3.9.11

সমাজ: অধ্যায় ১২


প্রশ্ন: মোগল আমলে বাংলায় বারভূঁইয়াদের শাসন সম্পর্কে লেখো।
উত্তর: দাউদ কররানিকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে বাংলায় মোগল শাসনের সূচনা হয়। কিন্তু দিল্লির সম্রাট আকবর বাংলার সমগ্র এলাকার ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিম ও উত্তর বাংলার বেশ কিছু অঞ্চল বড় বড় জমিদারের অধিকারে ছিল। অধিকাংশ জমিদারই আকবর তথা মোগলদের অধিকার মেনে নেননি। তাঁরা নিজ নিজ জমিদারিতে স্বাধীন ছিলেন। তাঁদের শক্তিশালী সেনাদল এবং নৌবাহিনী ছিল। তাঁরা বারভূঁইয়া নামে পরিচিত। এখানে বার বলতে ১২ জনের সংখ্যা বোঝায় না। সমসাময়িক ঐতিহাসিকেরা বারভূঁইয়া ও তাঁদের নেতার কথা বলেছেন। অর্থা ৎ নেতাসহ বারভূঁইয়া ১৩ জন। তা ছাড়া সম্রাট আকবরের সময়ের বারভূঁইয়া এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলের বারভূঁইয়া হুবহু একই ব্যক্তিবর্গ ছিলেন না। বাংলার বারভূঁইয়াদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ঈশা খান, রাজা প্রতাপাদিত্য, চাঁদ রায়, কেদার রায়, মুসা খান, ফতেহ খান প্রমুখ। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিলেন সোনারগাঁয়ের জমিদার ঈশা খান ও তার ছেলে মুসা খান। আকবরের আমলে ঈসা খানকে দমনের জন্য একাধিকবার চেষ্টা চালানো হয়। আকবরের অন্যতম সেনাপতি মানসিংহ তাঁর হাতে পরাজিত হন। ঈশা খান শেষের দিকে মোগলদের প্রতি সদ্ভাব বজায় রেখেছিলেন। ঈসা খানের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে মুসা খান বারভূঁইয়াদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। অন্যদিকে সম্রাট আকবরের পর দিল্লির সম্রাট হন জাহাঙ্গীর। তিনি ইসলাম খানকে সুবাদার নিয়োগ করে বাংলায় পাঠান। তিনিই শেষ পর্যন্ত মুসা খানকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। মুসা খানের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলায় বারভূঁইয়ার কর্তৃত্বের অবসান ঘটে এবং বাংলায় মোগল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন: ইবনে বতুতার বিবরণ থেকে কী জানা যায়?
উত্তর: উত্তর আফ্রিকার বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা সুলতানি আমলে বাংলা সফর করেন। তাঁর বিবরণ থেকে বাংলার মানুষের পোশাক, অলংকার ও খাদ্য সম্পর্কে নিম্নলিখিত তথ্য জানা যায়:
-ধনী মুসলমান পরিবারে পুরুষের সাধারণ পোশাক ছিল ইজার (পায়জামা) ও লম্বা জামা। জামায় থাকত গলাবন্ধ এবং কোমরে বাঁধা থাকত উজ্জ্বল ফিতা। মাথায় পাগড়ি পরার রেওয়াজ ছিল। পায়ে কারুকাজখচিত চামড়ার জুতা ও মোজা ব্যবহার করা হতো। মধ্যবিত্ত মুসলমান পুরুষেরা পায়জামা, জামা, পাগড়ি ও জুতা ব্যবহার করতেন। সাধারণ মুসলিম পুরুষেরা পরিধান করতেন লুঙ্গি ও ফতুয়া ধরনের জামা। তাঁরা মাথায় টুপি পরতেন। কামিজ, সালোয়ার এবং কখনো কখনো দামি শাড়ি ছিল অভিজাত মুসলিম মহিলাদের পোশাক। তাঁরা দামি ওড়না ব্যবহার করতেন। স্বল্প আয়ের মহিলারা শাড়ি পরতেন।
-অভিজাত হিন্দু পুরুষ ও রমণীরা জাঁকজমকপূর্ণ ও রুচিসম্মত পোশাক পরতেন। সাধারণ হিন্দুরা ধুতি ও চাদর ব্যবহার করতেন। এক ধরনের হাঁটু পর্যন্ত লম্বা জামাও তাঁরা ব্যবহার করতেন। এ জামার নাম ছিল অঙ্গরাখি। জুতার বদলে তাঁরা পায়ে খড়ম ব্যবহার করতেন। নিম্ন শ্রেণীর হিন্দুরা শুধু একপ্রস্থ ধুতি পরতেন। হিন্দু মহিলাদের সাধারণ পোশাক ছিল শাড়ি। পুরুষ-মহিলা সবাই অলংকার পছন্দ করতেন, তবে অলংকার বেশি প্রিয় ছিল মহিলাদের। সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের অলংকার ব্যবহূত হতো।
-গ্রামের মানুষ সাধারণ পোশাক পরত। জুতা-মোজার ব্যবহার ছিল, তবে সবার মধ্যে নয়। সাধারণ মানুষ পায়ে কাঠের খড়ম পরত।
-ভাত, মাছ, তরকারি, ডাল ছিল জনপ্রিয় খাবার। উ ৎ সব অনুষ্ঠানে মাংস পরিবেশনের রেওয়াজ ছিল। তা ছাড়া লোকজন দুধ, দই, ছানা, মিষ্টি, পায়েস, ক্ষীর খেতে ভালোবাসত। খাওয়াদাওয়া শেষে পান খাওয়ার চল ছিল।

No comments:

Post a Comment