1.3.12

বাংলা: সংকল্প


পঞ্চম শ্রেণীর প্রিয় শিক্ষার্থী, অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিয়ো। স্বাগত জানাচ্ছি আমাদের আজকের আলোচনায়। তোমাদের জন্য আজ রয়েছে বাংলা বিষয়ের ‘সংকল্প’ কবিতা।
কবি পরিচিতি : আলোচ্য কবিতাটি রচনা করেছেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বিদ্রোহী কবি নামে পরিচিত আমাদের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ সাল)। তাঁর জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রাম। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা, গান, গল্প, নাটক ও উপন্যাস আমাদের বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। শিশুদের জন্য তিনি অনেক গান, কবিতা, ছড়া ও নাটক লিখেছেন। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, ঝিঙেফুল ইত্যাদি। শিশু-কিশোরদের জন্য রচিত কবি নজরুল ইসলামের অনেক উদ্দীপনামূলক ও প্রেরণামূলক কবিতার অন্যতম আমাদের আজকের আলোচ্য কবিতা ‘সংকল্প’।
মূলভাব : এই কবিতায় কবি অসীম বিশ্বকে জানার এক অদম্য কৌতূহল ব্যক্ত করেছেন। কিশোরের মন চিরকৌতূহলী। সে জানতে চায় বিশ্বের সবকিছু। আবিষ্কার করতে চায় অসীম আকাশের সব অজানা রহস্য, সে বুঝতে চায় কেন মানুষ ছুটছে অসীমে, অতলে, অন্তরিক্ষে, বীর কেন জীবনকে অনায়াসে বিপন্ন করে মৃত্যুকে বরণ করে। সে জানতে চায় ডুবুরি কেমন করে গভীর পানিতে ডুব দিয়ে মুক্তা আহরণ করছে। দুঃসাহসী অভিযাত্রী কেমন করে আকাশের দিকে উড়ে চলছে। কিশোর মন তাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বদ্ধঘরে আবদ্ধ না থেকে এই পৃথিবীটা ঘুরেফিরে দেখবেই।
কবি পরিচিতি ও সংকল্প কবিতার মূলভাব জানা হলো, এবার এসো, কিশোর মনের অদম্য কৌতূহল সমৃদ্ধ সংকল্প কবিতায় ব্যবহূত কয়েকটি শব্দের অর্থ, বাক্য রচনাসহ নমুনা প্রশ্নোত্তর দেখা যাক।

প্রশ্ন: নিচের শব্দগুলোর অর্থ লেখো:
সংকল্প, বদ্ধ, যুগান্তর, দেশান্তর, বরণ, ডুবুরি, দুঃসহাসী, চন্দ্রলোকে, অচিনপুর, কিসের নেশায়, মরণযন্ত্রণা, স্বর্গপানে।
উত্তর: প্রদত্ত শব্দ শব্দের অর্থ
সংকল্প— প্রতিজ্ঞা
বদ্ধ— বন্ধ।
যুগান্তর— এক যুগের পর আরেক যুগ।
দেশান্তর— এক দেশ থেকে আর এক দেশ।
বরণ— কোনো কিছু সাদরে গ্রহণ।
ডুবুরি— যারা গভীর পানিতে ডুব দিয়ে কোনো জিনিস উদ্ধার করে আনে।
দুঃসাহসী— অত্যধিক সাহসী।
চন্দ্রলোকে— চাঁদের দেশে।
অচিনপুর— অচেনা জায়গা।
কিসের নেশায়— কী উদ্দেশ্যে, কী আকর্ষণে।
মরণযন্ত্রণা— মৃত্যুর মতো কঠিন যন্ত্রণা।
স্বর্গপানে— আকাশের দিকে।

প্রশ্ন: সমার্থক শব্দ লেখো:
সংকল্প—প্রতিজ্ঞা সিন্ধু—সাগর
বদ্ধ—বন্ধ বরণ—সাদরে গ্রহণ
ইঙ্গিত—ইশারা জগৎ—পৃথিবী

প্রশ্ন: নিচের শব্দগুলোর ক্রিয়াপদের সাধু ও চলিত রূপ লেখো:
চলিত রূপ সাধু রূপ চলিত রূপ সাধু রূপ
আঁকব আঁকিব করছে করিতেছে
দেখব দেখিব ছুটছে ছুটিতেছে
ঘুরছে ঘুরিতেছে আসছে আসিতেছে
মরছে মরিতেছে চলছে চলিতেছে।

প্রশ্ন: নিচের শব্দগুলো দিয়ে বাক্য রচনা করো।
ফেড়ে, কিসের নেশায়, বরণ, ডুবুরি, মরণ যন্ত্রণা, বিশ্বজগৎ, সেঁচে।
উত্তর:
প্রদত্ত শব্দ বাক্য রচনা
ফেড়ে— কাঠুরে কুড়াল দিয়ে কাঠটা ফেড়ে নিল।
কিসের নেশায়— কিসের নেশায় রহিম এমন ছুটোছুটি করছে কেউ জানে না।
বরণ— পয়লা বৈশাখে আমরা নতুন বছরকে বরণ করে নিই।
ডুবুরি— ডুবুবিরা মেঘনা নদীর গভীর তলদেশে নিমজ্জিত লঞ্চটি উদ্ধার করেছে।
মরণ— যন্ত্রণা-সাহসী ব্যক্তি মরণ-যন্ত্রণাকে ভয় পায় না।
বিশ্বজগৎ— কবি বিশ্বজগৎ আপন হাতের মুঠোয় পুরে দেখতে চান।
সেঁচে— ডুবুরিরা পানি সেঁচে মুক্তা আহরণ করে।
প্রশ্ন: কবি বদ্ধ ঘরে থাকতে চান না কেন?
উত্তর: অজানাকে জানার, অদেখাকে দেখার কৌতূহল মানুষের চিরন্তন। কবিও এর ব্যতিক্রম নন। তিনি বদ্ধ ঘরে থাকতে চান না। কারণ, তিনি জগতের সব রহস্য জানতে চান। তিনি জানতে চান সারা বিশ্বের মানুষ যুগ যুগ ধরে কীভাবে নিত্যনতুন আবিষ্কারের নেশায় মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ জ্ঞান করে এগিয়ে চলছে। সমুদ্রের তলদেশে গিয়ে ডুবুরি কীভাবে মুক্তা সংগ্রহ করে কিংবা দুঃসাহসী বৈমানিক কীভাবে আকাশে পাড়ি জমায়—এসব কিছুও কবি জানতে চান। বদ্ধঘরে আবদ্ধ না থেকে কবি রহস্যঘেরা অসীম বিশ্ব তথা বিশ্বজগৎকে হাতের মুঠোয় পুরে পরখ করে দেখতে চান।
প্রশ্ন: বীর ডুবুরি কী করে?
উত্তর: গভীর পানিতে ডুব দিয়ে যারা কোনো জিনিস উদ্ধার করে আনে, তাদের ডুবুরি বলা হয়। সংকল্প কবিতায় কবি ডুবুরিদের বীর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বীর ডুবুরিরা নদী বা সমুদ্রের তলদেশ থেকে মুক্তা সংগ্রহ করে। নদী বা সমুদ্রের গভীর তলদেশে কোনো নৌকা লঞ্চ বা জাহাজ নিমজ্জিত হলে বীর ডুবুরিরা তা উদ্ধার করে।
প্রশ্ন: চন্দ্র লোকের অচিনপুরে কারা যেতে চায়?
উত্তর: চন্দ্রলোক কথাটির অর্থ হলো চাঁদের দেশ। বিশ্বের মানুষের কাছে দেশ একটি অজানা-অচেনা জায়গা। অজানা-অচেনা জায়গা সম্পর্কে মানুষ চিরকালই কৌতূহলী। আর এই কৌতূহলী মানুষই চন্দ্রলোকের অচিনপুরে যেতে চায়। পৃথিবীর এই দুঃসাহসী মানুষ হাউই চড়ে চন্দ্রলোকের অচিনপুর অভিযান সফল করতে চায়। জানতে চায় অচিনপুর চন্দ্রলোকের অজানা সব রহস্য।
প্রশ্ন: কবি পাতাল ফেড়ে নামতে চান কেন?
উত্তর: পাতাল বলতে আমরা সাগরের তলদেশ বা মাটির নিচের দেশকে বুঝে থাকি। মহাকাশের মতো পাতালপুরিও এক অজানা রহস্যঘেরা জায়গা। অসীম বিশ্বকে জানার অদম্য কৌতূহলী কবি মাটির নিচে পাতালে কী আছে, তা জানার জন্য পাতাল ফেড়ে সেখানে নামতে চান। পাতালের অজানা রহস্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে কৌতূহল মেটাতে চান।
প্রশ্ন: সংকল্প কবিতায় কবি কী কী সংকল্প করেছেন, লেখো!
উত্তর: ‘সংকল্প’ কবিতায় কবি যেসব সংকল্প করেছেন, সেসব নিচে লেখা হলো:
১। জগৎটা ঘুরে দেখবেন।
২। যুগ থেকে যুগে মানুষ কীভাবে বেঁচে আসছে, তা বুঝতে চেষ্টা করবেন।
৩। এক দেশ থেকে আরেক দেশে মানুষ কেন ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে, তা দেখবেন।
৪। অগুনতি সাহসী ব্যক্তি কিসের উন্মাদনায় বিপদ তুচ্ছ করে নানা কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, মৃত্যু পর্যন্ত বরণ করছে—সেসব তিনি দেখবেন।
৫। সমুদ্রের তলদেশে গিয়ে ডুবুরি কীভাবে মুক্তা সংগ্রহ করে। কিংবা দুঃসাহসী বৈমানিক কীভাবে আকাশে পাড়ি জমায়, তা তিনি জানবেন।
৬। হাউই বা রকেটে চড়ে কে বা কারা চাঁদের দেশে যেতে চায়, কিংবা মঙ্গলগ্রহ থেকে আমাদের পৃথিবীর বুকে কোনো সংকেত ভেসে আসছে কি না, তা-ও তিনি জানতে চান।
৭। মাটির নিচে পাতালে কী আছে বা মাটির ওপর আকাশে কী আছে, তা জানার জন্য তিনি পাতাল ও মহাকাশে অভিযান চালাবেন।
৮। তিনি সারা পৃথিবী জয় করবেন, নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে পৃথিবীকে নেড়েচেড়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন।

No comments:

Post a Comment