3.9.11

মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী

প্রশ্ন: মওলানা ভাসানী কত সালে গণআন্দোলন গড়ে তোলেন?
উত্তর: মওলানা ভাসানী বুঝতে পেরেছিলেন, পাকিস্তানের পশ্চিম অংশের শাসকেরা ধর্ম ও জাতীয় সংহতির নামে পূর্ব বাংলার মানুষকে শোষণ করছে। তাই তাদের সঙ্গে একই রাষ্ট্রের বাঁধনে অবস্থান করা আর সম্ভব নয়। সে কারণে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মওলানা ভাসানী পাকিস্তানি স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল গণআন্দোলন গড়ে তোলেন।
প্রশ্ন: মওলানা ভাসানী পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের জন্য স্বাধীন পৃথক দেশ করার কথা কখন এবং কেন বলেন?
উত্তর: ১৯৭০ সালের নভেম্বরে পল্টন ময়দানে ভাষণদানকালে মওলানা ভাসানী পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের জন্য স্বাধীন পৃথক দেশ করার কথা বলেন। ১৯৫৫, ১৯৫৬, ১৯৫৭ সালেও তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর যে অত্যাচার, নিপীড়ন চালাচ্ছে, যে বৈষম্য নীতি অনুসরণ করছে, তা চলতে থাকলে পূর্ব পাকিস্তান একদিন স্বাধীন দেশ হয়ে যাবে। আসলে মওলানা ভাসানী বুঝতে পেরেছিলেন, পাকিস্তানের পশ্চিম অংশের শাসকেরা ধর্ম ও জাতীয় সংহতির নামে পূর্ব বাংলার মানুষকে শোষণ করছে। তাদের সঙ্গে একই রাষ্ট্রের বাঁধনে অবস্থান করা আর সম্ভব নয়। তাই তিনি পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের জন্য স্বাধীন পৃথক দেশ করার কথা বলেন।
প্রশ্ন: মওলানা ভাসানী কেন লংমার্চ পরিচালনা করেন?
উত্তর: মওলানা ভাসানী ছিলেন একজন সত্যিকার দেশপ্রেমিক, জনদরদি নেতা। দেশের স্বার্থে সংগ্রাম করা এবং জনগণের সেবা করাই ছিল তাঁর ব্রত। কোনো পদমর্যাদা ও মোহ তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারেনি কোনো দিন। জনগণের পাশে থেকে তিনি সবসময় বিভিন্ন জনমুখী কর্মসূচি পালন করেছেন। এসব কর্মসূচির মধ্যে লংমার্চ অন্যতম। গঙ্গা নদীর ওপর ভারত কর্তৃক ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে মওলানা ভাসানী ১৯৭৬ সালের ১৬ মে বিপুল জনতাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা থেকে রাজশাহী পর্যন্ত ঐতিহাসিক লংমার্চ পরিচালনা করেন।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মওলানা ভাসানী কোথায় কোন পদে ছিলেন?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে দেশব্যাপী পাকিস্তানি সৈন্যদের হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। মওলানা ভাসানীর টাঙ্গাইলের ঘরবাড়ি পাকিস্তানি সেনারা পুড়িয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি ভারতে চলে যান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মওলানা ভাসানী প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।
প্রশ্ন: মওলানা ভাসানী শিক্ষা বিস্তারের জন্য কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন?
উত্তর: মওলানা ভাসানী ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী। তিনি নিজে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া খুব বেশি করতে পারেননি। কিন্তু এ দেশের মানুষের জন্য শিক্ষা, জ্ঞানবিস্তার প্রসারে তাঁর অনেক অবদান রয়েছে। শিক্ষা বিস্তারের জন্য মওলানা ভাসানী যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন সেগুলো হলো- সন্তোষের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মহীপুরের হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ, ঢাকার আবুজর গিফারি কলেজ ও টাঙ্গাইলের মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ।
প্রশ্ন: মওলানা ভাসানীর জীবন থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই?
উত্তর: মওলানা ভাসানীর জীবন থেকে আমরা অনেক শিক্ষণীয় বিষয় পাই। একজন নিরহংকার আদর্শ মানুষ মওলানা ভাসানীর জীবনাচরণ ছিল অত্যন্ত সাদামাটা ও সহজ-সরল। বৈচিত্র্যপূর্ণ রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী হয়েও মওলানা ভাসানী টাঙ্গাইলের সন্তোষে একটি সাধারণ বাড়িতে বাস করতেন। খেতেন সাধারণ মানুষের খাবার। অনাড়ম্বর জীবনযাপনকারী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মওলানা ভাসানীর জীবন থেকে আমরা শিক্ষা পাই প্রগাঢ় স্বদেশপ্রেম, প্রগতিশীল আদর্শ ও প্রতিবাদী চেতনার। তাঁর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার মাধ্যমেই সার্থক হবে তাঁর কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা।

No comments:

Post a Comment