8.8.12

সমাজ: অধ্যায়-১৪

অধ্যায়-১৪ 

প্রিয় শিক্ষার্থী, আলোচ্যসূচিতে আজ রয়েছে অধ্যায় ১৪ থেকে প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা।
 নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।
প্রশ্ন: বেগম রোকেয়া ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আজীবন কী করেছেন?
উত্তর: মানুষের সেবা করার জন্য আমাদের মধ্যে অনেক মহান মানুষ জন্মগ্রহণ করেছেন। মানবতার জন্য উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁরা দুস্থ, দরিদ্র, অসহায়, অসুস্থ ও দুঃখী মানুষের কল্যাণে এগিয়ে এসেছেন। পুরোনো সমাজব্যবস্থা ভেঙে নতুন সমাজ গড়ে তোলেন। বেগম রোকেয়া ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর— ঠিএক এমনই দুজন মহান ব্যক্তি। তাঁরা মানবকল্যাণ ও সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শিক্ষা, সমাজসংস্কার, সমাজসেবা, নারী মুক্তি, সাহিত্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। সমাজসেবায় তিনি প্রচুর টাকা দান করতেন। দুঃখী, গরিব, অসহায়, দুর্দশাগ্রস্ত, রুগ্ণ, অক্ষম ও বিপদগ্রস্ত মানুষকে তিনি সেবা ও সাহায্য করতেন। ১২৭২ বঙ্গাব্দে বাংলায় দুর্ভিক্ষ হয়। এ সময় তিনি নিজ গ্রামবাসীকে সাহায্যের জন্য ছয় মাস ধরে খাদ্য, কাপড় ইত্যাদি বিতরণ করেন।
বেগম রোকেয়া নারী জাগরণে বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, শিক্ষা ছাড়া নারী জাতির দুঃখ-দুর্দশা দূর হবে না। তিনি নারীদের শিক্ষিত করার জন্য নানা কর্মকাণ্ডে লেগে পড়েন। বেগম রোকেয়া মুসলিম নারীদের জন্য ‘মুসলিম মহিলা ট্রেনিং স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে নারীদের সেলাই, রান্না, সন্তান প্রতিপালনসহ বিভিন্ন বিষয় শেখানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। সামাজিক ও জাতীয় জীবনের কল্যাণে বেগম রোকেয়ার চিন্তা ও কাজ সত্যিই অতুলনীয়। তাঁর কাজের জন্য তাঁকে ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত’ বলা হয়।
আজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও বেগম রোকেয়া।
প্রশ্ন: শিক্ষা বিস্তার এবং সাহিত্যে বেগম রোকেয়ার অবদান সম্পর্কে লেখো।
উত্তর: বেগম রোকেয়ার সঙ্গে সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের বিয়ে হয় ১৮৯৮ সালে। তিনি ছিলেন বিহার রাজ্যের ভাগলপুরের অধিবাসী। বিয়ের পর বেগম রোকেয়ার লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে তাঁর স্বামী আনন্দিত হন। তিনি বেগম রোকেয়াকে লেখাপড়ার প্রতি আরও উৎসাহিত করেন। বেগম রোকেয়া স্বামীর কাছ থেকে ভালোভাবে উর্দু ও ইংরেজি শিক্ষা লাভ করেছিলেন।
বিয়ের মাত্র নয় বছর পর স্বামীর মৃত্যু হলে বেগম রোকেয়া ভাগলপুরে একটি মুসলিম বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর দায়িত্ব নেন। তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, শিক্ষা ছাড়া নারী জাতির দুঃখ-দুর্দশা দূর হবে না। তিনি মাত্র পাঁচজন ছাত্রী নিয়ে ভাগলপুরের স্কুল শুরু করেন। স্কুলের নাম রাখেন সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল। কিন্তু বিভিন্ন অসুবিধার কারণে ভাগলপুরের স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়। তিনি ভাগলপুর থেকে স্কুলটি কলকাতায় স্থানান্তর করেন এবং মাত্র আটজন ছাত্রী নিয়ে এটি আবার শুরু করেন।
নারী শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কথা বলে তিনি বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছাত্রী জোগাড়ের কাজে লেগে গেলেন। মেয়েদের মা-বাবা ও অভিভাবকদের অনুরোধ করতে লাগলেন। মেয়েরা কঠোর পর্দা মেনে চলত বলে তিনি পর্দাঘেরা গাড়ির ব্যবস্থা করলেন। প্রথমে ঘোড়ার গাড়ি, পরে মোটরগাড়ির ব্যবস্থা করলেন। আস্তে আস্তে তাঁর স্কুলে ছাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকল। মা-বাবাসহ অভিভাবকেরাও মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে রাজি হলেন। বেগম রোকেয়া মুসলিম নারীদের জন্য মুসলিম মহিলা ট্রেনিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করলেন। সেখানে নারীদের সেলাই, রান্না, সন্তান প্রতিপালনসহ বিভিন্ন বিষয় শেখানোর ব্যবস্থা ছিল।
বেগম রোকেয়া শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি সাহিত্যচর্চাও করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে মতিচুর, সুলতানার স্বপ্ন, অবরোধবাসিনী প্রভৃতি। এসব বইয়ে তিনি মেয়েদের দুঃখ-কষ্টের কথা লিখেছেন। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তিনি মেয়েদের লেখাপড়ার ওপর জোর দিয়েছেন।

No comments:

Post a Comment