ওই সময় কত সংখ্যক মানুষ হজ পালন করতে আসেন?
উত্তর: প্রায় দুই লাখ মানুষ।
প্রশ্ন: হজরত মুহাম্মদ (সা.) কোন পাহাড়ে দঁাড়িয়ে ভাষণ দিলেন?
উত্তর: হজরত মুহাম্মদ (সা.) জাবালে রাহমাত নামক পাহাড়ে দঁাড়িয়ে ভাষণ দিলেন।
প্রশ্ন: মহানবী (সা.) ভাষণের শুরুতেই কার প্রশংসা করলেন।
উত্তর: মহানবী (সা.) ভাষণের শুরুতেই আল্লাহর প্রশংসা করলেন।
প্রশ্ন: একদিন আমাদের কার কাছে হাজির হতে হবে?
উত্তর: আল্লাহর কাছে।
প্রশ্ন: আল্লাহ আমাদের কাছে কী চাইবেন?
উত্তর: পৃথিবীতে কৃতকর্মের হিসাব চাইবেন।
প্রশ্ন: মুসলমানদের সম্পর্কে মহানবী (সা.) কী বলেছেন?
উত্তর: সব মুসলমান একে অন্যের ভাই।
প্রশ্ন: মহানবী (সা.) কী থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে বলেছেন?
উত্তর: সামান্য পাপ থেকেও নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে বলেছেন।
প্রশ্ন: ভাইয়ের সম্পত্তি সম্পর্কে মহানবী (সা.) কী বলেছেন?
উত্তর: এক ভাই কখনো অন্য ভাইয়ের সম্পত্তি জোর করে দখল কোরো না।'
প্রশ্ন: মহানবী (সা.) জোর দিয়ে কী বলেছেন?
উত্তর: মহানবী (সা.) জোর দিয়ে বলেছেন: ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। নিজের ধর্ম পালন করবে। যারা অন্য ধর্ম পালন করে, তাদের ওপর তোমার ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার চষ্টো কোরো না।

প্রশ্ন: অপরাধ সম্পর্কে মহানবী (সা.) কী বলেছেন?
উত্তর: একজনের অপরাধের জন্য অন্যকে দায়ী করা চলবে না।
প্রশ্ন: ভাষণ শেষে মহানবী (সা.) আকাশের দিকে তাকিয়ে কী বললেন?
উত্তর: ‘হে আল্লাহ, আমি কি তোমার বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি?’
প্রশ্ন: বুঝিয়ে লেখো—
হিজরি, জিলকদ, জাবালে রাহমাত, ক্রীতদাস।
উত্তর: হিজরি: হজরত মহানবী (সা.)-এর মক্কা ছেড়ে মদিনা যাওয়ার দিন থেকে হিজরি সাল গণনা করা হয়। চাঁদের সঙ্গে যুক্ত বলে এই সালের মাসগুলোকে চান্দ্রমাস বলা হয়।
জিলকদ: আরবি বছরের একটি মাসের নাম। জিলকদ মাসের পরের মাস জিলহাজ। জিলহাজ মাসে হজ অনুষ্ঠিত হয়।
জাবালে রাহমাত: মক্কার প্রায় আট কিলোমিটার দূরে আরাফাত মাঠের পাশে অবস্থিত পাহাড়ের নাম। এই পাহাড়ে দাঁড়িয়ে মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।
ক্রীতদাস: মহানবী (সা.)-এর সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লোক বেচাকেনা হতো। এ রকম কেনা লোকদের ক্রীতদাস বলা হতো। ক্রীতদাস-দাসীদের প্রতি নির্দয় ও অমানবিক আচরণ করা হতো। মহানবী (সা.) ক্রীতদাস-দাসীদের প্রতি ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন: হিজরি কোন সালে বিদায় হজ অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তর: মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের শেষ হজ ‘বিদায় হজ’ নামে পরিচিত। জিলকদ মাসের ২৫ তারিখে হজরত মুহাম্মদ (সা.) অসংখ্য সঙ্গী-সাথিসহ হজ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কার পথে যাত্রা করেন। জিলহজ মাসের ৫ তারিখে মহানবী (সা.) মক্কা শরিফে উপনীত হন। আরব দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা প্রায় দুই লাখ মানুষের উপস্থিতিতে হিজরি দশম সালে বিদায় হজ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন: আরাফাত ময়দানে মহানবী (সা.)-এর মনের অবস্থা কেমন হয়েছিল?
উত্তর: দশম হিজরির জিলহজ মাস। আরব দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় দুই লাখ মানুষ হজ্রপালন করার জন্য কাবা শরিফে এসেছেন। আরাফাতের ময়দানে লাখ লাখ মানুষ দেখে নবীজির মন আনন্দে ভরে গেল। মহানবী (সা.) আবেগে আপ্লুত হলেন। জাবালে রাহমাত নামক পাহাড়ে দাঁড়িয়ে তিনি প্রথমেই আল্লাহর প্রশংসা করলেন। তারপর গভীর আবেগ আর অনুভূতি মিশিয়ে আরাফাত ময়দানে সমবেত মানুষের উদ্দেশ্যে তাঁর জীবনের শেষ ভাষণ প্রদান করেন।
প্রশ্ন: বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সা.) ক্রীতদাস সম্পর্কে কী বলেছিলেন?
উত্তর: আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিদায় হজের ভাষণ বিশ্বমানবতার এক অমূল্য সম্পদ। মহানবী (সা.) তাঁর ভাষণে ক্রীতদাস-ক্রীতদাসী সম্পর্কে যা বলেছেন, তা হলো:
১. তোমাদের ক্রীতদাস-ক্রীতদাসীরাও আল্লাহর বান্দা।
২. তাদের প্রতি নিষ্ঠুর ব্যবহার কোরো না।
৩. তোমরা নিজেরা যা খাবে, তাদেরও তা-ই খেতে দেবে।
৪. নিজেরা যে কাপড় পরবে, তাদেরও তা-ই পরতে দেবে।
৫. কোনো ক্রীতদাস যদি নিজের যোগ্যতায় আমির হয়, তবে তাকে মেনে চলবে, তখন বংশমর্যাদার কথা বলবে না।
প্রশ্ন: ধর্ম সম্পর্কে হজরত মুহাম্মদ (সা.) কী বলেছেন?
উত্তর: মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ‘বিদায় হজ’-এর ভাষণ ইতিহাস বিখ্যাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ। এই ভাষণে মহানবী (সা.) ধর্ম সম্পর্কে যে উপদেশ দিয়েছেন, তা নিচে লেখা হলো:
১. ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না।
২. নিজের ধর্ম পালন করবে।
৩. যারা অন্য ধর্ম পালন করে, তাদের ওপর তোমার ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কোরো না।
প্রশ্ন: মহানবী (সা.) কোন চারটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে বলেছেন?
উত্তর: হিজরি দশম সালে অনুষ্ঠিত বিদায় হজের ভাষণে নবীজি (সা.) চারটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে বলেছেন। এই চারটি কথা হলো:
১. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও উপাসনা কোরো না।
২. অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা কোরো না।
৩. পরের সম্পদ অপহরণ কোরো না।
৪. কারও ওপর অত্যাচার কোরো না।
প্রশ্ন: হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের কাছে কোন দুটি জিনিস রেখে গেছেন?
উত্তর: বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত, ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক আমাদের মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি আমাদের জন্য দুটি মহামূল্যবান জিনিস রেখে গেছেন। আমাদের কাছে তার রেখে যাওয়া সেই দুটি জিনিস হলো—
এক. আল্লাহর বাণী আল-কোরআন।
দুই. আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ রাসুলের জীবনের আদর্শ।
এই সম্পর্কে তিনি বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন, ‘এই দুটি জিনিস যত দিন তোমরা আঁকড়ে ধরে থাকবে, তত দিন কেউ তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে পারবে না।’
প্রশ্ন: বিদায় হজে মহানবী (সা.) নারী-পুরুষ সম্পর্কে কী বলেছেন?
উত্তর: বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সা.) নারী-পুরুষ সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন। তিনি বলেছেন, নারীর ওপর পুরুষের যেরূপ অধিকার আছে, পুরুষের ওপর নারীরও সেরূপ অধিকার রয়েছে।

No comments:

Post a Comment