5.4.12

হিন্দু ধর্মশিক্ষা: অধ্যায়-১

অধ্যায়-১ 
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ হিন্দুধর্ম শিক্ষা বিষয়ের ১ নম্বর অধ্যায়ের ‘স্রষ্টা ও সৃষ্টি’ থেকে নমুনা প্রশ্নোত্তর আলোচনা করব। এ ধরনের অন্য প্রশ্নোত্তরের জন্য অধ্যায়টির বিষয়বস্তু ভালোভাবে পড়বে।
# রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর দাও।
প্রশ্ন: আমাদের পৃথিবীর বর্ণনা দাও।
উত্তর: আমাদের এই পৃথিবী খুবই বিচিত্র। মাথার ওপরে রয়েছে সুনীল আকাশ। রাতের বেলা আকাশে ঝলমল করে গ্রহ-নক্ষত্র। দিনের বেলা সূর্যের আলোয় এসব দৃশ্য ঢাকা পড়ে যায়। তখন পৃথিবীর আসল রূপ প্রকাশ পায়। তখন পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, মাঠ-ঘাট, ফুল-ফল পরিবেশিত পৃথিবীকে আমরা দেখতে পাই। পৃথিবীতে রয়েছে অনেক জীব-জন্তু, পশুপাখি ও কীট-পতঙ্গ। এ ছাড়া রয়েছে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। জলে-স্থলে-আকাশে সব স্থানে যার সমান বিচরণ। এসব কিছু নিয়েই আমাদের এই পৃথিবী।
প্রশ্ন: ঈশ্বরের লীলা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ঈশ্বরই হচ্ছে পৃথিবী, আকাশ-বাতাস, জীব-জন্তু সবকিছুরই সৃষ্টিকর্তা। তিনি সর্বশক্তিমান। সবকিছুই তাঁর নিয়ন্ত্রণে, তিনি সৃজন-পালন ও সংহারকর্তা। তিনি স্বয়ম্ভু। ঈশ্বর যা কিছু করেন, সবই তাঁর লীলা। জীব ও জগতের সৃষ্টিও তাঁর একটি লীলা। ঈশ্বরের লীলার উদ্দেশ্য আনন্দ উপভোগ করা। এ উদ্দেশ্যে তিনি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন।
প্রশ্ন: ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার উপায় কী?
উত্তর: ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিপালন করেছেন। তাঁকে সন্তুষ্ট করতে হলে তাঁর আরাধনা করতে হবে। তাঁকে ভক্তি করতে হবে। তাঁর অস্তিত্ব আমাদের অন্তরে অনুভব করতে হবে। তাঁর প্রতি অবিচল বিশ্বাস রাখতে হবে। ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে হলে ভালোবাসতে হবে তাঁর সৃষ্টিকে। তাই ঈশ্বরের সৃষ্টিকে ভালোবাসাই তাঁকে সন্তুষ্ট করার উপায়।
প্রশ্ন: ঈশ্বর বলতে যা বোঝায় তা বর্ণনা কর।
উত্তর: আমাদের এই পৃথিবী, গ্রহ-নক্ষত্র, আকাশ-বাতাস, জীব-জন্তু, অপরূপ নিসর্গ আপনা-আপনি সৃষ্টি হয়নি। একজন এসব কিছু সৃষ্টি করেছেন। এই স্রষ্টা বা সৃষ্টিকর্তাকেই আমরা ঈশ্বর বলি। তিনি স্বয়ম্ভু। সর্বশক্তিমান। সবকিছুই তাঁর নিয়ন্ত্রণে। তিনি সৃজন, পালন ও সংহারকর্তা। বিশ্বের সর্বত্র তাঁর লীলা প্রকাশিত।
# সংক্ষেপে উত্তর দাও।
প্রশ্ন: ঈশ্বর কেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন?
উত্তর: ঈশ্বর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি স্বয়ম্ভু। তিনি যা কিছু করেন সবকিছুই তাঁর লীলা। তাঁর অপার মহিমা। আনন্দ উপভোগের জন্যই তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন।
প্রশ্ন: মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব কেন?
উত্তর: ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টিকুলের মধ্যে মানুষকেই সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। মানুষেরই রয়েছে বিবেক-বুদ্ধি। মানুষ তার বিবেক খাটিয়ে জলে-স্থলে-আকাশে—সব স্থানে বিচরণ করতে পারে। তাই মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।
প্রশ্ন: ঈশ্বরকে স্বয়ম্ভু বলা হয় কেন?
উত্তর: ঈশ্বর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তাঁকে কেউ সৃষ্টি করেননি। তিনি নিজেই নিজের স্রষ্টা। তাই তাঁকে স্বয়ম্ভু বলা হয়।
প্রশ্ন: ঈশ্বরের লীলা প্রকাশের উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: ঈশ্বর যা কিছু করেন তাঁর লীলা। তাঁর লীলা প্রকাশের উদ্দেশ্য আনন্দ উপভোগ করা। লীলার ছলেই তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন।
প্রশ্ন: ঈশ্বর কোথায় অবস্থান করেন?
উত্তর: ঈশ্বর ও জীবের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। সন্তান ও বাবা-মায়ের সম্পর্কের মতো। সব সৃষ্টির মূলে রয়েছেন ঈশ্বর। তিনি অবস্থানও করছেন সব জীবের মধ্যে।
প্রশ্ন: কী করলে ঈশ্বরকে ভালোবাসা হয়?
উত্তর: সব সৃষ্টির মূলে রয়েছেন ঈশ্বর। তিনি অবস্থানও করছেন সব জীবের মধ্যে। তাই তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসলেই ঈশ্বরকে ভালোবাসা হয়।

# প্রশ্ন: শূন্যস্থানপূরণ কর।
ক. ঈশ্বর এক এবং —।
খ. ঈশ্বর অনাদি, —।
গ. ঈশ্বর ও জীবের মধ্যে সম্পর্ক —।
ঘ. সব সৃষ্টির মূলে রয়েছেন —।
ঙ. ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং — করছেন।
চ. তাঁর — ভালোবাসলে ঈশ্বরকেই ভালোবাসা হবে।
ছ. সব সৃষ্টির মূলে রয়েছেন —।
জ. মানুষের রয়েছে বিবেক —।
উত্তর:
ক. অদ্বিতীয় খ. অনন্ত গ. খুবই নিবিড় ঘ. ঈশ্বর
ঙ. প্রতিপালন চ. সৃষ্টিকে ছ. ঈশ্বর জ. বুদ্ধি।
# প্রশ্ন: ডান পাশ থেকে শব্দ এনে বাম পাশের শব্দের সঙ্গে মিলাও।
বাম
ক) আমাদের মাথার ওপর আছে
খ) মানুষ সৃষ্টির
গ) সৃষ্টিকর্তাকে আমরা
ঘ) ঈশ্বর
ঙ) ঈশ্বর অনাদি
চ) ঈশ্বরকে আরাধনা করতে হলে তাঁর সৃষ্টিকে

ডান
সেরা জীব
ঈশ্বর বলি
ভালোবাসতে হবে
অনন্ত
সর্বশক্তিমান
সুনীল আকাশ
অনেক পাখি
উত্তর:
ক. আমাদের মাথার ওপর আছে সুনীল আকাশ।
খ. মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।
গ. সৃষ্টিকর্তাকে আমরা ঈশ্বর বলি।
ঘ. ঈশ্বর সর্বশক্তিমান।
ঙ. ঈশ্বর অনাদি, অনন্ত।
চ. ঈশ্বরকে আরাধনা করতে হলে তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসতে হবে।

# প্রশ্ন: শুদ্ধ উত্তরটিতে টিক () চিহ্ন দাও।
ক. সৃষ্টির সেরা জীব—।
১. গাছপালা ২. পশুপাখি ৩. মানুষ ৪. চন্দ্র-সূর্য
খ. ঈশ্বরের লীলার একটা উদ্দেশ্য—।
১. ঐশ্বর্য প্রকাশ করা ২. আনন্দ উপভোগ করা ৩. দুঃখ ভোগ করা ৪. ক্ষমতা প্রকাশ করা
গ. ঈশ্বর ও জীবের মধ্যে সম্পর্ক কী রকম?
১. খুবই মধুর ২. চমৎকার
৩. নিবিড় ৪. শত্রুতামূলক
ঘ. সৃজন, পালন ও সংহারকর্তা কে?
১. দেব-দেবী ২. ঈশ্বর ৩. রাজা ৪. মা-বাবা
ঙ. মানুষের বিচরণ কোথায়?
১. বন-জঙ্গলে ২. আকাশে
৩. শহরে-গ্রামে ৪. সর্বত্র।
সঠিক উত্তর:
ক. ৩, খ. ২, গ. ৩, ঘ. ২, ঙ. ৪।
# রচনামূলক প্রশ্ন :
প্রশ্ন: ‘ঈশ্বর সকল জীবের মধ্যে আছেন।’ কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: ঈশ্বর সর্বভূতে অর্থাৎ সকল প্রাণের বীজ বা উৎসস্বরূপ। তাঁর থেকেই জগতের সৃষ্টি, তাঁর মধ্যেই জগতের অবস্থান। আবার তাঁর মধ্যেই জীব ও জগৎ মিশে যায়। ঈশ্বরের অস্তিত্ব ছাড়া জগতে আর কিছুরই অস্তিত্ব নেই। তাই এ কথা সহজেই বোঝা যায় যে ঈশ্বর সকল জীবের মধ্যেই আত্মারূপে ও চেতনারূপে অবস্থান করেন।
প্রশ্ন: ‘জীবসেবার মধ্যদিয়ে ঈশ্বরের সেবা করা হয়’—কীভাবে? সংক্ষেপে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: ঈশ্বরের অস্তিত্ব ছাড়া আর কিছুরই অস্তিত্ব নেই। তিনি সর্বভূতে অর্থাৎ সর্ব জীবের মধ্যে আত্মারূপে ও চেতনারূপে বিরাজ করেন। তিনি সকল প্রাণের বীজ বা উৎসস্বরূপ। উপনিষদের মতে, ‘সবং খল্বিদং ব্রহ্ম’—সবকিছুই ব্রহ্ম বা ঈশ্বর। তাই ঈশ্বরের সৃষ্ট জীবকুলকে সেবা করলে ঈশ্বরেরই সেবা করা হয়। স্বামী বিবেকানন্দ যথার্থই বলেছেন, জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।
প্রশ্ন: ‘রাজা রন্তিদেবের জীবসেবা’ গল্পটি নিজের ভাষায় লেখ।
উত্তর: পুরাকালে রন্তিদেব নামে এক ধার্মিক রাজা ছিলেন। একবার তিনি অযাচক ব্রত শুরু করলেন। এ ব্রতের নিয়ম হলো, কারও কাছে ভিক্ষা চাওয়া যাবে না, যদি কেউ ইচ্ছা করে কিছু দান করে তবে তা দিয়েই বাঁচতে হবে।
ব্রত পালনের সময় রাজা রন্তিদেবের ৪৮ দিন অনাহারে কাটল। কেউ কিছু খেতে দিল না। ৪৯ দিনের দিন তিনি কিছু অন্ন আর পায়েস পেলেন। তিনি খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এমন সময় এক কঙ্কালসার ব্যক্তি একটি রোগা কুকুরসহ তাঁর কাছে এসে উপস্থিত হলো এবং খাদ্য প্রার্থনা করল। রাজা রন্তিদেব নিজে অভুক্ত থেকে সমুদয় খাদ্যবস্তু সেই লোকটা এবং তার সঙ্গী কুকুরটাকে দান করলেন।
কিন্তু হঠাৎ তিনি দেখলেন সেই লোকটি এবং কুকুরটি নেই, তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং ভগবান, শ্রীকৃষ্ণ। রন্তিদেব বুঝতে পারলেন, জীবসেবার মধ্য দিয়ে স্বয়ং ভগবানকেই সেবা করা হয়।

# সংক্ষেপে উত্তর দাও।
প্রশ্ন: ‘সর্বভূতে ঈশ্বর’—এ কথাটির অর্থ কী?
উত্তর: সর্বভূতে ঈশ্বর—কথাটির অর্থ হলো ঈশ্বর সকল প্রাণের বীজ বা উৎসস্বরূপ। অর্থাৎ তিনি সকল জীবের মধ্যই বিরাজ করেন।
প্রশ্ন: ঈশ্বর কোন রূপে জীবের মধ্যে অবস্থান করেন?
উত্তর: ঈশ্বর আত্মারূপে ও চেতনারূপে সকল জীবের মধ্যে অবস্থান করেন।
প্রশ্ন: জীবকে সেবা করলে কার সেবা করা হয়?
উত্তর: জীবকে সেবা করলে স্বয়ং ঈশ্বরেরই সেবা করা হয়।
প্রশ্ন: অযাচক ব্রত কী?
উত্তর: অযাচক ব্রত হচ্ছে, কারও কাছে ভিক্ষা চাওয়া যাবে না। লোকে ইচ্ছা করে, দয়া করে যা দেবে তা দিয়েই জীবন বাঁচাতে হবে।
প্রশ্ন: শূন্যস্থান পূরণ কর।
ক. আমরা জানি — সর্বশক্তিমান।
খ. — খল্বিদং ব্রহ্ম।
গ. সকল জীবের মধ্যে ঈশ্বর —।
ঘ. সীমার মাঝে — তুমি।
ঙ. ব্রত পালনের সময় রাজা রন্তিদেবের — দিন অনাহারে কাটল।
চ. সবাইকে ভালোবাসলে — ভালোবাসা হয়।
ছ. জীবে — করে সেই জন।
উত্তর: ক. ঈশ্বর খ. সর্বং গ. আছেন ঘ. অসীম ঙ. ৪৮ চ. ঈশ্বরকে ছ. প্রম।
প্রশ্ন: ডান পাশ থেকে শব্দ এনে বাম পাশের সঙ্গে মিলাও।
বাম
ক) সব কিছুর স্রষ্টা
খ) ঈশ্বর সব প্রাণের
গ) জীবকে সেবা করলেও
ঘ) সবাইকে ভালোবাসলে
ঙ) বাড়িতে পোষা জীবজন্তুর
চ) লোকটার সঙ্গে ছিল
ডান
বীজ
ঈশ্বরকে ভালোবাসা হয়
পরিচর্যা করব
ঈশ্বর
ঈশ্বরের সেবা করা হয়
একটা কুকুর
রন্তিদেব
উত্তর:
ক. সব কিছুর স্রষ্টা ঈশ্বর
খ. ঈশ্বর সব প্রাণের বীজ
গ. জীবকে সেবা করলেও ঈশ্বরের সেবা করা হয়
ঘ. সবাইকে ভালোবাসলে ঈশ্বরকে ভালোবাসা হয়
ঙ. বাড়িতে পোষা জীবজন্তুর পরিচর্যা করব
চ. লোকটার সঙ্গে ছিল একটা কুকুর।

No comments:

Post a Comment