প্রিয় শিক্ষার্থী, শুভেচ্ছা নিয়ো। পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় প্রতিবছরই রচনামূলক প্রশ্ন দেওয়া হয়ে থাকে। সে আলোকে আজ তোমাদের পরিবেশ পরিচিতি সমাজ বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করব।
প্রশ্ন: পানিসম্পদকে কীভাবে জীবনের জন্য নিরাপদ রাখা যায়, সে সম্পর্কে লেখো।
উত্তর: পানির অপর নাম জীবন। আমাদের দেশে নদনদী, খালবিল, পুকুর ইত্যাদিতে পানির অভাব নেই। কিন্তু রয়েছে নিরাপদ পানির অভাব। যে পানি পান বা ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হয় না, তাকে আমরা পানি বা বিশুদ্ধ বলতে পারি। এলাকার লোকজনের স্বাস্থ্যকে নিরাপদ রাখতে হলে নিরাপদ পানি পান ও ব্যবহার করতে হবে। এ ব্যাপারে এলাকার সবাইকে সচেতন করা আমাদের দায়িত্ব। পানি ফুটিয়ে পান করলে তা জীবনের জন্য নিরাপদ। তাই এলাকার সবাইকে প্রয়োজনবোধে পানি ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দেব। গভীর নলকূপের পানিও নিরাপদ। এ ছাড়া পানিকে দূষিত করে এমন সব কাজ থেকে আমরা বিরত থাকব এবং এলাকাবাসীকে এ বিষয়ে সচেতন করব। অনেক সময় শহরাঞ্চলে রাস্তা কেটে আমরা ওয়াসার পানির লাইন ক্ষতিগ্রস্ত করি। ফলে দূষিত পদার্থ পানিতে মিশে যায়। আবার কখনো পানির লাইন ফেটে পানি দূষিত হয়ে পড়ে। এ ধরনের পানির ব্যবহার জীবনের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়। যদি আমাদের এলাকায় এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে খবর দেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব।
গ্রামাঞ্চলে সাধারণত পানির জন্য টিউবওয়েল বা নলকূপ ব্যবহার করা হয়। নলকূপের গোড়া অপরিচ্ছন্ন থাকলে পানি দূষিত হতে পারে। আমরা জানি, পানি অত্যন্ত মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। পানির অপব্যবহার ও পানি দূষণ আমাদের জন্য ক্ষতিকারক। তাই আমরা টিউবওয়েল ও পানি সরবরাহকারী অন্যান্য উৎসের যত্ন নেব। এতে এলাকার লোকজনের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। ফলে পানিসম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হবে। আমাদের দেশে কোনো কোনো এলাকার পানিতে আর্সেনিক দূষণ দেখা দিয়েছে। আর্সেনিক এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ, যা মাটির নিচে থাকে এবং পানির সঙ্গে মিশে পানিকে দূষিত করে। এই পানি নলকূপের মাধ্যমে ওপরে উঠে আসে। আর্সেনিকযুক্ত পানি দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে হাত ও পায়ের তালুতে এক ধরনের চর্মরোগ হয়, যা পরবর্তী সময়ে ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। আর্সেনিকযুক্ত পানি জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। অতএব এ ধরনের পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য এলাকার লোকজনকে সচেতন করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিভিন্ন বেসকারি সংস্থা আর্সেনিকযুক্ত নলকূপগুলো লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করে থাকে। আমরা এই লাল রঙের চিহ্ন দেওয়া নলকূপের পানি পান করব না। এলাকার অন্যদেরও আর্সেনিকযুক্ত নলকূপের পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে বলব। এভাবে এলাকাকে আর্সেনিক দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। পানিসম্পদ নিরাপদ হলে আমাদের জীবনও নিরাপদ থাকে।
প্রশ্ন: কীভাবে এলাকাবাসীকে স্বনির্ভর করা যায়?
উত্তর: বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক অবস্থার লোক বসবাস করে। আবার প্রতিটি এলাকায় জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান তৈরি বা উৎপাদিত হয় না। ফল-ফুল, শাকসবজি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন। এগুলো উৎপাদনের মাধ্যমে এলাকার লোকজনের খাদ্য ও পুষ্টির জোগান দিতে পারে। সরকারের কৃষি বিভাগ থেকে ও অন্যান্য বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে এ বিষয় বিভিন্ন এলাকায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং চারা ও বীজ সরবরাহ করা হয়। এলাকায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড আয়োজনের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে স্বাস্থ্যসচেতন ও স্বনির্ভর হতে আমরা সাহায্য করতে পারি। নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা কর্মকাণ্ড গ্রহণ করতে পারি। যেমন, আমরা পুকুরের কচুরিপানা, ঝোপঝাড় ও ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার করে মশা-মাছি নিধনের ব্যবস্থা করতে পারি। এলাকায় সমবায় পদ্ধতিতে মাছ চাষ, হাঁস-মুরগির চাষ করতে পারি। এতে মানুষের আয়-উপার্জন বাড়ানো যায়। পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হয়। আমাদের দেশে প্রায় প্রতিবছর ঝড়, বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর, সেতু ও প্রতিষ্ঠানাদি মেরামত করায় অংশগ্রহণ করতে পারি। এসব কিছুই এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অংশ। এলাকার উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন। তাই সব কাজে সামর্থ্য অনুযায়ী অংশগ্রহণ করা আমাদের দায়িত্ব। এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সমাজের সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। সেই সঙ্গে এলাকার অধিবাসী হিসেবে বড়দের সঙ্গে ছোটরাও সাধ্যমতো এসব কাজে অংশগ্রহণ করবে। এলাকার উন্নয়নে সাধ্যমতো অবদান রাখবে।
No comments:
Post a Comment