28.2.12

অধ্যায়: ২ সামাজ


প্রশ্ন: সামাজিক সম্পদ হিসেবে পাঠাগারের গুরুত্ব বর্ণনা করো।
উত্তর: সামাজিক পাঠাগার একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সম্পদ। বই মানুষের সবচেয়ে উপকারি বন্ধু। পাঠাভ্যাস আমাদের মনকে আনন্দিত করে, প্রফুল্ল রাখে। পত্র-পত্রিকা থেকে আমরা আমাদের পাঠ্যপুস্তকের বাইরের জ্ঞান অর্জন করতে পারি। গল্পের বই, পত্র পত্রিকা, প্রবন্ধ অন্যান্য বই আমাদের মানসিক বিকাশ ও উন্নতিতে অবদান রাখে। আমরা পাঠাগারের বই, পত্রপত্রিকা যত্নসহকারে পড়ব। পাঠাগারের বইয়ের ভেতরে কোনোরূপ মন্তব্য লেখা বা বই যাতে কাটা ছেঁড়া ও চুরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখব। পাঠাগারের উন্নতির জন্য চেষ্টা করব।
প্রশ্ন: আমাদের জনজীবনে রাষ্ট্রীয় সম্পদের গুরুত্ব বর্ণনা করো।
উত্তর: রাষ্ট্রীয় সম্পদ দেশের জনগণের সম্পদ। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল থেকে আমরা চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকি। তাই আমাদের জীবনে হাসপাতালের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা হাসপাতালের আইনকানুন মেনে চলব। হাসপাতালের যেখানে-সেখানে থুতু, ময়লা ফেলে হাসপাতাল নোংরা করব না। হাসপাতাল যাতে পরিষ্কার থাকে সেদিকে খেয়াল রাখব। আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন—বাংলা একাডেমী, শিশু একাডেমী, গণগ্রন্থাগার ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ। দেশের শিক্ষা, সাংস্কৃতিক উন্নয়নে এসব প্রতিষ্ঠানের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। একইভাবে শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা ইত্যাদি বিনোদনমূলক রাষ্ট্রীয় সম্পদ। জাতীয় জাদুঘর ইত্যাদি থেকে দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারি। এ ধরনের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ আমাদের রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদের মধ্যে আরও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা যেমন—রাস্তাঘাট, রেলপথ, পানিপথ, ফ্লাইওভার, টেলিফোন, বিমান, রেলগাড়ি, স্টিমার, ফেরি ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা হয়। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নতিতে এগুলোর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। যমুনা সেতু আমাদের দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এর মাধ্যমে দেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। অল্প সময়ে যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হয়েছে। একইভাবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সেতুগুলো দেশের উন্নতিতে অবদান রাখছে। গণমাধ্যম হিসেবে রাষ্ট্রীয় রেডিও, টেলিভিশনের ভূমিকাও অপরিসীম। রাষ্ট্রীয় সম্পদের মধ্যে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। যেমন—বিভিন্ন ধরনের খনিজ, বনভূমি, নদী, সমুদ্র প্রভৃতি। নদীর তীরে নদীবন্দর গড়ে ওঠে। দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নদীর পানি দিয়ে আমরা কৃষি জমিতে পানি সেচ করি। নদীর প্লাবন জমির উর্বরতা বাড়ায়। এতে ফসলের পরিমাণ বাড়ে। নদীর মাধ্যমে দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অল্প খরচে মালামাল আনা-নেওয়া করা যায়, যাতায়াত করা যায়। নদীকে আমাদের জীবন বলা হয়। সমুদ্র আমাদের লবণসহ অন্যান্য খনিজ সম্পদের আধার। তা ছাড়া সমুদ্র থেকে আমরা মাছ পাই। সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দরের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ সংঘটিত হয়। কাজেই রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে এগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন: রাষ্ট্রীয় সম্পদকে কেন জনসম্পদ বলা হয়?
উত্তর: রাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে বড় কল্যাণকর সংগঠন। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পদের বাইরে একটি দেশের যাবতীয় সম্পদ রাষ্ট্রীয় সম্পদ। রাষ্ট্র জনগণের ব্যবহার ও কল্যাণের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান, সুযোগ-সুবিধা গড়ে তোলে। রাস্তাঘাট, সেতু, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এ ছাড়া একটি দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন: নদনদী, খালবিল, বনভূমি, বিভিন্ন খনিজ সম্পদ ইত্যাদিও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অন্তর্গত। এসব রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করার অধিকার রাষ্ট্রের সব মানুষের রয়েছে।
এসব কারণে রাষ্ট্রীয় সম্পদকে জনসম্পদও বলা হয়। আসলে সব সামাজিক সম্পদই রাষ্ট্রীয় সম্পদ। রাষ্ট্র সমাজ ও মানুষের কল্যাণে তার সব সম্পদ ব্যবহার করে।
প্রশ্ন: জনগণকে শিক্ষিত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিদ্যালয়ের গুরুত্ব বর্ণনা করো।
উত্তর: আমাদের এলাকার বিদ্যালয়, অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমাদের সামাজিক সম্পদ। বিদ্যালয় আমাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। বিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করে আমরা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হই। এ জন্য বিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতি গঠনের কারখানা বলা যায়। বিদ্যালয় আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সম্পদ। আমরা বিদ্যালয়ের প্রতিটি জিনিস যত্নসহকারে ব্যবহার করব। কোনো জিনিসের যেন ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখব। বিদ্যালয়ে আমরা শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে গাছ লাগাব, বাগান করব এবং বাগানের পরিচর্যা করব। রাষ্ট্র পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ। আমরা অতি অল্প খরচে এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করতে পারি। দেশের জনগণকে শিক্ষিত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: আমরা কীভাবে পরিবেশকে সুন্দর রাখব?
উত্তর: আমাদের এলাকার খোলা মাঠ, পার্ক ইত্যাদিও আমাদের সামাজিক সম্পদ। আমাদের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য আলো, বাতাস, বিনোদনের প্রয়োজন। এ জন্য দরকার খোলা জায়গা, পার্ক, মাঠ ইত্যাদি। এগুলো আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। খোলা জায়গায়, পার্কের যেখানে-সেখানে কাগজপত্র, বোতল, ময়লা ইত্যাদি ফেলে আমাদের পরিবেশকে দূষিত করব না। ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলব। সমাজে ছোট-বড় সবাইকে যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলার জন্য অনুরোধ করব। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলার ক্ষতিকর প্রভাব বুঝিয়ে বলব। সমাজে বড়দের সঙ্গে পরামর্শ করে বাড়িঘরের মযলা-আবর্জনা ফেলার জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থান এবং ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করব। ময়লা যাতে নিয়মিত নির্দিষ্ট স্থান এবং ডাস্টবিন থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সেদিকে খেয়াল রাখব। এতে করে আমাদের পরিবেশের উন্নতি হবে।
প্রশ্ন: রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ ও যত্ন নেওয়া প্রয়োজন কেন?
উত্তর: সামাজিক সম্পদ সমাজে বসবাসকারী সবার সম্পদ। একইভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ দেশের জনগণের সম্পদ। এই সমস্ত সম্পদের ব্যবহার করার অধিকার যেমন সবার আছে, তেমনি এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের দায়িত্ব সমাজের ও রাষ্ট্রের সবার। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার মধ্যেই রয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন। এই সমস্ত সম্পদ ব্যবহারের নিয়ম কানুন মেনে চললে আমাদের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। অপব্যবহার করলে সম্পদের ক্ষতি হয়। অনেক বাড়িতে রান্না শেষ হওয়ার পরও গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখে। গ্যাসকে এভাবে ব্যবহার করলে আমাদের গ্যাসের মজুদ অতি দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। কাজেই গ্যাসের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অনেকে রেলগাড়িতে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করে। রেলগাড়ির সিট ছিঁড়ে ফেলে, কাটে, রেল লাইনের স্লিপার খুলে নিয়ে যায়। এতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি যাত্রী ও জনগণের প্রাণহানি ঘটতে পারে।
রাস্ট্রীয় ও সামাজিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এতে আমরা অংশ নেব। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের উন্নতির সঙ্গে আমাদের সবার উন্নতি জড়িত, কাজেই রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ ও যত্ন নেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।

No comments:

Post a Comment